ধর্ষকদের কাউন্সেলিং হোক, কথায়-নাটকে দাবি পড়ুয়াদের
র্ধমানের নবাবহাটে গণধর্ষণের ঘটনার কিছু দিন পরে প্রশাসন চুপ করে গেল কেন?
একটি হিন্দু ছেলে যদি কোনও মুসলিম মেয়ের প্রেমে পড়ে তাহলে সেটা ‘অন্যায়’ কেন? প্রেমে জাতিভেদ মানি না।
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ মানেই কি শুধু ভালোবাসার দিন? মোটেও না। এই দিন ত্যাগের দিন।
ধর্ষকদের গ্রেফতারের পরে তাঁদের কাউন্সেলিং করা হোক।
গ্রাম ও শহরের মধ্যে ভেদাভেদ কেন? গ্রাম ও শহরের ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে বসিয়ে আলোচনা হোক।
ফেসবুক, টুইটারের কোনও পোস্ট নয়। কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের পোস্টার নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এই কথাগুলিই বললেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কিছু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, ও গৃহবধূ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নাটক। ছবি: প্রদীপ আদক।
সংগঠনের দশ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল ‘এবং আলাপ’ নামে একটি সংগঠন। সহ আয়োজক ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ স্টাডিজ সেন্টার। সেই অনুষ্ঠানেই বীরভূম, বর্ধমান, গোসাবা থেকে দল বেঁধে এসেছিলেন নানা বয়সের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও গ্রামের সাধারণ মহিলারা। আলোচনায় গোসাবার বিজয়নগর আদর্শ বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক সুকুমার পয়রার কথায় উঠে এল গ্রামের স্কুলে ‘ড্রপ আউট’ বেড়ে যাওয়ার কথা। তাঁর অভিযোগ, “শহর থেকে গ্রামের স্কুলে যাঁরা চাকরি করতে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই স্কুলছাত্রীদের নাবালিকা বিবাহ হতে দেখেও চুপ থাকছেন।” বর্ধমানের এমইউসি মহিলা কলেজের ভূগোলের শিক্ষিকা পারমিতা চৌধুরী জানালেন, গ্রামের মহিলা কলেজগুলিতে জীবনশৈলী নিয়ে ছাত্রীদের সচেতন করার সময়ে শিক্ষিকারা অনেক সময়েই কলেজের পুরুষ শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবারের এই অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দেন বিশ্বভারতী থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা। শিল্পী সঞ্চয়ন ঘোষের তত্ত্বাবধানে নিজেদের ভাবনাকে তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। হলের ভেতর ও বাইরে তাঁদের আঁকা কার্টুনে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা-সহ বিভিন্ন বিষয় ফুটে ওঠে। অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্যোক্তাদের পক্ষে শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত জানান, ২০০২ সালে সংগঠনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন কলেজে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জীবনশৈলীর বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। অনুষ্ঠানের শেষ দিকের আলোচনায় উঠে আসে ভিন ধর্মে প্রেম, বিয়ে, মেয়েদের নিরাপত্তা-সহ বেশ কিছু বিষয়। বর্ধমান থেকে আসা এক কলেজ ছাত্রী পাল্টা জানান, “বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন। তাই বিয়ের ব্যাপারে বাবা-মায়ের মতই হবে আমার মত।”
অনুষ্ঠানের মাঝে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অভিনয় করেন ‘অস্ত্রে-নিরস্ত্রে’ নামে একটি নাটক। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি তিনটি ভাষাই ব্যবহৃত হয় এই নাটকে। নাটকের শুরুতে লাঠির অস্ত্রে পরাজিত হল গ্রামের মানুষ। দাদা ও ভাইয়ের চোখের সামনে ধর্ষিতা হয় বোন। প্রতিবাদে গ্রামের মেয়েরাই হাতে লাঠি তুলে নেন। সমবেত প্রতিরোধে হার মানে ধর্ষকের দল। কিন্তু শেষে আহত ধর্ষকদের চরম শাস্তি দেওয়ার বদলে গ্রামের মেয়েরাই তাঁদের সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। নাটকের পরিচালক কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সন্দীপ মণ্ডলের কথায়, “নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনেকেই আগে অভিনয় করেননি। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই নাটক সর্বভারতীয় স্তরে প্রশংসা পেয়েছে।” এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে থাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষে তাঁদের অনেককেই বলতে শোনা গেল, “জেলার ছেলেমেয়েদের সমস্যা নিয়ে এর আগে আমাদের তেমন কোনও ধারণাই ছিল না। আলোচনা থেকে আমরাও অনেক কিছু শিখতে পারলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.