হুগলিতে দু’টি প্রকল্পে বরাদ্দ
১৪০ কোটি, কাজে গতি কম
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘড়ি ধরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সহায়তায় হুগলিতে প্রস্তাবিত দু’টি প্রকল্পের কাজে গতি আসছে না। একটি ভদ্রেশ্বরে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প, অন্যটি রিষড়ায় নিকাশি ব্যবস্থা।
প্রকল্প দু’টি রূপায়িত হলে দুই পুরসভার প্রায় আড়াই লক্ষ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হবেন। কেন্দ্রের ‘জওহরলাল নেহরু জাতীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর সঙ্গে রাজ্য যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প দু’টি তৈরি করছে। এ জন্য অনুমোদিত হয়েছে মোট ১৪০ কোটি টাকা। এর ৩৫ শতাংশ টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। প্রকল্প দু’টি রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। কিন্তু এখনও কাজে গতি না আসায় এ নিয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনিই দু’টি প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ভদ্রেশ্বর পুর এলাকায় প্রায় এক লক্ষ ১৫ হাজার মানুষের বাস। এখানে পানীয় জলের উৎস মূলত গভীর নলকূপ। গোটা পঁচিশ নলকূপ ওই পুরসভায় থাকলেও সেগুলির কার্যকারিতা কমে আসছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। বছর দেড়েক ধরে শ্রীরামপুরের জলপ্রকল্প থেকে গঙ্গার শোধিত জল ভদ্রেশ্বরে সামান্য আসছে। এই অবস্থায় বছর পাঁচেক আগে ভদ্রেশ্বরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি জলপ্রকল্প অনুমোদিত হয় ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে। কিন্তু সেটায় কাজ না হওয়ায় ফের নতুন করে দিল্লিতে আবেদন করে রাজ্য সরকার। জেএনএনইউআরএম-এ গত বছর ৮৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার প্রকল্পটির ছাড়পত্র পায়।
কিন্তু তার পরেও কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা বলেন, “মূল ঢিলেমিটা হয়েছিল বাম আমলে। নয়া সরকার আসার পর পুরনোটি বাতিল করে নতুন প্রকল্পের অনুমোদন নিতে হয়েছে।”
কেএমডিএ-র ডিরেক্টর জেনারেল রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়ায় আগের প্রকল্পটি বাতিল করে দিতে হয়। ইতিমধ্যে স্থানীয় পুরসভা উদ্যোগী হয়ে প্রয়োজনীয় জমি পায়। এর পরেই মেলে পরিমার্জ়িত প্রকল্পের অনুমোদন।” কাজে গতি না আসার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “গত ডিসেম্বর মাসে দিল্লির বৈঠকে এই প্রকল্পের টাকা মঞ্জুর করা নিয়ে কথা হয়। ওরা কিছু বাড়তি তথ্য চাওয়ায় আমরা পাঠিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ টাকা চলে আসবে। এর পরেই কাজ শুরু হবে।”
ভদ্রেশ্বরে পানীয় জল, রিষড়ায় নিকাশি
প্রকল্প দু’টি রূপায়িত হলে দুই পুরসভার প্রায় আড়াই লক্ষ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হবেন। কেন্দ্রের ‘জওহরলাল নেহরু জাতীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর সঙ্গে রাজ্য যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প দু’টি তৈরি করছে। ৩৫ শতাংশ টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র।
ভদ্রেশ্বর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপ্রকল্পের জন্য পাঁচটি জলাধার তৈরি করা হবে। প্রতিটির জলধারণ ক্ষমতা হবে প্রায় ১০ লক্ষ গ্যালন। তিনটি জলাধার ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে হবে ‘ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’। এতে রোজ ৮০ লক্ষ গ্যালন গঙ্গার জল শোধন করার সুযোগ থাকবে। এই কাজ হতে বছর দেড় সময় লাগবে। এর পর প্রায় সাড়ে আট বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পুরসভার বিভিন্ন অংশে বসবে জল সরবরাহের পাইপ। এ জন্য ফের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।
পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের দীপক চক্রবর্তী বলেন, “কাজ শুরুর আগে কেএমডিএ-র প্রথাগত কিছু ব্যাপারে আছে। তাই এই দেরি। তা ছাড়া, জলাধারের জায়গার ব্যাপারে সামান্য কিছু আইনি ঝামেলা ছিল। সে সব মিটে গিয়েছে।”
রিষড়া পুর এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। রেললাইনের পূর্ব দিকে রয়েছে ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই অঞ্চলের এন এস রোড, এন কে ব্যানার্জি রোড, রবীন্দ্রসরণি, বাঙ্গুর পার্ক, পি টি লাহা স্ট্রিট ফি-বছর বর্ষার অনেকটা সময় জলমগ্ন থাকে। একই অবস্থা হয় রেললাইনের পশ্চিমে ১৬ নম্বর থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ অঞ্চলের। দু’টি দিকেই নিকাশি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা যে মন্থর গতিতে চলছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুরকর্তারা।
পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান শঙ্করপ্রসাদ সাউ বলেন, “রেললাইনের পূর্বাংশে নিকাশির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। গোটা প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বছর দুই লাগবে। যে কোনও প্রকল্পে প্রথম দিকে কাজের গতি মন্থর থাকে। আশা করছি, শীঘ্রই কাজে গতি আসবে।”
রিষড়ার এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা। রাজ্য তার ভাগের টাকার সংস্থান করবে নিজস্ব তহবিল এবং ঋণ থেকে। কেএমডিএ-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বলেন, “নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বার থেকে সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।” কোথা থেকে পুরসভা এই টাকা পাবে? শঙ্করবাবু বলেন, “প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা আমাদের বরাদ্দ করতে হবে। এটা পুরসভা উন্নয়ন তহবিল থেকে আমরা সহজ শর্তে ঋণ নেব।”
প্রকল্প দু’টির কাজ কবে শেষ হবে, এখন সেই আশাতেই দিন গুনছেন দুই পুর এলাকার বাসিন্দারা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.