|
|
|
|
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ |
পেসমেকার বসানো বন্ধ, দাপট দালালদের
রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় • বাঁকুড়া |
যন্ত্র বিকল। প্রায় এক মাস ধরে তাই বাঁকুড়া মেডিক্যালে পেসমেকার প্রতিস্থাপন বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর জেরে হৃদ্রোগের সমস্যা থাকা রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। আর এই পরিস্থিতির সুযোগে কিছু সুযোগ সন্ধানী দালালের ভিড় বেড়েছে মেডিক্যাল কলেজের লোকপুর ক্যাম্পাসের কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে। রোগীদের অভিযোগ, তাঁরা রোগীদের নার্সিংহোমে বেশি টাকায় পেসমেকার প্রতিস্থাপন করাতে চাপ দিচ্ছেন।
দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এই মেডিক্যাল কলেজের উপর বাঁকুড়া জেলার মানুষ তো বটেই, লাগোয়া পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কিছু এলাকার মানুষও নির্ভরশীল। গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে পেসমেকার প্রতিস্থাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এইসব এলাকার রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।
এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, হৃদ্যন্ত্রের গতিজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা গড়ে ১০-১২ জন রোগী প্রতি মাসে এখানে শরীরে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করাতে আসেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিকল হয়ে যাওয়া যন্ত্রটির নাম সি আর্ম মেশিন। এর সাহায্যে শরীরের ভিতরের ছবি স্ক্রিনে ফুটে ওঠে। সেই ছবি দেখে অস্ত্রোপচার করে শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় সুষ্ঠু ভাবে চিকিৎসক পেসমেকার বসাতে পারেন।
পেসমেকার হৃদস্পন্দনের গতি বাড়াতে বা কমাতে ব্যবহার করা হয়। সরকারি হাসপাতালে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করতে খরচ হয় প্রায় একহাজার টাকা। সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার যন্ত্রটির দাম ন্যূনতম প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। ডবল চেম্বার পেসমেকার যন্ত্রটির দাম ন্যূনতম প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। বিপিএলদের এই মেশিন বিনামূল্যে দেওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচারও বিনামূল্যে করা হয় বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান কনক মিত্র। তিনি বলেন, “যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে সি আর্ম মেশিনটি কাজ করছে না। এর জেরে হাসপাতালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পেসমেকার লাগানোর কাজ।”
এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে সাধারণ মানুষের। হৃদ্রোগের চিকিৎসা করাতে আসা মানুষজনের কারও পেসমেকার লাগানোর প্রয়োজন পড়লে তাঁদের সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কনকবাবু বলেন, “প্রতি মাসে ১০-১২ জনের পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। সবটাই হয় জরুরি ভিত্তিতে।” বিভাগ সূত্রের খবর, এই ক’দিনে জনা দশেক রোগী পেসমেকার প্রতিস্থাপন করাতে এসেছিলেন। কিন্তু যন্ত্র খারাপ থাকায় তাঁদের কলকাতা ও বর্ধমানের মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়।
এই অবস্থায় নার্সিংহোমগুলিতে রোগী টানতে মেডিক্যাল কলেজে ভিড় করছেন দালালরা। তাঁদের চাপাচাপিতে রোগীরা নাজেহাল হচ্ছেন বলে অভিযোগ। ক’দিন আগে লোকপুরে কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে গিয়ে ওই দালালদের ঘিুরে বেড়াতে দেখা গেল। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাঙিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। এমনই এক দালাল জানান, নার্সিংহোমে সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার বসাতে অস্ত্রোপচারেরই খরচ পড়ছে ৬৫ হাজার টাকা ও ডবল চেম্বারের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা। দু’টি ক্ষেত্রেই মেশিনের দাম পড়বে লক্ষাধিক। রোগী নিয়ে নার্সিংহোমে গিয়ে তাঁর নম্বরে যোগাযোগ করলে তখন দর দাম কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও আশ্বাস দিলেন। এ ব্যাপারে কনকবাবু বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে দালাল চক্র চলছে বলে কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। পেসমেকার লাগাতে আসা রোগীদের আমরা বর্ধমান ও কলকাতার সরকারি হাসপাতালে রেফার করছি।”
এতদিনেও কেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের সি আর্ম মেশিনটি সারানো যায়নি? কনকবাবু বলেন, “কোম্পানির মেকানিক এসে মেশিনটি দেখে গেছেন। মেশিনটির কিছু যন্ত্রাংশ এ রাজ্যে পাওয়া যায় না। চেন্নাই থেকে নিয়ে আসতে সময় লেগেছে। আর তাতেই দেরি হয়েছে।” তাঁর আশা, শীঘ্রই ওই মেশিন সারানো হয়ে যাবে। একই আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুও। |
|
|
|
|
|