তাই প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটির চেয়ে প্রসেনজিৎ-রচনা জুটি এখানে...
প্রসেনজিৎ: ...বললাম তো, রচনার মধ্যে লাস্যর চেয়ে ঘরোয়া, পাশের বাড়ির দিদি-বৌদির ইমেজটা অনেক বেশি। ঋতুপর্ণা সে দিক দিয়ে স্টার, তারকা।
আচ্ছা, অনুষ্ঠানের ফরম্যাটটা কী রকম?
রচনা: এটা গেম শো। অনেকগুলো রাউন্ড থাকবে। ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘শুভদৃষ্টি’, ‘সপ্তপদী’...মানে বিয়ের ওই সমস্ত লোকাচারের নামেই রাউন্ড। আর এমন ভাবে খেলাগুলো হবে, যাতে বিবাহিত জীবনের প্রতিদিনের ক্লান্তির হাত থেকে স্বামী-স্ত্রী অন্তত কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি পায়। অল্প সময়ের জন্য হলেও তারা যেন, ফের ফিরে যেতে পারে সদ্য বিয়ের সেই পুরনো জীবনে। প্রেমে।
কিন্তু এই গেম শো ঘিরেই কী রকম একটা মিউজিক্যাল চেয়ার রাউন্ড হয়ে গেল না!
রচনা: মানে? বুঝলাম না।
এই যেমন টিভিতে এ বার আপনি ‘দিদি’ থেকে হয়ে গেলেন ‘বউদি’। থাকছেন প্রসেনজিতের পাশটিতে। অথচ কিছু দিন আগেও ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ ছিলেন আপনি। সেই জায়গায় এখন এসেছেন একদা সত্যিকারের ‘বউদি’ দেবশ্রী রায়। ‘দিদি’র জায়গাটা ছেড়ে দিতে একটু একটু কষ্ট হচ্ছে, রচনা?
রচনা: একদম না।
প্রসেনজিৎ: ব্যাপারটা কিন্তু অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে (হেসে)।
রচনা: ...ওই শো-এ এত সাফল্য পেয়েছি... সত্যি, টিভি এখন এত স্ট্রং মাধ্যম...জনপ্রিয়...ইনফ্যাক্ট, টিভির জন্যই ছেলে হওয়ার পরও আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি বলা যায়।
‘তুমি যে আমার’ অনুষ্ঠানের প্রোমোতে দেখা যাচ্ছে, স্বামী প্রসেনজিৎ, স্ত্রী রচনার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিচ্ছেন। সত্যি বলুন তো, আপনাদের বিবাহিত জীবনেও এমন কখনও হয়?
রচনা: আমি লিখে দিতে পারি, বুম্বাদা অর্পিতার কুঁচি ঠিক করে না। আর আমার বরও আমার শাড়ির কুঁচি কোনও দিন ঠিক করবে না। তবে হ্যাঁ, আমি কিন্তু জুসের গ্লাস এগিয়ে দিই... আমার মনে হয় অর্পিতাও সেটা দেয়।
প্রসেনজিৎ: আরে! আমিও জুস এগিয়ে দিতে পারি।
রচনা: ও হো হো, কী মহৎ স্বামী! দেয় না। কিন্তু দিতে পারে...
আচ্ছা, বিবাহিত জীবনে যৌনতা-সেক্স ব্যাপারটা আপনারা...
প্রসেনজিৎ: (জোরে হাসতে হাসতে) থামুন-থামুন। দশ-বারো বছর বিয়ে হয়ে গেছে এমন যে কোনও স্বামী-স্ত্রীর কাছে আপনি আগে যান তো। গিয়ে জিজ্ঞেস করুন...দেখুন কী বলে। দেখবেন সকলেরই ওই এক রা। স্ট্রেস...স্ট্রেস...স্ট্রেস...
রচনা: জানলা দিয়ে পালিয়েছে প্রেম, যৌনতা...(হাসি)
বেশ, তা হলে আপনাদের বিবাহিত জীবনে ঝগড়ার ভূমিকা কী রকম?
প্রসেনজিৎ: অসামান্য ভূমিকা... মানে চাওলা। দারুণ মহিমা, ...একেবারে চৌধুরী।
(দু’জনেই হাসতে হাসতে)
রচনা: আরে, ওটাই তো এখন আমাদের প্রেমের ভাষা। নর্মাল কোনও কথা হয় নাকি? সব কথাতেই ঝাঁঝ। যেন ওয়ার্ল্ড ওয়ার হচ্ছে।
প্রসেনজিৎ: আসলে বহু দিন ধরে
যাঁরা বিবাহিত জীবনযাপন করছেন, তাঁদের একজনকে ‘দেওয়াল’ হয়ে যেতেই হয়।
কিংবা ‘ফার্নিচার’...তাই তো?
প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ। আমার-অর্পিতার দশ বছর বিয়ে হল। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা, ঝগড়া হলে কে মেটায়? আরে! মনে থাকে ওই সব কে মেটায়! হয়তো আমিই বিবিএম করলাম... মিশুক, মানে আমাদের ছেলের অমুক জিনিসটা ঠিকঠাক পৌঁছেছে তো? কিংবা অর্পিতা দুম করে বলে বসল, জলের পাইপটা লিক করছে, আমি থাকব না, একটু দেখে নিও।
মানে পুরোপুরি ‘ম্যাটার অব ফ্যাক্ট’ সম্পর্ক... তা শোয়ে কী ভাবে এই সব রাগ অভিমান ভাঙবেন?
প্রসেনজিৎ: নানা বয়সের, নানা
চরিত্রের স্বামী-স্ত্রী আসবেন। কেউ
সদ্য বিবাহিত, কারও বিয়ে পঞ্চাশ পার। খেলার মধ্য দিয়েই দেখব
কারা কতটা নিজেদের চেনেন...অনেক মজা আছে।
আচ্ছা, বাস্তব-বিবাহিত জীবনে স্ত্রীর দিকে যদি উড়ে আসে এক পিস্ ‘অমল’ ঠাকুরপো, কিংবা স্বামীর কাছে ধেয়ে আসে ‘সিলসিলা’র রেখা। তখন?
রচনা: আমার স্বামীর জীবনে রেখা এলে, চেষ্টা করব নিজের পথ বেছে নিতে। নো কম্প্রোমাইজ। আমার স্বামী, মার্কেটিং-এ আছে। সারাক্ষণ বন্ধু-বান্ধব, নাইট পার্টি করে... আর আমি পুরোপুরি অন্য রকম। আসলে নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসটা যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ কোনও চিন্তা নেই।
আপনি কিন্তু কিছু বলছেন না প্রসেনজিৎ? জীবনে পার্শ্বচরিত্র এসে পড়লে কী করণীয়?
প্রসেনজিৎ: (হাসি) কী বলব!
বুঝেছি, তার মানে আপনি ‘কমার্শিয়াল’ ছবির পাশাপাশি ‘প্যারালাল’ ছবিও চালিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী, তাই তো?
প্রসেনজিৎ: (প্রচণ্ড হেসে) বিবাহিত জীবন মানে ‘কমার্শিয়াল’ ছবি, তাই তো? তা, তার সঙ্গে টুকটাক ‘প্যারালাল’ প্রেম থুড়ি ছবি চলতেই পারে। তাতে তো শরীর মন দুই-ই ভাল থাকে। তবে তা যেন বিবাহিত জীবনে কোনও ভাবে ছাপ না ফেলে।
তবে এটাও ঠিক, আমি জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি, সম্মান নেই, সম্পর্ক নেই, এমন করে দিনের পর দিন চলতে পারে না।
আবার অন্য প্রসঙ্গ। প্রসেনজিতের জীবনে নায়িকা হিসেবে রয়েছেন ঋতুপর্ণা, দেবশ্রী, শতাব্দী, ইন্দ্রাণী, রচনা... এ ছাড়া মুম্বইয়ের বিপাশা, বিজয়েতা, জুহি, ঐশ্বর্যা, ও দিকে দক্ষিণের রম্ভা। রচনা, আপনার কিন্তু কেবলই প্রসেনজিৎ! এ যেন বাঙালি জীবনেরই আরেক ছবি...‘এক পুরুষ কথা’
রচনা: আহা! টালিগঞ্জে নায়ক কোথায়? সেই তো বুম্বাদা, জিৎ, দেব... কিন্তু নায়িকার সংখ্যা দেখুন...
কেন? ঋতুপর্ণা তো আজও একের পর এক ছবি করে চলেছেন, একের পর এক নায়কের সঙ্গে...
রচনা: ওঁর ইমেজ আলাদা। আমার আলাদা। আমি একটু ঘরোয়া ধরনের। সবাই আমাকে চেনে। জানে বাচ্চাকে বড় করার জন্য, একটু গ্যাপ নিয়েছিলাম। অর্পিতাও তো বাচ্চাকে একটু বড় করে, তার পর কাজে ফিরেছে। বুম্বাদার সঙ্গে সোনার গয়নার বিজ্ঞাপনটা কী অসাধারণ করল! ‘বিয়ের কথা মনে আছে তোমার’ কথাটা কী সুন্দর করে বলে।
বিজ্ঞাপনের মতো সত্যি সত্যিই আপনি বলেন অর্পিতাকে শুভদৃষ্টি হচ্ছে, তাই কথা বলতে পারছেন না...
প্রসেনজিৎ: অ্যাই এটা কী প্রশ্ন...
আচ্ছা, বিয়েকে এক কথায় আপনি কী বলবেন?
একটা জোক বলি এক স্বামীর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে... পা কাটা গেছে... খুব রক্ত বেরিয়েছে... কোনও রকমে ফোন করে স্ত্রীকে বলছে, “দ্যাখো, আমার অবস্থা খুব খারাপ। ‘রিনা’ কোনও মতে হসপিটালে নিয়ে এসেছে আমাকে। আমি হয়তো বাঁচব না।” এই না শুনে স্ত্রী বলল, “রিনা কে?”
বুঝতে পারছেন, স্ত্রীদের ধরনটা কী রকম হয়। জোকস অ্যাপার্ট, ‘দোসর’-এর মতো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফিরে আসা ক’টা হয় বলুন... ক’টা হয়?
রচনা: জোকটা মোটেই ভাল নয় (হাসি)। অন্য দিকে ঘোরান ব্যাপারটা।
আচ্ছা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোন ডাকটা আপনাদের শুনতে ভাল লাগে? ‘ওগো শুনছ’? শো-তে কি ডাকনাম বা গোপন ডাক নিয়ে কোনও রাউন্ড থাকছে?
রচনা: এখনই সবটা বলব না। তবে প্রবাল আমাকে ‘লুনা’ বলেই ডাকে। ওটাই আমার ডাকনাম।
প্রসেনজিৎ: অর্পিতা আমাকে ‘দাদা’ বলে। ইনফ্যাক্ট আমার বাবাও অর্পিতাকে মাঝে মাঝে বলে, ‘তোমার ‘দাদা’কে বলে দিও’ (হাসি)।
শো-টা শুরু হচ্ছে কবে থেকে?
রচনা: ২৪ ফেব্রুয়ারি। রাত দশটার স্লটে। জি বাংলায়।
একটা ব্যাপার পরিষ্কার, সে সৌরভ-ডোনাই হোক, প্রসেনজিৎ-অর্পিতাই বলুন... বিবাহিত সম্পর্ক মানেই গতানুগতিক ‘এই তো জীবন কালীদা’। তবুও জীবন কাটছে বহাল তবিয়তে। রহস্যটা কী?
প্রসেনজিৎ: ‘কালীদা’ খুব ইম্পর্ট্যান্ট চরিত্র। বোরিং জীবন বাঁচানোর একমাত্র লোক। তবে বিবাহিত জীবনে একটা এক্স-ফ্যাক্টর কাজ করে। হতে পারে সেটা সন্তান, হতে পারে কাজ, অভিমান... কিছু একটা থাকে। সবচেয়ে যেটা দরকার সেটা হল কমফর্ট। তার সঙ্গটা সুখ দিচ্ছে কি না..
রচনা: অনেকটা পুরনো জুতোর মতো। পুজোয় নতুন জুতো ভাল লাগে, কিনিও, হাঁটতে গেলে ফোসকাও পড়ে। কিন্তু হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখতে হলে পুরনো জুতোটাই আরামের। কী ঠিক বললাম? স্বস্তিটাই আসল।
দীর্ঘ দিন বিবাহিত জীবন কাটালে স্বামী-স্ত্রী নাকি ভাই-বোনের মতো হয়ে যায়! অনেকে বলে প্রতিবেশী। অনেকে বলে, বেঁচে থাকতে হলে এক জনকে হতেই হবে বোবা-কালা।
(হেসে)
রচনা: দেখতেও এক রকম হয়ে
যায়। ভাইফোঁটা, রাখিও চলতে
পারে।
প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে মজা-মশকরা আছে ঠিকই, কিন্তু পার্টনারশিপ বলতে গেলে ওটাই আগে। সচিন অবসরের সময় বলল না, স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গে পার্টনারশিপই ওঁর সেরা।
আমার প্রিয় দম্পতি শর্মিলা-পতৌদি।
রচনা: আমারও।
যা-ই বলুন, ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ খাওয়া মানেই প্রেমের মৃত্যু, মানেন তো?
রচনা: না, মৃত্যু ঠিক বলব না। বলব প্রেমের যে উথাল-পাথাল ব্যাপারটা থাকে, সংসারের আগুনে জ্বাল দিতে দিতে....
প্রসেনজিৎ: ...আসলে ফর্মটা পাল্টে যায়। অনেকটা ওই জ্বাল দিতে দিতে, দুধ মরে ক্ষীর, ক্ষীর মরে সন্দেশ...
রচনা: বেশ বেশ, ‘তুমি যে আমার’ মনের কথাই বলেছ। |