প্রার্থী-তালিকা নিয়ে মামলার জেরে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) মারফত সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আগেই স্থগিত করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তালিকা-সমস্যা না-মেটায় শুক্রবার সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকবে।
গত বছর একটি রায়ে বিচারপতি করগুপ্ত বলেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি-কে বিএড ডিগ্রিধারী এবং বিএড ডিগ্রিহীন প্রার্থীদের পৃথক তালিকা প্রকাশ করতে হবে। যাঁগের বিএড ডিগ্রি আছে, তাঁদের সকলকে নিয়োগপত্র দেওয়ার পরে তবেই অন্যদের নিয়োগ করা যাবে। কিন্তু এসএসসি একটিই (কম্পোজিট) তালিকা প্রকাশ করে। তাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষণহীন, সংরক্ষিত শ্রেণি বা অসংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীদের নাম আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এই নিয়ে হাইকোর্টে ফের মামলা হয়। সেই মামলার জেরেই গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখতে হবে।
ওই রায় অনুযায়ী ইতিমধ্যে যে-সব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত করা যাবে না। এমনকী যে-সব সুপারিশ এসএসসি-র অফিস, জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিস, ডাকঘর অথবা কোনও স্কুলে পড়ে রয়েছে, রূপায়ণ করা যাবে না সেগুলিও। যে-সব পদে নিয়োগ এখনও সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকের অনুমোদন পায়নি, তা-ও আপাতত বৈধ বলে গণ্য হবে না। তবে যে-সব শিক্ষকের নিয়োগ স্কুল পরিদর্শকের অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে, সেগুলি আপাতত বৈধ বলেই গণ্য হবে। কিন্তু তাতেও কাঁটা থাকছে। ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশে যদি গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল হয়ে যায়, তখন ওই সব শিক্ষকের চাকরি নিয়েও টানাটানি শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের আশঙ্কা।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে তিনি দেখান, আদালতের নির্দেশ মেনে বিএড ডিগ্রিধারী এবং ওই ডিগ্রিহীন প্রার্থীদের জন্য আলাদা তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি। সেই সময় এই মামলার আবেদনকারী, আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এজি হাইকোর্টে যে-রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, সেটি সম্পূর্ণ অসত্য। তাঁর দাবি, এসএসসি প্রথমে যে-তালিকা প্রকাশ করেছিল, পরে আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য সেটি বদলে দেয়। কমিশনের ওয়েবসাইটের সার্ভারে তথ্য বদল করে তা আদালতের কাছে পেশ করা হয়েছে। কী ভাবে সেটা করা হয়েছে, তাঁকে একটু সময় দিলে তিনি তা দেখিয়ে দিতে পারেন বলে জানান সুব্রতবাবু। তাঁর অভিযোগ, এই ভাবে অসংখ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়োগ স্থগিত করে দেয় আদালত।
যে-পরীক্ষার সফল প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক, সেটি হয়েছিল ২০১২-র ২৯ জুলাই। তার দ্বিতীয় পত্র বা টেট-এর ফল বেরোয় ওই বছরের ডিসেম্বরে। গত বছর অগস্টে প্রথম পত্র বা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার ফল বেরোয়। ইন্টারভিউ নিয়ে শিক্ষক সুপারিশের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের শেষে। অনেক প্রার্থীরই অভিযোগ, চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের পরে নাম থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেলেও তাঁরা পাচ্ছেন না। প্রতিবাদে অনেক প্রার্থী অনশন শুরু করেন। সল্টলেকে এসএসসি-র মূল ভবনের সামনে বিক্ষোভও দেখান অনেকে।
বিক্ষোভ শুধু তালিকা বা আদালতের রায় নিয়ে নয়। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষকতার জন্য এ বছর আরএলএসটি পরীক্ষা হওয়ার কথা। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তার ফর্ম দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। ওই দিন থেকে যে ফর্ম দেওয়া যাচ্ছে না, সেই ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকাও জারি করেনি কমিশন। তবে শুক্রবার কমিশনের তরফে জানানো হয়, কবে থেকে আরএলএসটি-র ফর্ম দেওয়া হবে, তা জানানো হবে সোমবার। এবং ডাকঘর নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে দেওয়া হবে ওই ফর্ম। |