শাদি কে সাইড এফেক্ট

‘চারুলতা’ থেকে ‘ইজাজত’।
‘সিলসিলা’ থেকে ‘মার্ডার’।
‘অনুরণন’ থেকে ‘বেডরুম’।

পরকীয়া প্রেম নিয়ে কত রকমের সিনেমা। কিন্তু আজ অবধি কোনও ছবিতেই এমনটা বলা হয়নি যে বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি রয়েছে পরকীয়া প্রেমের যৌন সম্পর্কে।
কালো স্যাটিনে মোড়া মল্লিকা শেরাওয়াতকে কার্নিশে শুয়ে থাকতে দেখে ইমরান হাসমি গাইতেই পারেন ‘ভিগে হোঠ তেরে’। কিন্তু বিয়ে টেকাতে তাঁকে ইমরানের চুমুকে ‘বাই বাই’ বলে ফিরে আসতেই হয়েছে অস্মিত প্যাটেলের কাছে। তবে না হবে সুখী গৃহকোণ!
স্ত্রী জানবে যে তাঁর স্বামী অন্য নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকবে আর তার পরও বিয়েটা দারুণ ভাবে টিকে যাবে, এমন কথা শোনা যায় না।
চারুলতা
কিন্তু সে সব ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে সম্পর্ক নিয়ে নতুন এক গবেষণা এখন শিরোনামে। ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মনস্তত্ত্ব বিভাগের এলি ফিঙ্কেল এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি এমন একটা পেপার লিখছেন যাতে বলা হয়েছে যে পরকীয়া প্রেম হল বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার পক্ষে আদর্শ। এলি অবশ্য বলেই দিয়েছেন যে তিনি লুকিয়ে প্রেম করতে কাউকে বলছেন না। কিন্তু যদি কোনও দম্পতি নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নেন যে তাঁরা ‘নন মনোগেমাস’ সম্পর্ক রাখবেন তা হলে তাতে বিয়েতেও কোনও বাধা আসবে না।
যে দিন এই পেপার নিয়ে চর্চা শুরু হয়, সে দিন থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। কেউ বলেন যে লেখাটা সম্পূর্ণ ভাবেই ভ্রান্ত। টুইটারেও শুরু হয়ে যায় নতুন বিতর্ক। তসলিমা নাসরিন বলেন, “আই থিঙ্ক ইট ইজ (অ্যাডালট্রি) দ্য কি টু দ্য আনহ্যাপি ম্যারেজ অর ডিভোর্স।” তাঁর এই টুইটারের উত্তরে এক জন লেখেন, “দিজ ওয়েস্টার্ন সায়েনটিস্টস ট্রাইং টু কনফিউজ অ্যান্ড স্পয়েল ইস্টার্ন কানট্রি’স কালচার সিন্স দে আর অলরেডি স্পয়েলট।’ তা দেখে তসলিমা আবার লেখেন, ‘দ্য ট্রুথ ইজ ইস্টার্ন মেন আর মোর অ্যাডালট্রাস দ্যান ওয়েস্টার্ন মেন।’ শুরু হয় নতুন বিতর্ক। পাশ্চাত্যের পুরুষদের থেকেও কি এ দেশের পুরুষেরা বেশি বহুগামী?
সিলসিলা
তসলিমা নাসরিন
সম্পর্কের ভিত্তি যদি ভালবাসা হয় তা হলে কী করে তা টিকে থাকবে যদি এক পার্টনার বিয়ের বাইরে যৌন আকর্ষণ খোঁজেন? মানুষ মাত্রেই বহুগামী বললেই তো আর এই সব মেনে নেওয়া যায় না। মানুষের আদিম প্রকৃতি হল জামাকাপড় না পরে থাকা। তাই বলে কি আমরা সেটাই করতে শুরু করে দিয়েছি নাকি? করিনি তো। আদিম স্বভাবের ভিত্তিতে তো আমরা সমাজও চালাই না। নির্মমতা, অন্যকে হত্যা করাটাও তো এক সময় প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি ছিল। কিন্তু আজ তো আমরা তা অনুসরণ করি না। আমরা যত সভ্য হয়েছি, ওগুলোর বিরুদ্ধে আইন করেছি। সভ্যতার নিদর্শন হল একগামী হওয়া। সেখানে ‘পলিগ্যামাস’ সম্পর্ক চালিয়ে গিয়ে বিয়ে টিকিয়ে রাখার কথা ভাবা হবে? কোনও নারী বা পুরুষ কি চাইবে তাঁর ভালবাসার মানুষটাকে ভাগ করে নিতে? আমার ধারণা এই রকম একটা সমীক্ষা করার কারণ পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারাকে আরও বেশি ভাবে প্রচার করা। এটা সত্যি যে আমাদের এখানকার পুরুষেরা পাশ্চাত্যের পুরুষের থেকে অনেক বেশি পরকীয়াপ্রবণ। তার কারণ এখানকার মেয়েরা তাঁদের স্বামীদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। পাশ্চাত্য সভ্যতায় যেখানে সকলেরই সমানাধিকার, সেখানে মেয়েরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করেন। বিশ্বস্ততা আর প্রেমকে ভিত্তি করে ও দেশে বিয়ে বা লিভ ইন রিলেশনশিপ হয়। দু’জনের মধ্যে যদি প্রেম নষ্ট হয়ে যায়— আমি বলছি না যে সেখানে অন্যর প্রতি আকর্ষণ জন্মায় না। কিন্তু তা হলে ওঁরা সেটা বলে দিয়ে ‘মিউচুয়ালি ডিভোর্স’ করে নেন। এতে বাচ্চাদের কোনও ক্ষতিও হয় না। ওঁরা ‘সিরিয়াল মনোগামি’তেও বিশ্বাসী। যখন যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থাকল তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বস্ত। সেই সম্পর্ক শেষ হলে সেখানে ছেদ ঘোষণা করে তাঁরা নতুন সম্পর্কের দিকে এগোতে ভয় পান না। তখন তাঁরা পছন্দের নতুন মানুষটির প্রতি আবার সম্পূর্ণ ভাবে ‘কমিটেড’। কিন্তু এখানে অসম-সমাজ। তাই সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও মেয়েরা বিয়ে ভাঙতে চায় না। ডিভোর্স হলে বাচ্চাদের কী হবে? লোকে কী বলবে সেই ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করে। এমনকী বরের পরকীয়া প্রেমও।

মহেশ ভট্ট
হিউম্যান বিইংস হ্যাভ এ সুইট টুথ ফর সেক্স। মানুষ মাত্রেই যৌন সম্পর্ক পছন্দ করে। এটাই সত্যি! কিন্তু এটা অদ্ভুত যদি ভৌগোলিক দিক থেকে এই প্রবণতাকে বিভাজন করে দেখতে শুরু করা হয়। সাহসের বদলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ চতুর হওয়ার চেষ্টা করে। হয়তো এটা বলা যেতে পারে যে এখনকার মানুষেরা অনেক বেশি চতুর। হয়তো তসলিমা এটাই বলতে চেয়েছেন। আসলে আমাদের কালচারটাই এমন— যেখানে দেখনদারিটা বেশি প্রাধান্য পায়। মন থেকে ভাল হওয়ার আগে বেশি দরকার হল দেখতে ভাল হওয়া। সমবেত দ্বিচারিতায় ভুগি আমরা সবাই।

রামগোপাল বর্মা
দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্যে আছেন অথচ কোনও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েননি এমনটা যদি ঘটে তা হলে ধরেই নেওয়া যায় ওই দম্পতির যৌন জীবন বহু দিন আগে পুরোপুরিই মরে গিয়েছে। আর যৌনতা ছাড়া বিয়ে হল দুই ‘অ্যাসেক্সুয়াল’ মানুষের সহাবস্থান। যে সহাবস্থানে বিয়ের আসল উদ্দেশ্যটাই মাটি হয়ে যায়। আমি তসলিমার সঙ্গে পুরোপুরি একমত যে আমাদের দেশে বিয়ের বাইরের সম্পর্ক অনেক বেশি। আর তার কারণা কামনাবাসনা অবদমিত থেকে যাওয়া।

প্রীতীশ নন্দী
বিয়ে আর পরকীয়া দুটোই আমার সমান ভাবে পছন্দের। প্রেম যত বেশি ছড়িয়ে দেওয়া যায় ততই ভাল। আমার স্ত্রী ও গার্লফ্রেন্ড—দু’জনেরই অনুমতি আছে জেনেই এই মন্তব্যটা করলাম। পরকীয়া মানে নতুন কোনও শৃঙ্গ জয় নয়। পরকীয়াও নিখাদ প্রেম। আর ভারতীয় পুরুষেরা সত্যিকারের প্রেমিক। সেই জন্যেই আমাদের এত প্রেমের গল্প, এত প্রেমের গান, এত প্রেমের কবিতা...। পাশ্চাত্যে প্রেম আর যৌনতা নিয়ে কতকগুলো বদ্ধমূল, একঘেয়ে ধারণা আছে। আমরা অনেক সহজে খুব স্বতঃস্ফূর্ত ঝুঁকি নিতে পারি। আমাদের কাছে পরকীয়া হল বিয়ের ‘সাইড এফেক্ট।’ ভারতীয় পুরুষেরা পাশ্চাত্যের পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি যৌনতাময়। ওরা শুধু তুঙ্গ যৌন মুহূর্তটাই খোঁজে। আমরা জানি ‘ফোর প্লে’র খুনসুটিও। চেহারার থেকেও যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল মস্তিষ্ক। তার জন্যই উডি অ্যালেনের প্রেমে পড়েন স্কার্লেট জোহানসন। আর্থার মিলারের সঙ্গে সম্পর্ক হয় মেরিলিন মনরোর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.