শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরেও নিয়মের বেড়াজালে আটকে সরকারি পাঠ্য পুস্তক না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে আদ্রায় রেলের দু’টি স্কুলের পড়ুয়ারা।
সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থে সরকারি স্কুলগুলিতে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বই দেওয়া হয়। কিন্তু আদ্রার দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে বয়েজ ও গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা সেই পাঠ্যপুস্তক এখনও পায়নি। জানুযারি মাস থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। দেড়মাস পেরিয়ে গেলেও বই না পাওয়ায় সমস্যায় দু’টি স্কুলের প্রায় ১২০০ ছাত্রছাত্রী। দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দাবি, সর্বশিক্ষা মিশন দফতর থেকে জেলা প্রশাসন সকলকেই সমস্যার কথা জানিয়েও বই পাওয়া যায়নি।
জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত ও রাজ্য সরকারের সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলিকে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের বই সরবরাহ করা হয়। বইয়ের খরচ বহন করে সর্বশিক্ষা মিশন। বই পাওয়ার জন্য স্কুলগুলির তরফে যাবতীয় তথ্য (ডাইস ফর্ম) শিক্ষা দফতরে পাঠাতে হয়। রেলের ওই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা নির্দিষ্ট সময়েই ওই ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। তারপরেও তাঁরা পাঠ্যবই পাননি।
তাহলে বই কেন মিলছে না? সর্বশিক্ষা মিশনের পুরুলিয়ার প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক জানান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত ও সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে বই দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যে স্কুল পর্ষদের অনুমোদিত কিন্তু রাজ্যর সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত নয়, তাদের মেদিনীপুরে পর্ষদের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বই সংগ্রহ করতে হয়। তিনি বলেন, “আদ্রার রেলের স্কুল দু’টি যেহেতু রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত নয়, সেই কারণে তাদের জেলা থেকে অন্য স্কুলগুলির মতো বই দেওয়া হয় না। তাদের মেদিনীপুর থেকে বই নিয়ে আসাটাই নিয়ম।”
কিন্তু ঘটনা হল গত বছরেও ওই দু’টি স্কুল এই বই জেলা থেকেই পেয়েছিল বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। তাছাড়া রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত না হওয়া সত্ত্বেও আদ্রার রেলের প্রাথমিক স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই সরকারি বই জেলা থেকেই পেয়েছে। তাহলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা কেন সরকারি বই থেকে এ বার বঞ্চিত হল, তার সদুত্তর পাচ্ছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি বইয়ের এ বার জোগান কম। তাই বই বিলির ক্ষেত্রে এ বার নিয়মের কড়াকড়ি করা হচ্ছে।
রেলওয়ে গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে তিওয়ারি বলেন, “আমাদের স্কুলেরই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সরকারি বই সর্বশিক্ষা মিশন থেকে দেওয়া হয়েছে। অথচ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই নিয়মের বেড়াজালে আটকে দেওয়া হচ্ছে কেন?”রেলওয়ে.বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চম শ্রেণির বই গিলেও বাকি তিনটি শ্রেণির বই কেন দেওয়া হচ্ছে না, তা স্পষ্ট নয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমরা জানিয়েছি।” এ দিকে জানুয়ারি মাস থেকে পঠনপাঠন শুরু হলেও বই না পেয়ে বিপাকে ছাত্রছাত্রীরা। অভিভাবকদের মধ্যে সুনীল গুপ্ত, মীনা তিওয়ারি, বাবুল পালরা জানান, স্কুল থেকে বই পাওয়া যাচ্ছে না। এই বই দোকানেও কিনতে পাওয়া যায় না। তাঁরা বলেন, “বইয়ের ফটোকপি করে ছেলেমেয়েদের পড়ানো হচ্ছে।” শিক্ষকদের সংগঠন এসটিইএ-র রঘুনাথপুর মহকুমার সম্পাদক শম্ভু মান্না বলেন, “নিয়মের বেড়াজালে বই না পেয়ে দু’টি স্কুলের হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে সমস্যা দ্রুত মেটাতে প্রশাসনের কাছে আমরা আর্জি জানিয়েছি।”
সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক জানান, সমস্যা মেটাতে ওই দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদন সংক্রান্ত নথি অথবা রেল কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত প্রামাণ্য নথি চাওয়া হয়েছে। ওই নথি জমা পড়লে বই দিতে সমস্যা হবে না। অন্য দিকে, স্কুলগুলির শিক্ষকদের ক্ষোভ, এই স্কুলে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র হয়,শিক্ষকদের স্কুলে নিয়োগ করা হয় স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে। তারপরেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদনের নথি কোন যুক্তিতে চাওয়া হচ্ছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে আর্থিক সাহায্য সংক্রান্ত নথি জোগাড় করে সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে জমা দিয়ে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। |