|
|
|
|
বাস্তবমুখী বাজেট পেশই লক্ষ্য চিদম্বরমের
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
১৪ ফেব্রুয়ারি |
লোকসভা নির্বাচনের মুখে সোমবার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তার আগে সব মহলের মধ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল, ভোটের দাবি মেনে চিদম্বরম কি বাজেটে জনমোহিনী ঘোষণা করবেন? না কি সংস্কারের পথেই হাঁটবেন?
অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার জবাব, “ভোটের বছর হলেও এ বার রেল বাজেট বাস্তবমুখী হয়েছে। রেলমন্ত্রী সংস্কারের পথ থেকে সরেননি। চিদম্বরমও সেই পথেই হাঁটবেন। বাজেটে বড় কোনও জনমোহিনী ঘোষণার আশা কম।” ওই কর্তার ব্যাখ্যা, লোকসভা ভোটের বছরে সব অর্থমন্ত্রীই বাজেটে ভোটারদের মন জয়ের একটা শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু এ বার চিদম্বরমের হাত-পা বাঁধা। মন্দা না কাটায় রাজস্ব আয়ের ছবিটা বিশেষ ভাল নয়। তার সঙ্গে রয়েছে চড়া মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় সমস্যা। তাই চিদম্বরম নিজেও আর্থিক শৃঙ্খলার বাঁধন খুলতে নারাজ। কোনও ভাবেই লাগামছাড়া খরচের পথে হাঁটতে চান না তিনি।
তবে অনেকেই মনে করছেন, এর মধ্যেও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। একই ভাবে দেশের অনগ্রসর এলাকাগুলির জন্য বিশেষ কোনও সুরাহার ঘোষণা হতে পারে। আবার শিল্পক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে করের হার কমিয়ে শিল্পমহলকে সুরাহা দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করবেন।
যেমন গাড়ি শিল্পকে চাঙ্গা করতে কিছু কর ছাড় বা রফতানিকে চাঙ্গা করতে ঋণের উপর ভর্তুকির ঘোষণা হতে পারে। আজ রাহুল গাঁধী অবসরপ্রাপ্ত ফৌজিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এঁদের ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর দাবি পূরণ সংক্রান্ত ঘোষণা থাকতে পারে বাজেটে।
ভোটের বছর হলেও এ বার যে জনমোহিনী বাজেট করা কঠিন, তা বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতারাও। তাই এখন তাঁদের দাবি, সামাজিক ক্ষেত্রগুলিতে যাতে বরাদ্দ ছাঁটাই না করা হয়। বিশেষ করে একশো দিনের কাজ, গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প, খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে যাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
ইউপিএ ক্ষমতায় ফিরলে তার অর্থনৈতিক কর্মসূচি কী হবে, সেই রূপরেখাও বাজেটে দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। চিদম্বরমের কথায়, “এটা অন্তর্বর্তী বাজেট। তাই কর কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু পরোক্ষ করের হার বদলানোই যায়। আমরা ভবিষ্যতের রূপরেখাও দিতে পারি।” অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চিদম্বরম বাজেট বক্তৃতাকে মনমোহন-সরকারের সাফল্য প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
চিদম্বরম গত বছর জানিয়েছিলেন, চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতিকে তিনি ৪.৮ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, চলতি আর্থিক বছরে রাজস্ব আয় কমলেও খরচে লাগাম টেনে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে রাখা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা গেলে শেয়ার সূচকে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গত বছর বাজেট পেশের সময় চিদম্বরমের সবথেকে বড় দুশ্চিন্তা ছিল চলতি খাতে লেনদেনের ঘাটতি বা বিদেশি মুদ্রার আয়ব্যয়ের ঘাটতি। সেই ঘাটতিতেও রাশ টানা গিয়েছে বলে দাবি অর্থ মন্ত্রকের।
তেলঙ্গানা নিয়ে হাঙ্গামার জেরে রেলের বাজেট বক্তৃতার পুরোটা পড়তেই পারেননি রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে। চিদম্বরম কি সোমবার সেই সুযোগ পাবেন? তাঁর বাজেট বক্তৃতা কতটা দীর্ঘ হবে? অর্থমন্ত্রীর সহাস্য জবাব, “২০০৪ সালে যশোবন্ত সিংহ ১২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা পড়েছিলেন। ২০০৯-এ প্রণব মুখোপাধ্যায় ১৮ পৃষ্ঠার। আমাকে ১২ ও ১৮-র মধ্যে একটা সংখ্যা বেছে নিতে হবে!” |
|
|
|
|
|