সাত-সকালে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে রোল উঠেছিল ‘লন্ডন-লন্ডন’। বেলা বাড়তে দেখা গেল, সোয়েটার-জ্যাকেটের সঙ্গে ছাতা-রেনকোটও কলকাতার জার্সি হয়ে উঠেছে। বিলেতেও এখন কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারী বৃষ্টি জারি রয়েছে। কাজেই লন্ডনের সঙ্গে তুলনা টেনে আনাটা মোটেই অযৌক্তিক বলা যাচ্ছে না।
ক্যালেন্ডার বলছে, ফাল্গুন। মানে, বসন্ত। কিন্তু রবিবার সকালটা বৃষ্টিতে ধুয়ে ফিরিয়ে আনল শীতের কনকনানিকে। বিকেলের মধ্যেই ভিক্টোরিয়ার বাগানে ফুলের ঝোপে বৃষ্টিভেজা সতেজ সবুজের সমারোহ চোখে পড়ল। সদ্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা প্রেম-দিবস উদ্যাপন করা যুগলদেরও পোয়াবারো। নতুন সাজে সেজে ওঠা প্রিন্সেপ ঘাট বা ময়দানে অনেকেই ছাতার আড়াল খুঁজলেন।
অসময়ে ছাতা-রেনকোট খুঁজে বার করা মহা ঝকমারি। কলেজপড়ুয়া চার কন্যের দল ছুটির দুপুরটা গঙ্গার ঘাটে আইসক্রিম-বিলাসের জন্য বরাদ্দ রেখেছিল। কিন্তু সঙ্গে সাকুল্যে একটা ছাতা। ফেব্রুয়ারির মাঝপর্ব পেরিয়েছে, তাই অনেকেরই শীত-পোশাক এখন ট্রাঙ্কে তালাবন্ধ। তার উপরে ছুটির দিনের হঠাৎ বৃষ্টি বাদ সাধল ‘কুল সামার’ মেজাজের ফুরফুরে সাজগোজেও। বিকেলের মুখে প্রিন্সেপ ঘাটে চার তরুণীকে গুটিসুটি মেরে এক ছাতার তলায় দাঁড়িয়েই হি-হি কাঁপতে দেখা গেল। তবে এ টুকু অস্বাচ্ছন্দ্য অবশ্য উপভোগই করেছে কলকাতা। বিকেলে লেক ও ময়দানে হাঁটতে ভিড় করা স্বাস্থ্যসচেতন জনতা মেজাজে ভারী জুতো পায়ে রেনকোটের হুডে মাথা ঢেকে পথে নেমেছেন। |
শীত ও বর্ষার এই ‘ককটেলে’ মজে ঠাট্টার ফুলঝুরি ছুটছে। ফেসবুকে কেউ লিখেছেন, ফিউশনের যুগে শীত ও বর্ষার এমন যুগলবন্দিই তো স্বাভাবিক। কেউ আবার সোজাসাপ্টা, আবগারি আবহাওয়া উদ্যাপনের ডাক দিয়েছেন। শেষ বিকেলের ‘হ্যাপি আওয়ার’ থেকেই মালুম হল, এমনিতে রবিবারে কার্যত ফাঁকা অফিসপাড়ার পানশালাগুলোতেও এমন দিনে ভিড় কিছুটা বেশিই।
মোটের উপরে অবশ্য ছুটির দিনটায় বাড়িতে বসেই বৃষ্টি উপভোগে সায় দিয়েছে কলকাতাবাসী। সাধারণত বৃষ্টি-ধোয়া শহরে যানজটের যে ঝক্কি পোয়াতে হয়, ছুটির দিনে তার ছাপ পড়েনি। রাস্তায় গাড়ি চলেছে মোটামুটি মসৃণ ভাবেই। তবে বৃষ্টির জন্য ট্রেন খানিকটা দেরিতে চলে। রবিবার দুপুরে মেট্রো চলে আধ ঘণ্টা অন্তর। তবে বৃষ্টি-বাদ্লায় অনেকেই যাতায়াতের জন্য মেট্রোই বেছে নিয়েছেন।
ভিড়ের মাপকাঠিতে এই দিনটায় আলিপুর চিড়িয়াখানা বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানকে কিছুটা পিছনে ফেলে দিয়েছে চার দেওয়ালে ঘেরা যত বিনোদনের ঠেক। শপিংমল-কফিশপগুলোর হই-হই মেজাজ দুপুর থেকেই। তুলনায় ময়দান বা নন্দন-চত্বরও কিছুটা সুনসান। চারুকলা উৎসবেও তেমন লোক নেই। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ বলছিলেন, “বৃষ্টিতে রবিবারের চেনা ভিড়টা পেলাম না। ৫৬০০ জন মতো এসেছিলেন বলে জেনেছি। এ মরসুমে অন্য ছুটির দিনে এর প্রায় চার গুণ ভিড় হয়।”
তবে কিছু প্রেমিক-প্রেমিকাদের সঙ্গে ফুটবলপাগলদের এ দিনও লেক-ময়দানে দেখা মিলেছে। আপাদমস্তক কাদা মেখে বল পেটানোর দৃশ্যও অসময়ে বর্ষার স্মৃতি উসকে দিয়েছে। এ দিনই ভিক্টোরিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন মুম্বইবাসী প্রবীণ কামার আলি ও তাঁর স্ত্রী। হাজারিবাগের একটি স্কুলের ছাত্রীরাও কলকাতা-ভ্রমণে ব্যস্ত। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে বিনা ছাতায় লাইন দিয়ে ভিক্টোরিয়ার মিউজিয়ামে ঢোকার সময়ে তাদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না।
আচমকা বৃষ্টিতে যথারীতি ফের শীতসাজে ফিরেছে কলকাতা।
তাতেও উচ্ছ্বাসের ভাগটাই বেশি। এটাই আশা, চড়া রোদের অস্বস্তির দিনগুলো হয়তো কিছুটা পিছোবে। শীত যাব-যাব করেও বৃষ্টির হাত ধরে ফিরে এসে তাই নতুন অক্সিজেন দিয়ে গেল। |