দীর্ঘ ১২ বছর বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল বহরমপুরের ‘কাদাই হোম’। শনিবার এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নতুন করে ওই হোম চালু হতে চলেছে। ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা। সেই সঙ্গে ‘কাদাই হোম’-এর নতুন নামকরণ হবে ‘কাজি নজরুল ইসলাম হোম’। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে শেষ পর্যন্ত ওই হোম চালু হচ্ছে। বর্তমানে আনন্দ-আশ্রমের একটা অংশের শিশুদের ওই হোমে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুভেনাইল কোর্টে বিচার চলছে এমন শিশু-অপরাধীদের শুধুমাত্র আনন্দ-আশ্রমে রাখা হবে।”
সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীনে থাকা ‘ডেস্টিটিউট চিলড্রেন হোম ফর কাদাই’ বা কাদাই হোম গত ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়সী দুঃস্থ আবাসিকদের ওই কাদাই হোমে রাখা হত। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের ওই হোমে রাখার নিয়ম ছিল। কিন্তু ১৮ বছরের পরেও অনেকে হোমে থাকত এবং তাদের থাকা নিয়ে চরম ‘দুর্নীতি’ হত বলেও অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে গত ২০০৩ সাল থেকে সমাজ কল্যাণ দফতর ওই হোম বন্ধ করে দেয়।
ওই কাদাই হোমের অনূর্ধ্ব ১৮ বয়সী আবাসিকদের সরকারি ‘আনন্দ আশ্রম’ হোমে রাখার বন্দোবস্ত করে প্রশাসন। আগে যেখানে সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীনে থাকা ‘আনন্দ আশ্রম’-এ শুধুমাত্র জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশে শিশু-কিশোরদের রাখা হত। কাদাই হোম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশে বিচারাধীন কিশোরদের পাশাপাশি সাধারণ শিশু-কিশোররাও ওই হোমে থাকত। এ দিকে হোম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ওই ভবনের নিচের তলায় চালু রয়েছে জেলা জুভেনাইল কোর্ট।
কিন্তু হোম বন্ধ হয়ে গেলেও হোমের ১১ জন কর্মী রয়ে যায়। তাঁদের জন্য প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হত ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৯৯৭ টাকা! গত ১২ বছর ধরে কর্মীদের নিয়মিত বেতন দিয়ে এসেছে সরকার। ওই ১১ জন কর্মীর মধ্যে এক জন করে ফার্মাসিস্ট, শিক্ষক, করণিক, পিয়ন, রান্নার লোক ছাড়াও দু’জন করে দারোয়ান ও নৈশপ্রহরী মিলিয়ে ১১ জনকে বেতন দিতে প্রতি মাসে সরকারের খরচ
হচ্ছে অনেকটাই।
নতুন করে ওই হোম চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ওই হোম চালু করার ব্যাপারে গত দু’ বছর ধরে চেষ্টা করে আসছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি। সেই সঙ্গে হোমের নতুন নামকরণ কাজি নজরুল ইসলাম হোম রাখার ব্যাপারেও প্রস্তাব আকারে পাঠাই। সরকার আমার অনুরোধ রেখছ।”
সিরাজুলবাবু বলেন, “ওই হোমে এক সময়ে ১০০ জন দুঃস্থ আবাসিক থাকত। কিন্তু ২০০৩ সালে ওই হোম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১১ জন কর্মীর কোনও কাজ ছিল না। তাঁরা বসে থেকে মাস গেলে বেতন পেতেন। এ জন্য প্রতি মাসে প্রায় ২ লক্ষ টাকা বেতন গুনতে হত সরকারকে।”
জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক মহম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, “আনন্দ-আশ্রমের প্রায় ৪০ জন দুঃস্থা আবাসিককে নিয়ে নতুন করে ওই হোম চালু হতে চলেছে। শনিবার সকালে নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী নতুন করে ওই হোমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেই সঙ্গে নতুন নামকরণও করবেন তিনি।” |