অটোচালকদের জন্য এ বার মনের দাওয়াই
সিনেমার তারকা নন। নন রাজনৈতিক নেতাও। তবু মুম্বইয়ের জয়কুমার পেরুমলের কাহিনি মন কাড়ল কলকাতার শ’দুই অটোচালকের।
বক্তা বলে চলেছেন, জয়কুমারও আপনাদের মতোই এক জন অটোচালক। মুম্বইয়ের রাস্তায় অটো চালান। তিনিও এসেছিলেন খবরের শিরোনামে। তবে যাত্রীর সঙ্গে মারপিট করে বা কারও মুখ ফাটিয়ে দিয়ে নয়। জয়কুমারের মেয়ে প্রেমা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। সারা দেশের খবরের কাগজে গর্বিত পিতা হিসেবে জয়কুমারের ছবি বেরিয়েছিল।
এর পর রবিবারের খবরের কাগজে প্রথম পাতায় অটোচালকের মারপিটের ঘটনার খবর তুলে ধরে ইন্দ্রজ্যোতি সেনগুপ্ত নামের ওই বক্তা বললেন, “আপনারাই বেছে নিন কেমন হতে চান। অটো চালান, কোনও ছোট কাজ করেন না। অথচ আপনাদের নামে বদনাম হচ্ছে। কেন হবে? কেন গুণ্ডামি করবেন? ছেলেমেয়েদের মানুষ করুন জয়কুমারের মতো। পরিবার নিয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটান।”

প্রশিক্ষণ চলছে শোভাবাজারে। রবিবার। ছবি: শৌভিক দে।
ঘটনাস্থল অটোচালকদের নিয়ে এক কর্মশালা। রবিবার সকালে কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে শোভাবাজারে ওই কর্মশালায় অংশ নেন উল্টোডাঙা-আহিরীটোলা রুটের প্রায় দুশো অটোচালক, কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের পদস্থ কর্তা, ট্রাফিক ট্রেনিং স্কুলের সার্জেন্টরাও। তবে শুধু ট্রাফিক নিয়ম সংক্রান্ত পরামর্শই নয়, কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে কর্মশালায় অটোচালকদের মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করে গেলেন ইন্দ্রজ্যোতি সেনগুপ্ত নামের ওই মোটিভেশন-স্পিকার। সত্যিই কি কাজ হল তাঁর কথা শুনে? কর্মশালার শেষে এক অটোচালক নীলরতন দত্তকে এই প্রশ্ন করলে তাঁর জবাব, “খুব ভাল লাগল। মানসিক ভাবে চাঙ্গা হলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, আর কখনও যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করব না।”
এ দিনের কর্মশালায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে হালফিলের অটোর গুণ্ডামির প্রসঙ্গ। শনিবারই রানিকুঠিতে অমল মজুমদার নামে এক যাত্রীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সাগর কর্মকার নামে অটোচালক। এ দিন খবরের কাগজের অমল মজুমদার নামে ওই ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে ইন্দ্রজ্যোতিবাবু বলেন, “যাত্রীরা আপনাদের লক্ষ্মী। আপনাদের কাছে ভগবান। ওঁদের এ রকম অবস্থা কেন করবেন? ওঁদের ছাড়া আপনাদের অস্তিত্ব কোথায়?” এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, “আপনারাই বলুন, যাত্রীদের সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করা উচিত?” অটোচালকরা সমস্বরে বললেন, “যিনি এ রকম করেছেন, সারা জীবনের জন্য তাঁর লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া উচিত।” এক লহমায় যেন ফিরে এল কলকাতার স্পিরিট!
অটোচালকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে কর্মশালায়। অটোচালকদের নানা ভাবে উচ্চাকাঙ্খী করেছেন ইন্দ্রজ্যোতিবাবু। মুম্বইয়ে বিভিন্ন অফিসে যাঁরা টিফিন পৌঁছে দেন, সেই ডাব্বাওয়ালাদের কথাও এসেছে আলোচনায়। বছরের পর বছর ধরে সঠিক সময়ে মুম্বইয়ের অফিসে-অফিসে টিফিন পৌঁছে দেন তাঁরা। ইন্দ্রজ্যোতিবাবু বলেন, “অটোও তো কলকাতার লাইফলাইন। কত সংখ্যক মানুষ আপনাদের উপরে নির্ভরশীল। আপনারাই বা কেন মুম্বইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের মতো সুনামের সঙ্গে কাজ করবেন না? কেন আপনাদের বার বার বদনাম হবে?”
শুধু নিজেরা ভাল ব্যবহার করাই নয়, সহকর্মীদেরও ভাল ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বলেন ইন্দ্রজ্যোতিবাবু। কয়েক জন অটোচালকের খারাপ ব্যবহারের জন্য কলকাতার সমস্ত অটোচালকের বদনাম হচ্ছে বলেও বারবার সতর্ক করেন তিনি। তাঁর পরামর্শ, “যাত্রীকে সম্মান করুন। দেখুন যাত্রীরাও আপনাকে সম্মান করবেন।”
মনস্তাত্ত্বিকের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের উদ্ধুদ্ধ করে তোলা নতুন নয়। খেলোয়াড়দের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে নেপথ্যে অনেক সময়েই নানা মনস্তাত্ত্বিক টোটকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। একই ভাবে বেপরোয়া অটোচালকদের শোধরাতেও মনস্তাত্ত্বিক দাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন কলকাতার পুলিশকর্তারা। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই কর্মশালার শেষে বরুণকুমার সাহা নামে কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট বলেন, “ভাল কথায় বা ধরপাকড়ে কাজ হচ্ছে না। অটোচালকদের দাদাগিরি বেড়েই চলেছে। এই মনস্তাত্ত্বিক টোটকাতে কিন্তু অটোচালকেরা খুবই উদ্বুদ্ধ হলেন।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.