ডায়েটিংয়ের টিপ্স নিতে টালিগঞ্জ থেকে বাগবাজারে এসেছেন শ্রীতমা সেনগুপ্ত। কিন্তু গরম গোকুলপিঠের টান এড়াতে পারলেন কই? কর্মশালা শুরুর আগে তাড়াতাড়ি সাবাড় করতে গিয়ে জিভ পুড়িয়ে ফেলে বিতিকিচ্ছিরি দশা বেচারির।
সল্টলেকের চক্রবর্তী পরিবারের অবশ্য তাড়াহুড়ো নেই। শীতশেষের আমেজে আয়েস করে ঘুরে ঘুরে ছো নাচের মুখোশ-পটের ছবি দেখা, হ্যান্ডমেড পেপারের টুকিটাকি উপহার-গয়না কিনে ফিশফ্রাই ও নলেন গুড়ের রাবড়ির কাপ হাতে ব্যান্ডের গানে বুঁদ।
শনিবার, দুপুর থেকে সন্ধে-রাত বাগবাজারের পুজোর মাঠের ছবিটা এমনই। এ মাঠে ডাকের সাজের মা দুগ্গা এক বার না দেখলে এখনও কলকাতার পুজো দর্শনে ফাঁক থেকে যায়। সেই মাঠেই বাঙালির এ কাল-সে কালের সোনার খনি উজাড় করে উৎসবের পট সেজে উঠল। |
সুচিত্রা সেনের অদেখা সব ছবির গ্যালারিতে ঢুকলেই চক্ষু ছানাবড়া! কাছেই খাস বহরমপুরের মেগাসাইজ ছানাবড়াও মজুত। শুক্র, শনি--- দু’দিনই রকমারি আকর্ষণে কলকাতার রক্তে টান দিয়েছে ‘দ্য টেলিগ্রাফ বাগবাজার উৎসব’। এক নৌকোয় টেনে তুলেছে বরাহনগর বা বাঘা যতীনকে। আজ, রবিবার এই উৎসবের শেষ দিনেও তার ঝুলি নানা চমকে ভরপুর।
ডায়েটিং-রূপচর্চা বা মৃৎশিল্পের কর্মশালার পরে বাগবাজারের রবিবাসরীয় মেনুতে জাপানি শিল্প অরিগামি ও টি-শার্ট চিত্রকলা শেখার আসর। এই ক’দিন অঞ্জন দত্ত, রূপঙ্করদের গানের পরে থাকবে মির-ব্যান্ডেজদের রসাবেশ। অতীতের উত্তরাধিকার থেকে সমকালের ভাল লাগার টান কোনওটাই উপেক্ষিত নয় বাগবাজারে। তাই কীর্তন ও ব্যান্ডের সহাবস্থান।
শনি সন্ধ্যায় সত্তরোর্ধ্ব হরবোলা শিল্পী শুভেন্দু বিশ্বাসকে আবিষ্কারের পটভূমি তাই এই বাগবাজার। রংবেরঙের সুতোর সূক্ষ্ম কাজে সাবলীল ছুঁচ-সুতোর শিল্পী ঋতা রক্ষিতের সৃষ্টিও চমকপ্রদ। বাগবাজারের নামে উৎসব আর রসগোল্লার কলম্বাস নবীন ময়রা থাকবেন না, তা-ও কী হয়! নবীন দাশের পাশেই কলকাতায় অধরা গজা-লবঙ্গলতিকার শিল্পী রিষড়ার ফেলু মোদক। বাঁকুড়ার স্পেশাল ঢেঁকি-ছাঁটা বেসনের মেচা, কলকাতার আইসক্রিম সন্দেশকে দশ গোল দেওয়া রাঢ়বঙ্গের ভাপা ছানার ‘চিত্তরঞ্জন’, রানাঘাটের জগু ময়রার পুরুষ্টু পান্তুয়া সক্কলে হাজির। আবার আরসালান-বিজলি গ্রিলদের সঙ্গে উত্তর কলকাতায় দুর্লভ একেলে চাইনিজ খানার রূপকার চাউম্যানকেও এ মাঠে পাবেন।
সন্ধেয় চণ্ডীপুরের নুরদিন চিত্রকরকে ঘিরে বৌবাজারের ইংরিজি মাধ্যম স্কুলের কচিকাঁচারা। কালীঘাটের পটের আদলে মহিষাসুরমর্দিনীর আখ্যানে ফিনিশিং টাচ দিচ্ছেন নুরদিন। ‘বিউটিফুল বেঙ্গলি কালচার’ অস্ফুটে বলতে বলতে তানিয়া জায়সবাল, রিতিকা সিংহানিয়াদের চোখেমুখে সম্ভ্রম ফুটে ওঠে। |