বিধানসভা রেখেই রাষ্ট্রপতির হাতে দিল্লি
খনই ভোট নয় দিল্লিতে। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অরবিন্দ কেজরীবাল ইস্তফা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি শাসনের নির্দেশ দিল কেন্দ্র। জিইয়ে রাখা হল বিধানসভা। ১৯৯৩ সালে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরে এই প্রথম বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল দিল্লিতে।
জন-লোকপাল বিল পেশে ব্যর্থ হয়ে কেজরীবাল ইস্তফা দিয়েছেন কাল। আজ সেই চিঠি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পাঠিয়ে দেন দিল্লির উপরাজ্যপাল নজীব জঙ্গ। বিধানসভা না ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ-সহ। রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মেনে নেয় জঙ্গের সুপারিশ। এতে বিজেপি-র সরকার গড়ার রাস্তা খোলাই রইল। যদিও কেজরীবাল তথা আম আদমি পার্টি (আপ) চাইছিল দ্রুত নির্বাচন। বিজেপি-র তাতে খুব একটা আপত্তি না। কিন্তু কংগ্রেসের সায় ছিল না এতে। কারণ, তিন বারের শাসক দলটির বিধায়ক এখন মোটে ৮ জন। এখনই আবার ভোট হলে এটুকু শক্তিও মুছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পূর্ণমাত্রায়। কেজরীবালের দাবি, সেই ভয়েই এখন নির্বাচনের পথে হাঁটতে চাইল না কংগ্রেস। তাই জঙ্গের এই সুপারিশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কংগ্রেস ভোট চাইছে না বলেই এখন বিধানসভা ভাঙলেন না উপরাজ্যপাল। অথচ, নির্বাচিত আপ সরকারের সুপারিশ মানতে বাধ্য ছিলেন উপরাজ্যপাল।”
সরকার চালানোর দায় থেকে মুক্ত হয়ে এ বার কী করবেন কেজরীবাল? আজ এক সাক্ষাৎকারে প্রত্যাশিত উত্তরটাই দিয়েছেন তিনি, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই।” দুর্নীতিবাজ ও পরিবারতন্ত্রের ধারক-বাহকরা যাতে লোকসভা ভোটে নির্বাচিত হতে না পারেন, সেটাই তিনি নিশ্চিত করতে চান বলেও জানালেন। অর্থাৎ নিজের চেনা গণ্ডিতে ফিরে আম-আদমি কেজরীবালের নজরে এখন লোকসভা ভোট। আজ সকাল থেকেই এ নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন কেজরীবাল। রাজনীতি বিষয়ক কমিটি একটি বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত নেয়, আজই লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজাবে দল। সেই মতো সাংবাদিক বৈঠক করে দল জানায়, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করবে দল। প্রথম জনসভাটি হবে হরিয়ানায়। আজ আপের রাজনৈতিক কমিটির সদস্য সঞ্জয় সিংহ বলেন, “হরিয়ানার ওই জনসভা থেকেই লোকসভা নির্বাচনে দল কী ভাবে এগোবে সেই দিশা দেখাবেন কেজরীবাল।” আপ মনে করছে, দিল্লির পাশাপাশি কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানাতেও ভূপেন্দ্র হুডা সরকারের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাকে প্রচারের মূলধন করে এগোলে নির্বাচনে ভাল ফল করতে পারে আপ শিবির।
আপ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, কেজরীবালের নেতৃত্বেই লোকসভা নির্বাচনে লড়বে দল। দলের মনোবল বাড়াতে নিজেও লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে পারেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বিজেপি ও কংগ্রেসের অভিযোগ, কেজরীবাল নিজেই চাইছিলেন, লোকসভা ভোটের আগেই প্রশাসকের জামা ছেড়ে দ্রুত বিরোধী ভাবমূর্তিতে ফিরে যেতে। জন-লোকপাল বিল সেই সুযোগ করে দিয়েছে তাঁকে।
দিল্লির ধাঁচে লোকসভা নির্বাচনেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদকেই যে কেজরীবাল মূল অস্ত্র করতে চলেছেন তা আজ ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে এ দিনও কংগ্রেস-বিজেপি-র পাশাপাশি মুকেশ অম্বানির বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ তুলেছেন, মুকেশের বিরুদ্ধে মামলা করাতেই তাঁর নির্দেশে কংগ্রেস-বিজেপি এক জোটে তাঁর সরকার ফেলে দিয়েছে। কেজরীবালের দাবি, প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের সম্পদ। তা তোলার জন্য ইউনিটপিছু (মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) খরচ পড়ে ১ ডলারের কম। অথচ তার জন্য সরকার মুকেশের সংস্থাকে দিচ্ছে ৪.২ ডলার। ১ এপ্রিল থেকে সেটাই ৮.৪ ডলার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। গ্যাসের দাম এ ভাবে বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে মুকেশের সংস্থা। কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন ব্লক থেকে যথেষ্ট গ্যাস না তুলে তারা কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে। ভুগছেন দেশবাসী। আগামী এপ্রিল থেকে পরিবহণ, কৃষি সব ক্ষেত্রেই খরচ বাড়বে আরও, দুর্দশা বাড়বে আম আদমির। এই দুর্নীতি নিয়ে রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী কী ভাবছেন, তা জানতে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে তাঁদের চিঠি লিখবেন কেজরীবাল। যদিও কংগ্রেস নয়, আপ নেতৃত্বের চোখে মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চলেছে বিজেপি-ই।
আপ নেতা যোগেন্দ্র যাদবের কথায়, “কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছেন মোদী। ফলে তিনিই মূল আক্রমণের নিশানা হতে চলেছেন।” দলের পর্যবেক্ষণ, গত দেড় মাসে প্রশাসনে থেকে আপ-এর জনপ্রিয়তার গ্রাফ অনেকটাই নিম্নমুখী হয়েছিল। তার মুখ তুলতে ফের পথে নামছে আপ। কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে এখন থেকেই ৩৩২টি লোকসভা কেন্দ্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন জেহাদ ‘ঝাড়ু অভিযান’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সরকার গড়ার রাস্তা বন্ধ হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র চারটি আসন কম নিয়ে বিজেপি এখন কী করবে? তাদের পরিকল্পনা হল ধৈর্য ধরা। আপের বহিষ্কৃত বিধায়ক বিনোদ বিন্নি, জেডিইউ-এর শোয়েব ইকবাল ও নির্দল রামবীর শৌকিনের পাশাপাশি যদি কংগ্রেস এবং আপ বিধায়কদের একটি বড় অংশ বেরিয়ে এসে বিজেপি-কে সমর্থন করে, একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই সরকার গড়ার ঝুঁকি নেবে দল। বিজেপি নেতা হর্ষবর্ধন আজ ফের বলেন, “দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সরকার গড়ার দৌড়ে আমরা আদৌও নেই। কেননা প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়ক আমাদের কাছে নেই। এবং দল কোনও বিধায়ক কেনাবেচাতেও যেতে চায় না।” বিজেপি-র এই যুক্তিকে কটাক্ষ করে আপ নেতা যোগেন্দ্র বলেন, “কাল তো বিজেপি-কংগ্রেস মিলে আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তারাই কেন এক জোট হয়ে সরকার গড়ছে না?”
রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে কী বলছে কংগ্রেস? দলের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “এখনই দিল্লিতে ফের ভোট হওয়া ঠিক নয়।” যদিও কেন ঠিক নয়, তার উত্তরে প্রকাশ্যে জানানোর মতো স্পষ্ট কোনও যুক্তি নেই কংগ্রেসের কাছে। তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা স্বীকার করছেন, লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোট হলে কংগ্রেস মুছে যেতে পারে দিল্লি থেকে। মাস ছয় পরে ভোট হলে হারানো জমি উদ্ধারের লড়াইয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের তরুণ সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলী হারানো জমি উদ্ধারে কিছুটা সময় পাবেন।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতারা তলে তলে আপ নেতাদেরও এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, এখন তাঁদের সামনেও বড় চ্যালেঞ্জ হল লোকসভা ভোট। কেজরীবাল যদি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তা হলে দেশ জুড়ে আপ-এর প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করবেন কী ভাবে? তাই লোকসভা ভোট হয়ে যাওয়ার পর দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হলো তাতে আপ-এরই সুবিধে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আপ বা কংগ্রেসের কিছু বিধায়ক বেরিয়ে গেলে বিজেপি স্থায়ী সরকার গড়ার সুযোগ পাবে। সে দিক দিয়ে দেখলে এখনই ভোট হলে সেটা আপ-এর পক্ষে সুবিধাজনক হত। সরকারে ইস্তফা দিয়ে কেজরীবাল তাই সেই সুপারিশই করেছিলেন। কিন্তু উপরাজ্যপালের বিধানসভা জিইয়ে রাখার সুপারিশের পিছনে কংগ্রেসেরই কৌশল দেখতে পাচ্ছেন কেজরীবালরা।
বিধানসভা জিইয়ে রাখায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এখনই ফের ভোট করা মুশকিল। যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন করিয়ে দেওয়াটা কমিশনের পক্ষে সুবিধাজনক হত। কারণ ভোটার তালিকা থেকে সব কিছু প্রস্তুতই রয়েছে। এ ছাড়া, একই দিনে দিল্লিতে দুই ভোট হলে জনগণের অর্থও বাঁচত অনেকটা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.