লোকপাল আটকে যেতেই ফেললেন ৪৯ দিনের সরকার
১৪ ফেব্রুয়ারি
ড়ক থেকে সরকার। সেখান থেকে ফের সড়কেই ফিরলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। ৪৯ দিনে সম্পূর্ণ হল বৃত্ত। শুক্রবার রাত আটটা কুড়িতে যখন দলীয় দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করছেন তিনি, এবং জানাচ্ছেন আগামিকাল থেকে কংগ্রেস-বিজেপির বিরুদ্ধে ফের পথে নামবেন, কর্মী-সমর্থকদের চিৎকারে তখন উত্তাল এলাকা। সেই উল্লাসে স্পষ্ট হয়ে গেল, বন্যরা বনে সুন্দর, কেজরীবাল বিরোধী মঞ্চে।
কংগ্রেস-বিজেপির সঙ্গে কেজরীর বিবাদের মূল বিষয় ছিল জন লোকপাল বিল। শুক্রবার এই বিল বিধানসভায় পেশ করতে না পারার পরেই কেজরী বুঝিয়ে দেন, ইস্তফা দিতে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর এই সিদ্ধান্ত প্রথমে দিল্লি মন্ত্রিসভা, পরে দলীয় নেতারাও সমর্থন করেন। তবে আজ ঝগড়া যা নিয়েই হোক না কেন, গদিতে বসার পর থেকে গত দেড় মাসে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে আপের সরকার। শুধু বিরোধীরাই নয়, সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে প্রতিবাদের সুর শোনা গিয়েছে অন্য অনেকের কাছ থেকেই। এ দিন কেজরীবাল ইস্তফা দেওয়ার পরে কংগ্রেস-বিজেপি দুই দলই অভিযোগ করেছে, সরকার চালানোর ক্ষেত্রে খামখেয়ালিপনা চলতে পারে না।
আর কেজরী নিজে কী বলেছেন? তিনি এ দিনই কংগ্রেস-বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে ময়দানে নেমে পড়েছেন। বলেছেন, তাঁরা মুকেশ অম্বানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতেই দুই প্রধান রাজনৈতিক দল হাত মিলিয়ে সরকার ফেলে দিয়েছে। কেজরীর অভিযোগ, “কংগ্রেস ও বিজেপি দু’দলই মুকেশ অম্বানীর কৃপাধন্য। তিন দিন আগে দিল্লি সরকার যেই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করে, অমনি দু’দল মিলে সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করে ফেলে।”
পাশাপাশি জন লোকপাল বিল নিয়ে কেন্দ্রের ছাড়পত্র সম্পর্কেও শোনা গিয়েছে তাঁর তর্জনগর্জন। বলেছেন, “কেন্দ্র কি বিলেত? তা হলে জন লোকপাল বিল পাশ করাতে তাদের ছাড়পত্র লাগবে কেন?” ছাড়েননি উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গকেও। বলেন, “কেন্দ্র যদি বিলেত হয় নজীব জঙ্গ তবে ভাইসরয়!”

তখন বিধানসভায় অধিবেশন চলছে। ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্র কি বিলেত? তা হলে জন লোকপাল বিল পাশ করাতে
তাদের ছাড়পত্র লাগবে কেন? জন লোকপাল বিলের জন্য আমি আরও
একশো বার কুর্সি ছাড়তে পারি। —
বৃষ্টি মাথায় নিয়েও আজ হনুমান রোডে দলের সদর দফতরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কিছু আপ সমর্থক। কেজরীবাল যখন এ সব কথা বলছেন, সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, কেজরীবালকে গদি ছাড়তেই হতো। তাঁর উত্থান উল্কার মতো। কিন্তু গত দেড় মাসে তাঁর সরকার যত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তা কমেছে কেজরীবালের। আম আদমির একটি বড় অংশ মনে করতে শুরু করেছিল, প্রতিবাদের ঝড় তুলে ক্ষমতায় আসা আপ কিন্তু প্রশাসন চালানোর ক্ষেত্রে ততটা দড় নয়। এই অবস্থায় ইস্তফা দেওয়া ছাড়া পথ ছিল না। বিজেপির বিধায়ক হর্ষবর্ধনও বলেন, “গদি ছাড়তেই হতো কেজরীকে। ফিকির খুঁজছিলেন তিনি। আজ সেটাই পেয়ে গেলেন।”
দিল্লিতে অনেকেই বলছেন, জন লোকপাল বিল পাশ করাতে না পারলে ইস্তফার যে হুমকি কেজরী আগেই দিয়ে রেখেছিলেন, সেটা সব দিক ভেবেচিন্তেই। কারণ, তিনি ভালই জানতেন, যে প্রক্রিয়ায় তিনি এগোতে চাইছেন, সেটা সম্ভব নয়। তাতে বিলটা পাশ তো দূর, পেশই করা যাবে না। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, সব বুঝে তবু সেই পথেই এগোতে চাইছিলেন কেজরী। কারণ, সে ক্ষেত্রে ইস্তফা দিয়ে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে পারবেন তিনি। যেমন, বলতে পারবেন, বিরোধীদের বাধায় বিলটি আটকে গেল। যাবতীয় দোষ কংগ্রেস-বিজেপির সঙ্গে কেন্দ্র ও উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গের উপরে চাপাতে পারবেন। বলতে পারবেন, কুর্সির প্রতি তাঁর লোভ নেই, তিনি জনতার কাছে দায়বদ্ধ। সব থেকে বড় কথা, তাঁর ‘কম্ফর্ট জোন’, বিরোধী মঞ্চ, সেখানে ফের চলে আসতে পারবেন। আর বিজেপি নেতারা বলছেন, বিদ্যুৎ, জল, অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ নিয়ে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সবগুলি পূরণ করতে পারেননি। তাই পালিয়ে বাঁচলেন। বস্তুত, এ দিনই ইস্তফার পরে তাঁর বাড়ির সামনে অস্থায়ী কর্মচারী ও হোমগার্ডরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
তবে কেজরীকে আজ গদি ছাড়ার সুযোগ একসঙ্গে করে দিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি। এ দিন ৭০ সদস্যের বিধানসভায় ৪২ জনই জন লোকপাল বিল নিয়ে আপত্তি তোলেন। ফলে বিল পেশ করতে পারেননি কেজরী। আপ সূত্রের খবর, এর পরেই ইস্তফা দেবেন বলে ঠিক করে নেন তিনি। সরকারি ব্যয়বরাদ্দ সংক্রান্ত বাজেট পাশ হওয়ার পরেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার। তার পরেই মন্ত্রিসভা এবং দলীয় বৈঠকে সিলমোহর দেওয়া হয় কেজরীর সিদ্ধান্তে। রাতে তিনি উপ-রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসেন তিনি। কাল নজীব কেন্দ্রের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট দেবেন। জানা গিয়েছে, কেজরী সুপারিশ করলেও বিধানসভা না-ও ভাঙা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সব থেকে বড় দল বিজেপিকে সরকার গড়তে ডাকা হতে পারে।
এর মধ্যেই কেজরীবালের তোলা অভিযোগগুলি উড়িয়ে দিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস-বিজেপি। দু’দলই জানিয়েছে, আপ সরকার যদি নিয়ম মেনে বিলটি আনত, তা হলে সমর্থন করাই যেত। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হর্ষবর্ধন বলেন, “অবৈধ বিল সরকার নিয়ে এলে দল কোনও ভাবেই তাকে সমর্থন করতে পারে না।”
তবে ঘরোয়া আলোচনায় দু’দলের নেতারাই একটি বিষয় তুলছেন এখন। তা হল, ক্ষমতায় থাকা কেজরীর থেকে বিরোধী কেজরী বেশি ভয়ঙ্কর। লোকসভা ভোটের সময় কেজরীকে যদি গদিতে বসিয়ে রাখা যেত, তা হলে তাঁর প্রভাব কাজই করত না মানুষের উপরে। এখন নিজের ময়দান অর্থাৎ বিরোধী মঞ্চে গিয়ে তিনি আক্রমণ শানানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন। সঙ্গে পেলেন একাধিক অস্ত্র। তাই তাঁকে নিয়ে চিন্তাটা নতুন করে ফিরে এসেছে দু’শিবিরেই।
অন্য দিকে, কেজরীও বুঝে গিয়েছিলেন, প্রশাসকের বদলে বিরোধী হিসেবেই তিনি স্বচ্ছন্দ। আমজনতার মাঝে থেকে, তাদের হয়ে লড়াই চালানোটা তাঁর পক্ষে সহজতর। দলের সমর্থকরাও যে তা-ই চাইছেন, বোঝা গিয়েছে এবিপি নিউজের এক সমীক্ষায়। আজ সরকার ভেঙে দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন দল যখন কেজরীবালের সমালোচনায় সরব, তখন ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে, ইস্তফার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রায় ৬৭% মানুষ।
এই জনসমর্থনকে হাতিয়ার করেই দলকে পরবর্তী আন্দোলনের পথে নিয়ে যেতে চাইছেন কেজরীবাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.