|
|
|
|
দিল্লি নয়, দেশের তখতেই নজর বিজেপির
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৪ ফেব্রুয়ারি |
অরবিন্দ কেজরীবালের ইস্তফার পর, দিল্লিতে সরকার গড়ার প্রশ্নে বিধায়ক-সংখ্যার দিক দিয়ে বিজেপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও এখনই তারা কোনও রকম তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না। কারণ লোকসভা ভোটের বড় লড়াইটাই তাদের পাখির চোখ।
কংগ্রেস-বিজেপি উভয়েরই আশঙ্কা, দিল্লির কুর্সি ছাড়ার পর কেজরীবাল ফের আগের রাজনীতিতে ফিরবেন। নিত্য দিন ধর্না, বিক্ষোভ, অনশন চালাবেন। রাজ্যে-রাজ্যে ঘুরে প্রচার করবেন। দুর্নীতির প্রসঙ্গে মুকেশ অম্বানীর সঙ্গে কংগ্রেস-বিজেপিকে একসূত্রে গেঁথে নিয়ে সেই প্রচারের কৌশলটাও আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়কেই এখন কেজরীবালের সড়ক-রাজনীতির মোকাবিলা করতে হবে। এই অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে দিল্লির কুর্সিতে বসতে গিয়ে বিজেপি এমন কিছু করতে রাজি নয়, যা দেশের তখত দখলের লড়াইয়ে বিরূপ ছাপ ফেলে।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার গড়ার পক্ষে সায় দেননি নরেন্দ্র মোদী। কারণ, লোকসভার আগে মোদী এমন কোনও বার্তা দিতে চান না, যাতে মনে হয়, বিধায়ক কেনাবেচা করে জোড়াতালির রাজনীতির পথে হাঁটছে বিজেপি। এখনও সেই অবস্থানেই রয়েছে তারা। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দলের সামনে বিকল্প তিনটি।
• আম আদমি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত বিনোদকুমার বিন্নি, নির্দল বিধায়ক রামবীর কৌশিন ও জেডি(ইউ)-এর শোয়েব ইকবালকে নিয়ে এমনিতেই সরকার গড়া সম্ভব।
• কিন্তু টায়েটায়ে গড়া এই সরকারের ভাগ্যও সরু সুতোর উপরে ঝুলবে। সে ক্ষেত্রে আপ থেকে এক-তৃতীয়াংশের বেশি বিধায়ক বেরিয়ে এসে যদি বিজেপি-কে সমর্থন করে, তা হলে সংখ্যার দিক দিয়ে সরকারের ভিত মজবুত হতে পারে।
• এই দুই বিকল্পই কাজ না করলে ফের ভোটে যাওয়া।”
দিল্লিতে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন হর্ষবর্ধন। তিনি আজ বলেন, “আমাদের কাছে দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার চেয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠনই প্রধান লক্ষ্য।” |
হাতে পদত্যাগপত্র। দলীয় দফতরের সামনে
কেজরীবাল। শুক্রবার সন্ধ্যায়। ছবি: পিটিআই। |
হর্ষবর্ধনরা জানেন, দিল্লি সামলানোর দায় না থাকায় কেজরীবালরা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠন বাড়ানো ও আক্রমণ শানানোর সুযোগ পাবেন বেশি করে। জনলোকপাল বিল পাশ করানোর জন্য নিয়ম মেনেছেন কী মানেনি, সেই বিতর্ক ছাপিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গকেই সামনের সারিতে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাবেন পথে নেমে। দিল্লির ভোটে ইতিমধ্যেই তাঁরা বিজেপি-র যাত্রাভঙ্গ করেছেন। মুখে না বললেও তলে তলে দলের আশঙ্কা, কেজরীবাল এ বার না মোদীর যাত্রাভঙ্গ করেন! মোদী যখন সুশাসনের কর্মসূচিকে সামনে রেখে এগোতে চাইছেন, কেজরীবাল তখন দুর্নীতি-প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপিকেও এক সুতোয় গেঁথে মোদীর দলকে বিপাকে ফেলতে পারেন।
এর মোকাবিলা কী ভাবে করবে বিজেপি? দলের দিল্লি শাখার সভাপতি বিজয় গোয়েল বলেন, “আমাদের কৌশল হবে কেজরীবালের মুখোশ খুলে দেওয়া। যে ক’দিন সময় পেয়েছেন, তার মধ্যে কমনওয়েলথ গেমসের দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু তিনি শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেননি। দিল্লির জনতাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পালন না করেই কুর্সি ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি শুধুই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চেয়েছিলেন। ফের বিরোধী-রাজনীতি করে সেটাই হাসিল করতে চাইছেন তিনি। জনতা এর যোগ্য জবাব দেবে।”
কংগ্রেস চাইছিল অন্তত লোকসভা ভোট পর্যন্ত সরকার চালাক আপ। তারা ধরে নিয়েছিল, কেজরীবাল যে ভাবে প্রশাসন চালাচ্ছেন, তাতে জুন-জুলাই নাগাদ সরকার মুখ থুবড়ে পড়বে। তখন কংগ্রেসও সুযোগ পাবে কেজরীবালের সমালোচনা করার। তাই আপ যতই সনিয়া-রাহুলের সমালোচনা করুক, কংগ্রেস কিন্তু সমর্থন প্রত্যাহারের কথা একবারও বলেনি। কিন্তু কংগ্রেসের সেই বাড়া ভাতে কেজরীবাল ছাই দেওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন শাকিল আহমেদরা। তাঁদের আশঙ্কা, এখনই বিধানসভা ভোট হলে কংগ্রেসের যেটুকু শক্তি রয়েছে দিল্লিতে, তা-ও মুছে যাবে।
তবে এমন নয় যে কেজরীবালের এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের কাছে কোনও আচমকা আঘাত। কংগ্রেসের শীর্ষ সারির নেতারা গত কয়েক দিন ধরেই বলছিলেন, কেজরীবাল সম্ভবত সরকার ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছেন। কারণ, আপ-এর লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে লড়া। মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে, অনভিজ্ঞ হাতে প্রশাসন সামলে কেজরীবালের পক্ষে লোকসভা ভোটের জন্য পূর্ণ সময় দেওয়া সম্ভব হবে না। তা ছাড়া সরকারের ওপরে বিপুল ভর্তুকির বোঝা নিয়ে প্রশাসন চালানোও মুশকিল। সম্প্রতি দিল্লির রাস্তায় ধর্নায় বসে ইস্তফার ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিলেন কেজরীবাল। তখন সংবাদমাধ্যমের সমালোচনার মুখে ইস্তফা দিতে পারেননি। জন-লোকপাল বিল পাশ না হওয়ায় সেই সুযোগটাই নিলেন তিনি।
কেজরীবাল সম্পর্কে মধ্যবিত্তের কিছুটা মোহভঙ্গ হয়েছে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, দিল্লির মানুষ এখন অন্তত বলতে পারবেন না, কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে সরকার ফেলে দিল। উল্টে কংগ্রেস সমালোচনা করতে পারবে কেজরীবালের। এ-ও বলার সুযোগ পাবে, রাজধানী-রাজ্যে স্থায়িত্ব ও উন্নয়ন কায়েম করতে পারে একমাত্র কংগ্রেস। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “একটি বিল পাশ না হলেই যদি কেউ সরকার ফেলে দেন, তা হলে তাঁর কোনও প্রশাসনিক দক্ষতা বা যোগ্যতাই নেই। বিধানসভা কারও খামখেয়ালিপনার জায়গা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে আইন প্রণয়নের সভা এটি। দিল্লির মানুষেরও এটা বোঝা উচিত।” |
কুর্সি ত্যাগের কিসসা |
• দিল্লি মন্ত্রিসভার পাশ করা জন লোকপাল বিল অবৈধ বলে জানান উপরাজ্যপাল নজীব জঙ্গ।
• ২০০২ সালের দিল্লি সরকারের আইন বলছে, কোনও নতুন বিল মন্ত্রিসভায় পেশ করার আগে তা নিয়ে কেন্দ্রের ছাড়পত্র নিতে হবে। সেই অনুমতি পাননি অরবিন্দ কেজরীবালরা।
• এই আইন মানতে চাননি দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে বিলটি পেশ করতে চান। না করতে পেরে ইস্তফা। |
শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করেননি। আমরা ওঁর মুখোশ খুলব।
বিজয় গোয়েল,
দিল্লি বিজেপির সভাপতি
একটা বিল আটকে গেলেই সরকার ফেলা হবে? বিধানসভা খামখোয়লির জায়গা নয়।
শাকিল আহমেদ,
দিল্লির দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা |
দুপুর ২:৪৮ লোকপাল বিল নিয়ে উপরাজ্যপালের চিঠি পড়ে শোনানোর দাবি বিরোধীদের, বিধানসভা উত্তাল
৩:২২ স্পিকার চিঠিটি পড়লেন
৩:৪৫ বিল পেশের চেষ্টা কেজরীবালের
বিকেল ৪:৫০ বিল পেশ হবে কি না, ভোটাভুটি
৪:৫৩ স্পিকার জানান, গরিষ্ঠতার অভাবে বিল আনা যাবে না
৫:৩০ ইস্তফার হুমকি কেজরীবালের
৫:৫০ মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার ভাঙার সিদ্ধান্ত
৬:১২ হনুমান রোডে আপ-এর অফিসের সামনে ভিড়
৮:১০ ইস্তফা দিচ্ছেন, ঘোষণা কেজরীবালের
৮:২০ সমর্থকদের কাছে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা, লড়াইয়ের ডাক
৯:৩০ উপরাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ |
|
|
|
|
|
|