শনিবার শেষ হয়েছে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের পালা।
একদম শেষ প্রহরে ফল প্রকাশ করেছে তিন হেভিওয়েট ইন্ডিয়ান অয়েল, ওএনজিসি এবং স্টেট ব্যাঙ্ক। ভর্তুকির ভারে নুয়ে পড়া ইন্ডিয়ান অয়েল প্রকাশ করেছে ৯৬১ কোটি টাকা লোকসানের বিবরণ। অন্য দিকে ভর্তুকির বোঝা বয়েও ওএনজিসি প্রকাশ করেছে ৭১২৬ কোটি টাকা লাভের তথ্য। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫৬৩ কোটি টাকা বেশি।
শেষ বেলায় বাজারকে ভাল রকমের হতাশ করেছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদ এবং কর্মী-খরচ বাড়ায় ব্যাঙ্কের লাভ কমেছে ৩৪.২১ শতাংশ। নিট মুনাফা নেমে এসেছে ২২৩৪ কোটি টাকায়। এই নিয়ে পরপর চার বার ব্যাঙ্ক ত্রৈমাসিক ফলাফলে লাভ কমার কথা প্রকাশ করল। খারাপ বা অনাদায়ী ঋণের জন্য গত তিন মাসে ব্যাঙ্ককে সরিয়ে রাখতে হয়েছে ৩৪২৮ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কের মোট অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬৭,৭৯৯ কোটি টাকা। ভিতরে ভিতরে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য কতটা খারাপ, এই পরিসংখ্যান তারই ইঙ্গিত দেয়।
লাভ কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়ারও। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে কোম্পানির নিট মুনাফা ১১ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৩৮৯৪ কোটি টাকায়। অন্যদের মধ্যে ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টিল অথরিটি। কোম্পানির নিট লাভ ১০ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৫৩৩ কোটি টাকায়। স্পাইসজেট-এর লোকসান হয়েছে ১৭১ কোটি টাকা। ২৩ শতাংশ কমে হিন্দালকো-র লাভ নেমে এসেছে ৩৩৪ কোটি টাকায়। খারাপ ফলাফলে অনেককেই ‘টেক্কা’ দিয়েছে কলকাতা ভিত্তিক ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মাত্র তিন মাসে ব্যাঙ্কের লোকসান হয়েছে ১২৩৮ কোটি টাকা। প্রথম দিকে কিছু ভাল ফলাফল প্রকাশিত হলেও শেষ বেলায় প্রকাশিত ফলাফল বেশ হতাশ করেছে বাজারকে।
গত সপ্তাহে বাজারের কাছে ভাল খবর ছিল পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি নেমে আসার তথ্য। জানুয়ারিতে এই মূল্যবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫.০৫ শতাংশে যা গত ৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। জানুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৮.৭৯ শতাংশে যা গত ২ বছরের মধ্যে সব থেকে কম। শিল্পমহলের আশা এক দিকে মন্থর জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার এবং অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে আসা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে রেপো রেট কমানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। এই আশাতেই শেয়ার বাজার শুক্রবার কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়।
শনিবার জমার উপর সুদের হার কমানোর কথা ঘোষণা করেছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। ৩ থেকে ৫ বছরের কম মেয়াদে এখন থেকে সুদ পাওয়া যাবে ৮.৭৫ শতাংশ এবং ৫ বছর ও তার বেশি মেয়াদে ৮.৫ শতাংশ। ১ থেকে ৩ বছরের কম মেয়াদে সুদ থাকছে ৯ শতাংশেই। এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, লম্বা মেয়াদে দেশে সুদের হার কমতে চলেছে। অবসরপ্রাপ্ত মানুষের কাছে এইটি অবশ্য ভাল খবর নয়।
টুজি স্পেকট্র্রাম নিলামে মোট দর উঠেছে ৬১,১৬২ কোটি টাকা। বছরের শেষ দিকে এত বড় অর্থাগম হাসি ফোটাবে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের মুখে। সহজ হবে মন্ত্রিত্বের শেষ দফাটা সামলানো। কমবে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক। ২০১০-এ থ্রিজি নিলাম করে পাওয়া গিয়েছিল ৬৭,৭১৯ কোটি টাকা।
এ দিকে, পরিষেবা রফতানি বাবদ ডিসেম্বরে ভারতের আয় হয়েছে ১২৮৭ কোটি ডলার। নভেম্বরের তুলনায় কিছুটা বেশি। চলতি বছরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে রফতানি ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে।
সোমবার নতুন করে আর এক প্রস্ত করমুক্ত বন্ড বাজারে আনছে ইন্ডিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স কোম্পানি। ‘এএএ’ রেটিংযুক্ত এই কোম্পানি ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদে ব্যক্তিগত লগ্নিকারীদের সুদ দেবে যথাক্রমে ৮.৪১, ৮.৮০ এবং ৮.৮০ শতাংশ। ইস্যুর মূল আকার ৭৫০ কোটি টাকা হলেও অতিরিক্ত আবেদনের ক্ষেত্রে এই আকার বেড়ে ২৮২৩.৭৯ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ইস্যু খোলা থাকবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত। আরও একটি করমুক্ত বন্ড ইস্যু আসছে এন্নোর পোর্ট লিমিটেড-এর কাছ থেকে। ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলে এই ইস্যু বন্ধ হবে ১৪ মার্চ। ইস্যুর আকার ২৫০ কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত। রেটিং ‘এএ’ হওয়ায় সুদের হার এই ইস্যুতে কিছুটা বেশি। ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদে যথাক্রমে ৮.৬১, ৯.০০ এবং ৯.০০ শতাংশ।
চলতি সপ্তাহ ‘ছোট বাজেট’ (ভোট অন অ্যাকাউন্ট)-এর সপ্তাহ। এরই মধ্যে পেশ হয়েছে ছোট রেল বাজেট। এ বার চিদম্বরমের পালা। কর বাড়ানোর সুযোগ কম। স্পেকট্রাম নিলাম বাবদ মোটা আয়ের সুবাদে নির্বাচনের মুখে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কর বাবদ সুবিধা পাওয়া যায় কি না, তা-ই এখন দেখার।
|