বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর বার্তা দিয়ে তোপ বিরোধীদের। জবাব যেন নরেন্দ্র মোদীকেও।
শনিবার দুর্গাপুরে এক ঢিলে অনেক পাখি মারলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্রিগেডে তৃণমূলের সভার পর থেকে বিরোধীরা অভিযোগ করেন, জোটের দরজা খোলা রাখতেই মমতা বিজেপির প্রতি যথেষ্ট সরব হচ্ছেন না। এর পরে মোদী ব্রিগেডে এসে তিন লাড্ডুর তত্ত্ব বলে যাওয়ার পরে এই অভিযোগ আরও জোর পায়। শনিবার দুর্গাপুরে দলের কর্মিসভায় বিজেপিকে আক্রমণ করে যেন তারই জবাব দিলেন মমতা। বোঝাতে চাইলেন, মোদীর দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলছেন তিনি। ভিডিও-র মাধ্যমে চায়ের দোকানে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারকে ‘ঠুনকো রাজনীতি’ বলার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ভোটে সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিজেপিকেও হারাতে হবে।
কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি জোট গড়বেন কি না, ব্রিগেডের বক্তৃতায় সে প্রশ্ন কার্যত এড়িয়ে গিয়েছিলেন মমতা। ‘দিল্লিতে রাজতন্ত্র চাই না’, ‘দাঙ্গার সরকার চাই না’, এমন কিছু কৌশলী মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ দিন কিন্তু তিনি অনেক বেশি স্পষ্ট বক্তা। শুধু যে বিজেপির সঙ্গেই দূরত্ব বাড়ালেন তা-ই নয়, মোদীকেও পরোক্ষে নিশানা করলেন। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর ‘চায়ে পে চর্চা’ কর্মসূচিকে আক্রমণ করে বললেন, “চায়ের দোকানে আড্ডা মারুন। তবে বিজেপির মতো নাটক করবেন না! ও সবে বিশ্বাস করি না। নির্বাচনের আগে এ সব করা মানে ঠুনকো রাজনীতি, স্বার্থপরতার রাজনীতি।”
ব্রিগেডের সভায় মোদীর বক্তব্য ছিল, রাজ্যে তৃণমূল আর দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে বাংলার মানুষের দ্বিগুণ লাভ হবে। আর মাথায় তো রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় রয়েইছেন। এ দিন মোদীর সেই বার্তা উড়িয়ে তৃণমূল নেত্রীর জবাব, “সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে হারাতে হবে। বাংলায় যত ভাল করবেন, তত দিল্লিতে আমাদের জোর বাড়বে, বাইরে সম্মান বাড়বে।”
তৃণমূল কেবল এ রাজ্যেই সীমাবদ্ধ, মোদীর এই ইঙ্গিতকেও এ দিন খারিজ করেন মমতা। তিনি বলেন, “তৃণমূলকে জাতীয় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিল্লিতে গিয়ে বাংলার অধিকার ছিনিয়ে আনব আমরা। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।” একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আপনাদের চিন্তা নেই। আমি বাংলার মাটি ছাড়ছি না।” লোকসভায় অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা, অরুণাচল, হরিয়ানা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডে তৃণমূলের প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আরও কয়েকটা রাজ্যে লড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনই বলছি না।” দিল্লিতেও তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা।
মমতা এ দিন বিজেপি এবং মোদীকে নিশানা করায় পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “মমতা তো চমকের রাজনীতি করেন। রাজ্যে মোদীর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন।” একই সুরে দিল্লিতে বিজেপি মুখপাত্র সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ বলেন, “চায়ের মজলিশে আড্ডা কোনও নতুন বিষয় নয়। এটি বহু দিন ধরে চলে আসছে। নরেন্দ্র মোদী সেটিকেই সময়োপযোগী রূপ দিয়ে প্রচারের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু মমতা উন্নয়ন ও প্রশাসন, দুটো ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। তাই তিনি ভয় পেয়েছেন।”
তৃণমূলের ভাবমূর্তির প্রশ্নেও মমতা এ দিন কর্মীদের বার্তা দেন। তৃণমূলকে ‘গরিবের পার্টি’ বলে উল্লেখ করে এবং কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপিকেও বিঁধে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আমাদের সামর্থ্য সীমিত। কংগ্রেস ও বিজেপি প্রচারের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। সে জন্যই ওদের ইনকাম করতে হয়! না হলে এত টাকা আসবে কী করে?” দুর্নীতির প্রশ্নে সিপিএমকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতা। বামফ্রন্টের আমলেই একের পর এক চিটফান্ডের রমরমা হয়েছিল মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্যের ভাঁড়ারে অর্থ নেই। তবু রাজ্য সরকার সারদা-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই প্রতারিত
২ লক্ষ গরিব মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।” আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যে আরও চার লক্ষ লোককে
১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ
দিয়ে দেওয়া হবে বলেও এ দিন আশ্বাস দেন মমতা। |