নারী পাচার রুখতে আলোচনা বনগাঁয়
কেউ ভাল কাজ পাইয়ে দেবে বললে খোঁজ নিন
ত কয়েক মাসে বনগাঁ-মহকুমা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে একের পর এক নারী পাচার ও নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। এ সব রুখতে পুলিশ প্রশাসন নানা ব্যবস্থা নিলেও নারী নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে লোকজনকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের গ্রামে গ্রামে প্রচারের পরামর্শ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বর্তমান ও প্রাক্তন বিচারপতিরা।
বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বনগাঁ আদালত চত্বরে শনিবার নারী ও শিশু পাচার নিয়ে একটি সচেতনতা শিবিরে যোগ দিতে এসে বিচারপতিরা ওই পরামর্শ দেন। তাঁরা জানান, পারিবারিক অর্থাভাব এবং প্রলোভনের কারণে নারী পাচার হচ্ছে। আইন দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য মা-বাবাদের সচেতন হতে হবে। মহিলারা গ্রামে গিয়ে যেন প্রচার করেন। যা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন শ্রোতারা।
দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলাম। মহিলারা যাতে নির্যাতিতা না হন বা পণ না দেন, সে জন্য প্রচার করব।
মনিকা দাস
শুধু মহিলারা নন, সমাজের সকলকে সচেতন হতে হবে। এ বার থেকে আমরা অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করব।
সোমা সেন

আলোচনা শুনে অনেক কিছু জানলাম। ঘরে ঘরে গিয়ে
এ দিনের সে সব শিক্ষার কথা জানাব।
বিউটি রায়
কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বনগাঁর মতো সীমান্ত এলাকা থেকে নারী পাচারের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তা বন্ধ করার জন্য বিচারপতিরা আইনজীবীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও উদ্যোগী হতে আহ্বান জানান। পরিচিত কেউ বাবা-মাকে অর্থ দিয়ে মেয়েকে ভাল কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও সে ব্যাপারে ভাল করে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন বিচারপতিরা। তাঁরা মহিলাদের গার্হস্থ্য আইন সম্পর্কেও সচেতন করেন।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, “সমস্যা কী আপনারা সকলেই জানেন। মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা দরকার। আইন সম্পর্কে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই পরিবর্তন আনা সম্ভব।” উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশ্যে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রদীপ্ত রায় বলেন, “আপনারা যেন কন্যাসন্তানকে নিজেদের দায় বলে মনে করবেন না। যে করেই হোক, তাঁকে ঘাড় থেকে নামাতে হবে এই মনোভাব ত্যাগ করতে না পারলে নারী পাচার বা নির্যাতন ঠেকানো যাবে না। এ জন্য গ্রামে গ্রামে মহিলারা প্রচার করুন।”
গ্রামবাংলায় মেয়ের বিয়ের জন্য পণপ্রথা এখনও নির্মূল হয়নি। আর সে জন্য বধূর আত্মহত্যা বা খুনের ঘটনাও প্রায়ই সামনে আসছে। এ দিন ওই শিবিরে বিচারপতি প্রদীপ্ত রায় বলেন, “মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময়ে যদি দেখেন ছেলের পরিবার নানা দাবি করছে, তা হলে সেখানে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। পণ দেওয়া বা নেওয়া আইনের দিক দিয়ে অপরাধ।”
শুনতে শুনতে শ্রোতাদের মধ্যে থাকা এক মহিলার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, শ্বশুরবাড়ির দাবি মতো মেয়ের বিয়েতে পণ দিয়েছিলেন। কিন্তু আরও বেশি টাকার দাবিতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চাপ দিতে থাকে। তা দিতে না পারায়, মেয়ের উপরে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়ে আত্মঘাতী হয়। পণের জন্য মেয়ের এই পরিণতি হতে পারে, তখন তিনি তা বুঝতে পারেননি।
ওই শিবিরে বিচারপতিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী, পুলিশকর্তা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা বনগাঁ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সমীর দাস বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্র সক্রিয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, নির্যাতিতার পরিবার জানেন না কী ভাবে তাঁরা আইনি পরিষেবা পেতে পারেন। মহিলাদের মধ্যে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সে জন্যই এই ব্যবস্থা।”
শিবিরে এসে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন বলেই জানিয়েছেন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের মধ্যে মনিকা দাস বলেন, “আলোচনা শুনে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন হতে পারলাম। মহিলারা যাতে নির্যাতিত না হন বা বিয়েতে পণ না দেন, তার জন্য গ্রামে প্রচার করব।” সোমা সেন নামে আর এক মহিলা বলেন, “শুধু মহিলারা নন, সমাজের সকলকে সচেতন হতে হবে। এ বার থেকে আমরা অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করব।” বিউটি রায় নামে এক মহিলার কথায়, “ঘরে ঘরে গিয়ে এ দিনের কথা জানাব।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.