|
|
|
|
|
শিয়রে লোকসভা, জনসংযোগে জোর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে প্রস্তুতি হিসাবে নেতাকর্মীদের নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলার কর্মসূচি নিল সিপিএম।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার মেদিনীপুরে দলের বর্ধিত সভা হয়। যেখানে জেলা নেতাদের পাশাপাশি জোনাল এবং লোকাল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় সূত্রে খবর, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উপস্থিতিতে সভায় দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেছেন, “আমাদের প্রতিটি পরিবারে যেতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিবিড় প্রচার করতে হবে। আমরা জানি, আক্রমণ কমবে না। চক্রান্ত কমবে না। বরং আগামী দিনে আক্রমণ আরও বাড়বে। তবে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব।” তাঁর কথায়, “২০০৯ সালে জেলার তিনটি লোকসভা আসনেই আমরা জিতেছিলাম। তখনও মাওবাদী আক্রমণে জেলা রক্তাক্ত ছিল। তা-ও আমরা পেরেছি।” নিবিড় জনসংযোগের ক্ষেত্রে যে নেতৃত্বেরও ভূমিকা রয়েছে, তাও মনে করিয়ে দেন জেলা সম্পাদক। তাঁর মত, “আমাদের প্রতিটি সমর্থক-সদস্যদের সঙ্গে নেতৃত্বকেও দেখা করতে হবে।”
লালগড়ের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে এক সময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সিপিএমের। তবে এখন তা অতীত। গত পঞ্চায়েত-পুরসভা নির্বাচনেও দল পযুর্দস্ত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করছে সিপিএম। ‘নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও প্রতিকূলতার’ মধ্যেও মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ দিতে মরিয়া দলের জেলা নেতৃত্ব। চলতি মাসের শুরুতে মেদিনীপুরে জনসভা করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার দু’সপ্তাহের মাথায় বিমান বসুকে এনে লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন দীপকবাবুরা। ঠিক কী ভাবে দলের কাজকর্ম এগোবে, এ ক্ষেত্রে দলের রণকৌশলই বা কী, বর্ধিত সভায় তা স্পষ্ট করেছেন জেলা সম্পাদক।
দলীয় সূত্রে খবর, এ বার লোকসভা, বিধানসভা থেকে একেবারে বুথস্তর পর্যন্ত কমিটি গড়ে সাংগঠনিক সভা এবং প্রচার করবে সিপিএম। শুরুতে ঠিক ছিল, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বুথস্তরে কমিটি গড়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে তা হয়নি। এই সময়সীমা ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১০ মার্চের মধ্যে বিধানসভা এবং লোকসভাস্তরে কমিটি গড়ার কাজ শেষ করতে হবে। সভা থেকে কিছু কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন দীপকবাবু। যেমন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হবে। ২ এপ্রিল ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও বলেন, “আমাদের দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়তে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু থাকতে পারে। যাঁরা আমাদের সমর্থক ছিলেন, তাঁদের ফের আমাদের দিকে ফেরাতে হবে।”
ইতিমধ্যে সংগঠন পুনর্গঠনেও উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম। সন্ত্রাস-অত্যাচারের মধ্যে থেকেও যে সমস্ত যুবক-মহিলা-পুরুষ মাথা উঁচু করে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সাহসের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন, অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁদের গণ-সংগঠনে এবং পার্টির কাজকর্মে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবে নানা ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেছেন, “আমাদের রাজ্য কোনও কিছুতে প্রথম হতে না-পারুক, নারী নির্যাতনে প্রথম হয়েছে!” তিনি বলেন, “কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মেলা আর উৎসব করছেন। প্রতিবাদ করতে একবার বললেন, ‘উৎসব করব না তো কি শ্রাদ্ধ করব’। তিনি আরও বলেন, “সামনে লোকসভা নির্বাচন। এটা ব্যক্তির লড়াই নয়। নীতির লড়াই।
কিন্তু, বুথস্তর পর্যন্ত কমিটি গড়ে সভা এবং প্রচার করলে পরিস্থিতির কী পরিবর্তন হবে? জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “অবশ্যই হবে। কারণ, মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করে নিচ্ছেন। তাঁরা বুঝছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।” সঙ্গে তিনি যোগ করছেন, “দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও চেতনা বাড়ানো জরুরি। কেননা, আগে দেখা গিয়েছে, সর্বত্র কর্মীদের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক চেতনা সমান ছিল না। ফলে, দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।”
এমন উদ্যোগ লোকসভা ভোটে কতটা ফলপ্রসূ হয়, দেখার সেটাই। |
|
|
|
|
|