ট্রেন ছাড়তেই হ্যাঁচকা টানে প্ল্যাটফর্ম থেকে এক কিশোরীকে কামরায় তুলে নেন রেলের এক ঠিকা কর্মী। তারপর শৌচাগারে ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। মরিয়া কিশোরী চলন্ত ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করলে ফের তাকে টেনে নিয়ে যায় ভিতরে। শুক্রবার ভোরে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কিসানগঞ্জের দিকে যাওয়ার সময়ে গরিব নওয়াজ এক্সপ্রেসে এমনই ঘটেছে বলে অভিযোগ। বছর ষোলর ওই কিশোরী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশসূত্রে খবর, এনজেপি থেকে ছাড়ার মিনিট চল্লিশ পর ট্রেনটির গতি কমে আসে মাগুরজান স্টেশনের কাছে। সেই সময় স্টেশনের রেলকর্মীরা দেখেন, কিশোরীটি দরজার কাছে এসে নামার চেষ্টা করছে। তাঁরা পরের স্টেশন আলুয়াবাড়িতে খবর দেন। সেখানে ট্রেন থামিয়ে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত ঠিকাকর্মীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম বিশ্বেশ্বর দাস। বাড়ি কোচবিহারে। তিনি বাতানুকূল কামরার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকা কর্মী। কিশোরীকে প্রথমে এনজেপি রেল পুলিশ থানায়, ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে।
কী করে ঘটল এই ঘটনা? পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীর বাড়ি শিলিগুড়িতে। তার বাবা-মা দিনমজুরি করতে মাঝেমাঝে বাইরে যান বলে সেই দিনগুলিতে সে কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। কিশোরীটি পুলিশকে জানিয়েছে, ভোর তিনটে নাগাদ আলুভাজা কেনার জন্য সে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিল। তখন ওই প্ল্যাটফর্মে গরিব নওয়াজ এক্সপ্রেসে জল ভরা হচ্ছিল। ট্রেন চলা শুরু করতেই বি-১ কামরার দেখভালের ঠিকা কর্মী বিশ্বেশ্বর দাস তার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ট্রেনে তুলে নেয়। আচমকা ঘটে যাওয়ায় চিৎকারও করতে পারেনি মেয়েটি। এর পরে ওই কর্মী কিশোরীকে কামরার শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে, খুন করার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। কিশোরী জানিয়েছে, সে ধস্তাধস্তি করে হাত ছাড়িয়ে ট্রেনের দরজা খুলে মাগুরজান স্টেশনে নামার চেষ্টা করলে ওই কর্মী ফের তাকে ট্রেনের ভিতরে নিয়ে যায়।
রেল ও পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিসানগঞ্জ স্টেশন থেকে সকাল ৬ টা ৫ মিনিটে ছাড়ে। তার আগে জল ভরার জন্য ট্রেনটিকে প্রতিদিনই নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। কিসানগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেনটি ফাঁকাই যায়, ওই পথটুকু সব কামরার দরজাই ভিতর থেকে বন্ধ থাকে। রেল পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করছে, ট্রেনে কোনও যাত্রী না থাকায়, এবং দরজা বন্ধ থাকায়, নির্যাতিতা কিশোরী চিৎকার করলেও তা বাইরে পৌঁছয়নি।
এই ঘটনার পরে এনজেপি স্টেশনে নজরদারি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ভোর তিনটে নাগাদ প্ল্যাটফর্মে এক কিশোরী ঘোরাঘুরি করলেও কেন মহিলা রেল পুলিশ কিংবা রেল রক্ষী বাহিনী তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ এলাকায় পৌঁছে দেয়নি, তা নিয়ে বিস্মিত অনেকে। এনজেপি স্টেশনে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। অথচ কিশোরীকে জোর করে ট্রেনে তোলার দৃশ্য কেন তাতে দেখা গেল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
শিলিগুড়ির ডেপুটি রেল পুলিশ সুপার পিনাকী মজুমদার বলেন, “কিশোরীর বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে। সেই মতো অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তকে জেরা করা হচ্ছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে।” উত্তর পূর্ব রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম অরুণ কুমার শর্মাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। নজরদারি বাড়ানো হবে।” |