আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী ও এক বাসিন্দাকে বেঁধে রেখে দু’টি মোটরবাইক লুঠ করে পালাল দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার রাতে তেঘরিয়ার ঘটনা। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামলেও শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত সওয়া তিনটে নাগাদ তেঘরিয়া কলুপুকুরের অভয় আবাসনে ঢোকে পাঁচ দুষ্কৃতী। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তারা প্রথমে পিছনের একটি আবাসনে ঢুকেছিল। সেখানকার রক্ষীকে বেঁধে ফেলে পাঁচিল টপকে অভয় আবাসনে ঢোকে। ওই সময়ে অফিস থেকে ফিরছিলেন আবাসনেরই এক বাসিন্দা অমিত মণ্ডল। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অমিতবাবু জানান, নাইট ডিউটি সেরে তিনি সাধারণত ভোর পাঁচটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। কিন্তু শুক্রবার তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় এক বন্ধুর মোটরবাইকে আগেই ফিরে এসেছিলেন তিনি। সন্তোষ সরকার নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে গেট খোলার জন্য ডাকেন তিনি।
অমিতবাবু বলেন, “সন্তোষবাবু গেট খোলার পরেই পিছন থেকে পাঁচ জন দুষ্কৃতী ঝাপিয়ে পড়ে আমাদের জাপটে ধরে। তার পরে নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে ঢুকিয়ে দেয় আমাদের।” তাঁরা চেঁচামেচি করলে বন্দুক ও ভোজালি দেখিয়ে চুপ করতে বলে দুষ্কৃতীরা। নিরাপত্তারক্ষীর ঘরের বাইরে রাখা ক্যারাম বোর্ড ঢাকা দেওয়ার কাপড় ছিঁড়ে সন্তোষবাবু ও অমিতবাবুকে বেঁধেও ফেলে তারা। এর পরেই আবাসনের নীচে গ্যারাজে রাখা দু’টি মোটরবাইকের তালা ভেঙে সেগুলি নিয়ে চম্পট দেয়। এ ছাড়া, ওই দু’জনের মোবাইলের ব্যাটারি এবং মেমোরি কার্ডও নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
সন্তোষবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের ঘরে আটকে রাখার পরেই বাইরে থাকা তিনটি মোটরবাইকের তালা ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। সে সময়ে একটি মোটরবাইক থেকে বিপদঘন্টি বেজে ওঠে। তখন অন্য দু’টি মোটরবাইক নিয়েই পালায় তারা। তবে তৃতীয় মোটরবাইকটি থেকে তেল চুরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই মোটরবাইকটির মালিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, “আমার মোটরবাইকটি নতুন। তাতে বিপদঘন্টি লাগানো রয়েছে।”
তবে যে ভাবে পরিকল্পনা করে এবং বেপরোয়া কায়দায় দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল, তাতে যথেষ্ট আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে বাগুইআটি-তেঘরিয়া এলাকায় একের পর এক মোটরবাইক চুরি হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় অবশ্য চোরাই মোটরবাইক উদ্ধারও করা হয়েছে। কিন্তু কেন ওই এলাকায় পর পর এত মোটরবাইক চুরি হচ্ছে, কোন কোন চক্র ওই চুরির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে এখনও বিশদে জানতে পারেননি তদন্তকারীরা।
অভয় আবাসনের ঘটনায় কারা জড়িত, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে পুলিশ। তবে এ ভাবে আবাসনে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে মোটরবাইক লুঠ করার ঘটনা আগে ঘটেনি বলেই পুলিশ জানায়। এর পাশাপাশি তদন্তকারীরা বলছেন, এর আগে চুরি যাওয়া মোটরবাইকগুলি একটি বিশেষ সংস্থার এবং নতুন মডেলের ছিল। চোরাকারবারিদের কাছে সেগুলির দাম রয়েছে। কিন্তু অভয় আবাসন থেকে চুরি যাওয়া মোটরবাইকগুলি অন্য একটি সংস্থার এবং পুরনো মডেলের। সন্তোষবাবু ও অমিতবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, দুষ্কৃতীরা বাংলা ও হিন্দি মিশিয়ে কথা বলছিল। এই সূত্রটিও তদন্তকারীদের কাজে লাগবে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। |