বৃথাই কর্মসূচি, স্কুলছুট বেড়ে প্রায় ১২ হাজার
সাক্ষর ভারত গড়তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সব শিশুকে স্কুলে আনতে অভিভাবকদের সচেতনও করা হয়। তা সত্ত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১১ সালে জেলায় স্কুলছুটের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫১১। আর ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৪৭৬। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, কিছু সমস্যার জন্য একাংশ ছাত্রছাত্রী মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়ছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে পদক্ষেপও করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, সর্বত্র সমান সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তাই স্কুলছুটের সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। যদিও জেলা প্রশাসন স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানোর ব্যাপারে আশাবাদী। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিছু ছাত্রছাত্রীর খোঁজ মিলছে না। তারা এলাকার বাইরে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হচ্ছে।” জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “ইতিমধ্যে স্কুলছুটদের একটা বড় অংশকে স্কুলে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে সচেতনতা কর্মসূচির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি মার্চ মাসের মধ্যে বাকি স্কুলছুটদেরও স্কুলে ফেরানো সম্ভব হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুরে যে ১২ হাজার ৪৭৬ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট, তারমধ্যে ৩ হাজার ৪০৩ জন প্রাথমিক স্তরের। অর্থাৎ, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৯ হাজার ৭৩ জন । অর্থাৎ, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের একটা বিধি থাকে। সাধারণত, প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের বয়স হয় ৬-১০ বছর। অন্য দিকে, উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের বয়স হয় ১১-১৪ বছর। বেশি বয়সের ছাত্রছাত্রীদের সাধারণত স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয় না। তবে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অর্থাৎ, প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই বয়সের কিছু ছাড় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সীদেরও উচ্চ-প্রাথমিক স্তরে ভর্তি নেওয়া যায়।
গত বছর স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ঠিক কতজনকে স্কুলে ফেরানো সম্ভব হয়েছে? জানা গিয়েছে, সংখ্যাটা হল ৪ হাজার ৮৪০। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ার সংখ্যা ২ হাজার ৯৬। উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ার সংখ্যা ২ হাজার ৬৩১। সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা গিয়েছে, স্কুলছুটদের একাংশের আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের স্কুলছুট ২৮০ জন। উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের স্কুলছুট ৩ হাজার ৭০৭ জন। একাংশ ছাত্রছাত্রী নিজের এলাকায় নেই। পরিবারের সঙ্গে অন্যত্র চলে গিয়েছে। এই সংখ্যাটা সবমিলিয়ে ১ হাজার ২ জন। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়া রয়েছে ১১৩ জন। উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়া ৮৮৯ জন। মেদিনীপুর সদর দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণাভ প্রহরাজ বলেন, “বয়স বেশি হলে একাংশ ছাত্রছাত্রীও আর স্কুলে এসে পড়াশোনা করতে রাজি হয় না। ফলে, এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়। তবে, আমরা নানা ভাবে স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”
কেন একাংশ ছাত্রছাত্রী মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়? এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। শিক্ষকদের মতে, কিছু পরিবারে আর্থিক সঙ্কট থাকে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও কাজের খোঁজে বেরিয়ে যায়। ফলে, তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। একাংশ মেয়ের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর তারা আর স্কুলে আসে না। আবার একাংশ পরিবারে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। তারা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠায় না। মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “অভিভাবকদের সকলে সমান সচেতন হলে স্কুলছুটের সংখ্যা কমবে। এই সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা কর্মসূচিও করি।” মৌপালে যেমন ২৮ জন স্কুলছুট ছিল। এখনও কয়েকজন স্কুলছুট রয়েছে। ভাদুতলা বিবেকানন্দ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “বাল্যবিবাহের ঘটনা কমলে স্কুলছুটের সংখ্যাও কমবে। একাংশ মেয়ের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তখন তারা আর স্কুলে আসে না। তবে, কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। আমরা দেখছি, এক সময় যে সব মেয়েদের কোনও ভাবেই স্কুলে আনা সম্ভব হচ্ছিল না, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালুর পর তাদের কয়েকজন নিজে থেকেই ফের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য যোগাযোগ করছে।” ভাদুতলায় যেমন ২৬ জন স্কুলছুট ছিল। এখনও কয়েকজন স্কুলছুট রয়েছে। কেশবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধনকুমার দে বলেন, “কেউ কেউ কম বয়সে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তখন তারা আর স্কুলে আসতে চায় না।” তাঁর কথায়, “একাংশ ছাত্রছাত্রীর আবার লেখাপড়ায় অনীহা থাকে। ছেলেমেয়েদের বকাবকি করে কিছু হবে না। অভিভাবকেরা যদি ওঁদের বুঝিয়ে বলে, তাহলেই ওরা স্কুলে আসতে পারে।”
আগামী মার্চের মধ্যে সব স্কুলছুট স্কুলে ফেরে কি না, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.