সম্পাদকীয় ২...
অর্থনীতির মুক্তি
০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন যত ছিল, ২০১৩’র ডিসেম্বরে উৎপাদন হইয়াছে তাহা অপেক্ষা ০.৬ শতাংশ কম। অর্থাৎ, শিল্প উৎপাদনের বৃদ্ধির গতি কমিয়াছে বলিলে ভুল হইবে, বৃদ্ধিই হয় নাই, ভারতীয় শিল্প পিছন দিকে হাঁটিয়াছে। সারা বছর শিল্পবাণিজ্যের বাজার এক রকম থাকে না। কৃষির তুলনায় শিল্পের বাজারেও ‘ঋতুচক্র’ থাকে, যেমন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সচরাচর ভোগ্যপণ্যের বাজারে তেজি মরসুম, আবার নভেম্বর হইতে অর্থনীতির পক্ষে সামগ্রিক ভাবে জোয়ারের কাল। সেই কারণেই বছরের কোনও একটি মাসের শিল্পজাত উৎপাদনের সহিত আগের বছরের একই মাসের উৎপাদনের তুলনা করিয়া বুঝিবার চেষ্টা করা হয়, শিল্পের গতি কোন দিকে, কতখানি। অবশ্যই, ঋতু-ভিত্তিক উত্থানপতন ছাড়াও অন্য নানা কারণে কোনও এক মাসের উৎপাদন অস্বাভাবিক বেশি বা কম হইতে পারে। সুতরাং এক মাসের অধোগতি দেখিয়া শিল্পের দুর্দশায় হা-হুতাশ করা যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু মনমোহন সিংহের বর্তমান ভারতে এই সান্ত্বনায় আশ্বস্ত হইবার কোনও উপায় নাই। কারণ অধোগতি কোনও একটি মাসের আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়, অধোগতিই নিয়ম। গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকের প্রত্যেকটি মাসে শিল্প উৎপাদনের সূচক ২০১২’র তুলনায় কম। অনেক সময় আগের বছর অস্বাভাবিক অগ্রগতি ঘটিয়া থাকিলে পরের বছর গতিভঙ্গ হইয়া থাকে, ঠিক যেমন আগের পরীক্ষায় যে পড়ুয়ার নম্বর অনেকখানি বাড়িয়াছে, ভাল পড়াশোনা করিলেও পরের পরীক্ষায় তাহার নম্বর বাড়াইবার আপেক্ষিক গতি প্রায় অনিবার্য ভাবেই কমিয়া আসে যে একশোর মধ্যে পঁচিশ পাইয়াছিল তাহার পক্ষে দ্বিগুণ নম্বর পাওয়া যত সহজ, পরের বার আবার দ্বিগুণ নম্বর পাওয়া নিশ্চয়ই তত সহজ হইবে না! কিন্তু মনমোহন সিংহের সেই অজুহাতও নাই। ২০১১’র ডিসেম্বরের তুলনায় ২০১২’র ডিসেম্বরেও শিল্প উৎপাদন ওই ০.৬ শতাংশই কমিয়াছিল। অর্থাৎ, পরীক্ষার নম্বর কেবল এ বারই কমে নাই, বছরের পর বছর কমিতেছে।
অদূর ভবিষ্যতে ভাটার টান কাটিয়া জোয়ার আসিবার ভরসাও নাই। একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যতীত কার্যত আর প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই উৎপাদনের অগ্রগতি ভদ্রস্থ নয়। বিনিয়োগের আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। কয়েক মাস আগে অবধি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মেঘ কাটিবার ব্যাপারে নানা রকম আশার ফানুস উড়াইয়াছেন, ‘নীতিপঙ্গুত্ব’ দূর করিয়া সংস্কারের শুভ কর্মপথে নির্ভয় গান ধরিবার দুর্মর ভরসায় তা দিয়াছেন। অধুনা তাঁহারাও পুত্তলিকাপ্রতিম, সম্ভবত অর্থনীতির হাল লইয়া ভাবনা ছাড়িয়া দিয়াছেন। ভালই করিয়াছেন, মনমোহন সিংহ এবং সহশিল্পিবৃন্দের এখন কী বা দিন কী বা রাত্র। লোকসভা নির্বাচনের পরে কে বা কাহারা সরকার গড়িবে, সেই সরকারের নীতি কী হইবে, গতিই বা কীরূপ, আপাতত সেই সকল প্রশ্ন হাতে লইয়া ভারতীয় অর্থনীতির উৎকণ্ঠ প্রতীক্ষাপর্ব। এই পরিস্থিতি একটি সত্যকে নূতন করিয়া উন্মোচিত করিতেছে। আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হইবার পরে প্রায় সিকি শতাব্দী কাটিয়া গিয়াছে, কিন্তু অর্থনীতির রাষ্ট্র-নির্ভরতা এখনও বিপুল। একটি যথার্থ পরিণত অর্থনীতিতে এমন হইবার কথা নয়। ভারতীয় রাজনীতিতে অস্থিরতা অদূর ভবিষ্যতে দূর হইবার নয়। কী ভাবে রাজবৃত্তের অস্থিরতা হইতে অর্থনীতিকে মুক্তি দেওয়া যায়, তাহার বিচারই হইবে নূতন সরকারের নিয়ামকদের একটি বড় কাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.