কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জট কাটাতে কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় ১০০ একর জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদও প্রকল্পের প্রথম পর্বের ছাড়পত্র দিল। বাড়তি জমি যেটুকু লাগবে, নিজেদের উদ্যোগেই তাঁরা তা কিনে নেবেন বলে এ দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বর্ধমানের কাটোয়ায় এনটিপিসি-র ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ায় আর কোনও বাধা থাকল না।
শনিবার দিল্লিতে এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদের বৈঠক বসেছিল। ঠিক ছিল, কাটোয়া প্রকল্পের জন্য ধাপে ধাপে যা যা করণীয় তার জন্য পরিচালন পর্ষদের সম্মতি চাওয়া হবে এ দিনের বৈঠকে। সংস্থা সূত্রের খবর, কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের যে বিস্তারিত রিপোর্ট (ডিপিআর) পর্ষদের কাছে পেশ করা হয়েছিল, তাতে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। শুধু তাই নয়, অধিগৃহীত জমি বাবদ পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের যে টাকা পাওনা রয়েছে, তা-ও মিটিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে পরিচালন পর্ষদ। বাড়তি জমি লাগলে এনটিপিসি সরাসরি তা কিনে নেবে বলেও এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এনটিপিসি বরাবরই বলে এসেছে, জমি ও কয়লার সমস্যা মিটে গেলে কাটোয়া প্রকল্পের কাজে হাত দিতে তাদের বেশি সময় লাগবে না। প্রায় আড়াই বছর টালবাহানার পরে সরকার বাড়তি জমির ব্যবস্থা করতেই এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদ প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিয়ে প্রমাণ করল রাজ্যের এই প্রকল্পটি তাদের কাছেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়তি জমি কেনার জন্য পরিচালন পর্ষদের অনুমতি পাওয়াটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন এনটিপিসি কর্তাদের একাংশ। এর আগে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনার ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানাত। তাদের যুক্তি ছিল, জমি কেনার কাজে সংস্থার কোনও অভিজ্ঞতা নেই। সরকারকে পাশে না পেলে জমি কেনার জন্য মাঠে নামাটা উচিত হবে না। এই কারণেই কাটোয়ায় জমি বিক্রির ব্যাপারে মালিকদের সম্মতিপত্র পাওয়ার পরেও সংস্থা জমি কিনতে এগোয়নি। এখন ওই প্রকল্পের জন্য সরকারই প্রায় ১০০ একর জমি এনটিপিসি-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও যদি কিছু জমি লাগে, তা সংগ্রহের ব্যাপারেও সরকারি সহায়তা মিলতে পারে বলে মনে করছেন এনটিপিসি কর্তাদের অনেকেই।
সংস্থা সূত্রের খবর, এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ সবার আগে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র চাইবেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কাটোয়ায় নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য সংস্থা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র চাওয়ার অনুমোদনও এ দিন দিয়েছে পরিচালন পর্যদ। এক বিদ্যুৎ কর্তা জানান, নির্মাণ-সংস্থা বাছাই হয়ে গেলে পরের পর্বে পরিচালন পর্ষদের প্রকল্পে বিনিয়োগ সংক্রান্ত চূড়ান্ত অনুমোদন চাওয়া হবে। কিছু দিন আগেই কলকাতায় এসে এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তাঁরা চলতি আর্থিক বছরের (২০১৩-’১৪) মধ্যেই বাজারে নির্মাণ সংস্থা বাছাই করতে দরপত্র চাইবেন।
কাটোয়া প্রকল্পের বিষয়ে এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদ যে ছাড়পত্র দিয়েছে, সে খবর এ
দিনই রাজ্যের কাছে পৌঁছেছে। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, “কাটোয়া প্রকল্পের জন্য প্রথম ধাপে যে সব ছাড়পত্র দরকার ছিল, তার সবই দিয়েছে সংস্থার পরিচালন পর্ষদ।” |