রাজ্যপালের বক্তৃতার উপরে বিতর্ককে উপলক্ষ করে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে তরজা বাধল বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। চাপানউতোরের কেন্দ্রে চার্জশিট!
বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে রাজ্য সরকারকে চার্জশিট দিয়েছিলেন সূর্যবাবু। বিরোধী দলনেতা প্রকারান্তরে রাজ্যের মানুষকেই চার্জশিট দিয়েছেন বলে কটাক্ষ করে শুক্রবার পার্থবাবু হাতিয়ার করেছেন ২০১০-এর বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের বক্তৃতাকে। পাল্টা চার্জশিট পেশের ভঙ্গিতে পরিষদীয় মন্ত্রীর প্রশ্ন, চার বছর আগে রাজ্যপাল হিসাবে এম কে নারায়ণনই তাঁর বক্তৃতায় জঙ্গলমহল বা পাহাড়ে অশান্তির যে তথ্য দিয়েছিলেন, এখন তা অনুপস্থিত। তার মানে রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তা হলে কেন আর রাজ্যের মানুষকে চার্জশিট দিচ্ছে বামেরা? সূর্যবাবু বিধানসভায় এ দিন অবশ্য তাঁর বক্তৃতায় চার্জশিটের বিষয়ে যাননি। পরে পার্থবাবুর কটাক্ষের জবাবে বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “বিধানসভাটা ব্রিগেড নয়। ব্রিগেডটা বিধানসভা নয়। ওঁদের অনেক জ্ঞান। শুধু কাণ্ডজ্ঞানটা নেই!”
এ দিন সূর্যবাবুর আগে বক্তা ছিলেন পার্থবাবু। বিরোধীদের জবাব দিতে গিয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ৩২ মাসের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন। বারেবারেই তুলনা টেনেছেন রাজ্যপাল হিসাবে নারায়ণনের ২০১০ সালের সঙ্গে এ বারের বক্তৃতার। আইনশৃঙ্খলা, পাহাড়, জঙ্গলমহল, শিক্ষা-সহ এক একটি ক্ষেত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে সভার বাইরে পার্থবাবুর চ্যালেঞ্জ, “কাজের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে আগে ’৭৮ সাল থেকে ৩৪ বছরের কাজের খতিয়ান দিন। এক-একটি সময়কাল তুলে ধরে আগে নিজেদের কাজের খতিয়ান দেখুন। তার পরে চার্জশিট দেবেন!”
পরে বক্তৃতা করতে উঠে প্রশংসার পথ ধরেই পার্থবাবু তথা সরকারকে বিদ্ধ করার কৌশল নেন সূর্যবাবু। বলেন, “পার্থবাবু ভাল বক্তৃতা করেছেন। এত ভাল ভাল কাজ করেছেন বলেছেন। ভাল কাজ করলে ভাল বলতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু এত কাজ করেও ওঁর শিল্প দফতরটা থাকল না!” শাসক বেঞ্চ তখন নিশ্চুপ! তাঁরা কারও প্রশংসা করলেই মন্ত্রিসভা বা শাসক দলে সেই ব্যক্তির অবস্থান যে দুর্বল হয়ে পড়ে, তির্যক ভাবে সেই প্রসঙ্গও তুলতে ছাড়েননি সূর্যবাবু। আইনশৃঙ্খলা, টেট-সহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে অন্য বাম বিধায়কেরা সরব হওয়ায় নিজের বক্তব্যে এ দিন আর ওই সব প্রসঙ্গে ঢোকেননি সূর্যবাবু। তবে রাজ্যপালের ভাষণে ‘সারদা কেলেঙ্কারি’ শব্দটির উল্লেখ দেখিয়ে তাঁর তির্যক মন্তব্য, “ওঁকে ধন্যবাদ! এই প্রথম সরকারি ভাবে মানা হয়েছে, সারদা একটা কেলেঙ্কারি!” যার জবাবে পার্থবাবু পরে বলেছেন, “এটা অনেকটা অর্ধেক গ্লাস খালি, অর্ধেক ভর্তির মতো ব্যাপার। যে যে ভাবে দেখবেন!”
এ ছাড়াও, বিরোধী দলনেতা এ দিন সরব হয়েছেন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ভাঙার চেষ্টা বা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে উত্তরবঙ্গে কামতাপুরি জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ে। পরে সভার বাইরে সূর্যবাবুর আরও সংযোজন, “অদ্ভুত আত্মমুগ্ধ (নার্সিসিস্ট) সরকার চলছে! কোনও দিকেই কোনও উদ্বেগ নেই!” রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনা শেষ হয়ে গেল এ দিনই। এর পরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বাজেটের আগে শুধুই জবাব দেবেন। জবাবের সময় বামেরা বয়কট করবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে দিন বিধানসভা চত্বরে নকল অধিবেশন বসানোর পরিকল্পনা আছে বামেদের। কংগ্রেস পরিষদীয় দলও এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জবাব বয়কট তো হবেই। পাল্টা অবস্থানেও বসতে পারে তারা। |