রূপাহার
সাজায় খুশি, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় নিহতের পরিবার
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন বাবা। দেরিতে হলেও ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়ায় খুশি নিহতের পরিজন ও প্রতিবেশিরা। রায়গঞ্জ থানার পূর্ব রূপাহার এলাকার বাসিন্দা নিহত ওই ব্যক্তির স্ত্রী নুরজাহান বেওয়া শুক্রবার বলেন, “স্বামীর খুনের ঘটনায় জড়িতদের যাতে কঠোর শাস্তি হয় সে জন্য আমি প্রার্থনা করেছি। দেরিতে হলেও খুনিদের যাবজ্জীবন হওয়ায় আমি খুশি। সেই সঙ্গে আমার তিন ছেলেমেয়ে, শাশুড়ি, ভাসুর, জা ও তাঁদের ছেলেমেয়েরাও খুশি।”
তবে নুরজাহানের আশঙ্কা, সাজাপ্রাপ্তরা জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে জামিন আটকাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য কোথা থেকে তাঁদের টাকা জোগাড় হবে তা ভেবেই তাঁরা চিন্তিত। তিনি বলেন, “স্বামী একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর আমি ও আমার ছেলে বিভিন্ন খাবার প্যাকেট করার কাজ করে সংসার চালাই। বড় মেয়ে প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে সামান্য আয় করে। টাকার অভাবে স্বামীর খুনের মামলায় আইনজীবী নিয়োগ করতে পারিনি। সরকারি আইনজীবীই মামলা লড়ে খুনিদের সাজার ব্যবস্থা করেছেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে তা ভেবেই চিন্তায় পড়েছি।” সরকারি আইনজীবী শেখর পাল জানান, সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে জামিনের প্রার্থনা করলে প্রয়োজনে সরকারপক্ষও উচ্চ আদালতে যাবে।
২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নুরজাহানের স্বামী পেশায় রেশন দোকান কর্মী মজিবুর রহমান (৩৮) রুপাহার হাটখোলা থেকে সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় বাড়ির কাছেই দুই দুষ্কৃতী তাঁকে গুলি করে খুন করে। ওই দিনই মজিবুরের দাদা অজিত আলি ভাইকে খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রতিবেশী সুব্রত কুণ্ডুু নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে মজিবুরের মেয়েকে স্কুলে যাতায়াতের পথে উত্যক্ত করছিল। দশম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ের কাছ থেকে সে কথা জেনে সুব্রতকে একাধিকবার সতর্ক করেন মজিবুর। বিষয়টি নিয়ে সুব্রত ও তার বন্ধুদের সঙ্গে মজিবুরের একাধিকবার গোলমালও হয়। এর মধ্যেই মজিবুর খুন হন। ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর পুলিশ সুব্রতকে গ্রেফতার করে। কিছুদিন পরে চিত্ত বিশ্বাস নামে সুব্রতের এক বন্ধুকেও ধরা হয়। মজিবুরকে খুনের দায়ে বুধবার রায়গঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা প্রথম আদালতের বিচারক উত্তমকুমার শাহ সুব্রত ও চিত্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নিদের্র্শ দেন।
নিহত মজিবুরের মেয়ে বর্তমানে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। কিছুদিন আগে তিনি অবশ্য সিভিক পুলিশে চাকরিও পেয়েছেন। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে মজিবুরের মেজ মেয়ে ২০১২ সালে মাড়াইকুড়া ইন্দ্রমোহন বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর পড়াশুনা ছেড়ে দেয়। ছোট ছেলে বর্তমানে কৈলাসচন্দ্র রাধারানি বিদ্যাপীঠে দশম শ্রেণিতে পড়ে। মজিবুরের এক দাদা ও দুই ভাই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। নুরজাহান বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। দুই মেয়েরই বিয়ের খরচ জোগাড় করা খুব কঠিন হচ্ছে। ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি।”
পুলিশ জানিয়েছে, সুব্রতের বিরুদ্ধে অতীতে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে প্রায় একবছর ধরে চিত্ত পুরনো একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে আদালতের নির্দেশে যাবজ্জীবন সাজা খাটছে। এদিন চিত্তের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সুব্রতের বাবা পেশায় ভ্যানচালক শম্ভু কুণ্ডু বলেন, “আমার ছেলেকে বিনা দোষে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবী আশিস সরকার বলেন, “মজিবুরবাবুর খুনের ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। সুব্রত ও চিত্তের নামে লিখিতভাবে খুনের অভিযোগ নেই। শুধু সন্দেহের বশে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.