দশম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা, মাধ্যমিক বা যে নামেই ডাকা হোকপরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশের কাছে মানসিক চাপের কারণ, বলছেন মনোবিদেরা। তার একটা কারণ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসা। কিন্তু সেই পরীক্ষার ভীতি কাটাতে নিজেদের মতো উপায়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছে একাধিক স্কুল।
দুর্গাপুর শহরের কেন্দ্রে বেনাচিতি রামকৃষ্ণ পল্লি বিবেকানন্দ হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বছরভর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষকারা ক্লাসেই চাপ কাটানোর নানা ‘টিপস’ দেন। তা ছাড়া, দশম শ্রেণির যে দিন শেষ ক্লাস নেওয়া হয়, সে দিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পর্কে বিশদে জানান পড়ুয়াদের। চেষ্টা করা হয় তাদের ওই পরীক্ষা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা দিতে, যাতে পরীক্ষার হলে গিয়ে তাদের মনে না হয় যে তারা অকুল পাথারে পড়েছে। অঙ্গদপুর হাইস্কুল আবার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অভিভাবকদের স্কুলে ডাকে। সেখানে স্কুলের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়, মাধ্যমিক পরীক্ষার আগের তিন মাস পড়ুয়াদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করলে তারা মানসিক ভাবে তাজা থাকবে। হেমশিলা মডেল স্কুলে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা থাকে। স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আলাদা আলাদা করে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। দরকারে কথা বলা হয় অভিভাবকদের সঙ্গেও। তবে সব স্কুলই যে এই পদ্ধতিতে ভরসা রাখে তা নয়। একাধিক স্কুল আবার সারা বছর পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখাতেও বিশ্বাসী।
স্কুলগুলোর চেষ্টা থাকলেও, পরীক্ষার্থীদের সবাই যে চাপমুক্ত হতে পরে তা-ও নয়। সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি এলাকার এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মা-র যেমন দাবি, “আমার ছেলে এমনিতে চাপে থাকে না। কিন্তু কিছু সহপাঠীর হাবভাব দেখে চাপে পড়ে যাচ্ছে। ওকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি।” বি জোনের সিবিএসই বোর্ডের এক দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থী যেমন বলল, “পড়াশোনা নিয়ে কোনও চাপ নেই। তবে পরীক্ষার প্রথম দিনটা নিয়ে সামান্য চিন্তা আছে। এক বার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলে আর চিন্তা থাকবে বলে মনে হয় না।”
কী বলছেন মনোবিদেরা? তাঁরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষার আগে অনেক বাবা-মা ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাঁদের কাছে আসেন পরীক্ষাজনিত চাপ কাটানোর উপায় বার করতে। মনোবিদ শিলাদিত্য রায়ের মতে জীবন আগের থেকে অনেক বেশি গতিশীল ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে ওঠায় সমস্যা হচ্ছে। শুধু পরীক্ষার আগে পড়াশোনায় জোর না দিয়ে সারা বছর রুটিন মেনে পড়াশোনা করা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগে পড়া, নিয়মিত ‘রিভিশন’ দেওয়া জরুরি। এ ছাড়া পরীক্ষার মাসখানেক আগে থেকে প্রতিদিন সামান্য ব্যায়াম করা, রাত না জাগা, হাল্কা মিউজিক শোনা, একটানা পড়াশোনা না করে মাঝে ‘ব্রেক’ নেওয়ার মতো উপায় অনুসরণ করলে চাপ উধাও হয়ে যাবে। |