মনমোহনী অর্থনীতির জবাব মোদীনমিক্স
ংসদে মনমোহন সিংহ সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটের ঠিক আগে দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেল। মনমোহন-চিদম্বরমের অর্থনীতি বনাম নরেন্দ্র মোদীর অর্থনীতি। ‘মনমোহনমিক্স’ বনাম ‘মোদীনমিক্স’।
কিছু দিন আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর অর্থনীতির জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পি চিদম্বরম। আজ রাজধানীতে মোদীর নিজস্ব অর্থনৈতিক তত্ত্ব পেশ করেন অরুণ জেটলি। মনমোহন-চিদম্বরমকে আক্রমণ করে জেটলির যুক্তি, শুধু পাণ্ডিত্য থাকলেই হয় না। প্রয়োজন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত আর তার যথাযথ রূপায়ণ। সেটাই মোদীর সাফল্যের মূলমন্ত্র। ইউপিএ জমানায় সনিয়া গাঁধী সকলের উন্নয়নের কথা বলেছেন। জেটলি জানান, মোদীনমিক্সের মূল কথা, ‘সকলের জন্য অর্থনীতি, সকলের জন্য সুশাসন’।
মোদীকে কটাক্ষ করে চিদম্বরম বলেছিলেন, মোদীর অর্থনীতির জ্ঞান ডাকটিকিটের পিছনে লিখে ফেলা যায়। আজ জেটলির জবাব, “ভারতের মতো দেশে অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। চিফ এক্সিকিউটিভ দিয়ে বৃহত্তম গণতন্ত্র পরিচালনা করা যায় না। দেশের প্রয়োজন ভাল নেতা। অর্থনীতির জ্ঞানসম্পন্ন সিইও নয়।”
কিন্তু ‘মোদীনমিক্স’-টা কী? সমীর কোছারের লেখা ওই নামেরই একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ জেটলির ব্যাখ্যা, শুধুই অর্থনীতির তত্ত্বের কচকচানি নয়। বাস্তব প্রয়োগ। প্রথা ভাঙা চিন্তাভাবনা এবং সাহসী পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে গোটা আমলাতন্ত্রকেই নিজের সুরে বেঁধে ফেলা। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর রাজ্যে নরেন্দ্র মোদীই শেষ কথা বলেন। তাঁর সিদ্ধান্তই যাতে শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে, তা নিশ্চিত করেন। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা থেকে ই-পরিষেবা, সব বিষয়েই নতুন চিন্তাভাবনা করেই মোদী গুজরাতের চেহারাটা পাল্টে ফেলেছেন বলে জেটলির যুক্তি। এটাই মোদীর ‘ইনক্লুসিভ ইকনমিক্স, ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স’। বইয়ের লেখক সমীর কোছার বলেন, “মোদী মনে করেন, সোভিয়েতের আদলে সমাজতন্ত্র নয়, আবার পাশ্চাত্যের আপাদমস্তক পুঁজিবাদও ভারতের দরকার নেই। এ দেশের সমস্যা অনুযায়ী সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে।”
উদাহরণ হিসেবে জেটলির ব্যাখ্যা, গুজরাত এমন একটা রাজ্য, যেখানে বরাবরই জলের অভাব। কিন্তু সেই রাজ্যেই কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির হার দশ শতাংশের উপরে। কৃষিতে জলের অভাব দূর করতে মাইলের পর মাইল খাল কাটা হয়েছে। তার পর সেই খাল ঢেকে দেওয়া হয়েছে সৌর-প্যানেল দিয়ে। গরমে জল বাষ্পীভূত হয়ে যায়নি। আর সৌর বিদ্যুৎও তৈরি হয়েছে। দেশে অনেক উপকূলবর্তী রাজ্য রয়েছে। কিন্তু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী গোটা উপকূল জুড়ে বন্দর গড়ে তুলেছেন। রাজ্যের শিল্পায়নে ফায়দা মিলেছে। মৎস্যজীবীরাও বিকল্প রুটিরুজির সন্ধান পেয়েছেন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, শিল্প ও কারখানা। যা গুজরাতের মুখটাই বদলে দিয়েছে। তাতে সাহায্য করতে গড়ে তোলা রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো।
জেটলি জানিয়েছেন, আমদাবাদের ভৌগোলিক সীমানা বাড়িয়ে আরও ফাঁকা জমি শহরের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাই জমি সহজলভ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে গুজরাতে বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। জেটলি বলেন, “অর্থনীতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হল কোন পথে এগোতে হবে বুঝে সকলকে সেই পথে টেনে নিয়ে যাওয়া। মনমোহন তা পারেননি। তাই অর্থ মন্ত্রকের বদলে সনিয়া গাঁধীর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
আর এই জায়গাতেই মনমোহন সিংহ ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলছেন জেটলি। মনমোহন সিংহের থেকে নরসিংহ রাওকে এগিয়ে রাখছেন জেটলি। তাঁর মতে, ইতিহাস রাওয়ের প্রতি সুবিচার করেনি। কংগ্রেস এমন একটা দল, যারা বরাবরই সরকারি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী। তাই সাত ও আটের দশকে আর্থিক সংস্কারের সুযোগ নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী হয়েও নয়ের দশকে সংস্কারের পথে হেঁটেছিলেন রাও। বাজপেয়ীর পক্ষে সংস্কারের কাজ কঠিন ছিল না। কারণ তাঁর দল বরাবরই আর্থিক সংস্কারে বিশ্বাসী। নরসিংহ রাও কিন্তু প্রথা ভাঙার সাহস দেখিয়েছিলেন। নিজের বাজেট পেশ করতে গিয়ে চিদম্বরম এই মোদীনমিক্স-এর জবাব দিতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.