ঘূর্ণাবর্তের জেরে শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা। জমা জল ঢুকে পড়ছে বাড়িতেও। নোংরা জল ঠেলেই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা। আর এই পরিস্থিতির জন্য নিকাশি-নালাগুলির সংস্কার না হওয়ার দিকেই আঙুল তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার বলেন, “ভাল নিকাশি নালা করার জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই তা নির্মাণের কাজ শুরু হবে।” |
নিকাশি সমস্যা এই পুর এলাকার দীর্ঘদিনের। ১৬টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু জায়গায় নিকাশি-নালা বন্ধ করে গজিয়ে উঠেছে বাড়িঘর, দোকান। নিকাশি-নালাগুলি দিয়ে নোংরা জল গঙ্গা লাগোয়া খালে গিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু ওই সব নির্মাণের জন্য নোংরা জল বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা পায় না বলে জানান বাসিন্দারা। তা উপচে চলে আসে রাস্তায়। তাই ফি-বছর বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতেই বেশ কিছু ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়। শনিবার থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত কখনও বেগে, কখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। জল জমে গিয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জলট্যাঙ্ক পাড়া, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুনগোলা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হাজিপুর এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নাইয়াপাড়ায়। বেশ কিছু রাস্তায় হাঁটুসমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে মহিলা ও শিশুদের।
স্থানীয় বহু বাসিন্দারই অভিযোগ, প্রতিটি নির্বাচনের সময়েই নিকাশি নালা সংস্কার ও নির্মাণ নিয়ে সব দলই প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হল না। বৃষ্টি থেমে রোদ না ওঠা পর্যন্ত নোংরা জল ঠেলেই যাতায়াত করাটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগর গ্রামের বাসিন্দা অমল জানা বলেন, “নিকাশি নালা দখল করে ঘরবাড়ি, দোকান তৈরি হচ্ছে। ফলে, নিকাশিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছি আমরাই।” ওই ওয়ার্ডেরই শক্তি মণ্ডল বলেন, “পুরসভার কর্তারা যাতায়াতের পথে তো সবই দেখছেন। কিন্তু এত দিনেও কোনও ব্যবস্থা নিলেন না।”
বামেদের হারিয়ে বছর দশেক আগে এই পুরসভার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু এত দিনেও কেন তারা সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারল না? পুরপ্রধান বলেন, “আমদের দল যে সময়ে ক্ষমতায় আসে, তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। তাদের কাছে আবেদন জানানো সত্ত্বেও আর্থিক সহায়তা মেলেনি। তাই নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।” নিকাশি নালার উপরে নির্মাণ নিয়ে তাঁর দাবি, “আমাদের আমলে নালার উপরে বেআইনি নির্মাণ হয়নি। যা হয়েছে বাম আমলে। সে সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তোড়জোড় চলছে।” সিপিএম নেতা সুপ্রকাশ গুপ্ত পুরপ্রধানের দাবি মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমাদের আমলে নিকাশি সমস্যার সমাধান যতটা পেরেছি করেছি। ওরাই ক্ষমতায় আসার পরে কিছু করেনি। তাই সমস্যা হচ্ছে। আমাদের সময়ে নিকাশি নালার উপরে বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” |