কাজের টোপ গিলে এ পারে এসে হারিয়ে যাচ্ছেন ফতেমারা
হোক না বাড়ি থেকে হাঁটা পথ। তবুও তো ভিন দেশ। তাই কেবলই কু ডাকে মায়ের মনে। কাকভোরে বাড়ি ছেড়ে বেরনোর সময় ফতেমা খাতুন (নাম পরিবর্তিত) মাকে বুঝিয়েছিল, “কাঁদছ কেন আম্মা? যাচ্ছি তো ইন্ডিয়া। ওখানে ভাল কাজ, ভাল মাইনে। মাসে মাসে টাকা পাঠাব। তারপর হাতে কিছু জমলেই দেখো, ঠিক ফিরে আসব।”
সীমান্তের ওপারের গ্রামগুলোতে ফতেমার মতো বহু তরুণী ‘চেনা’ লোককে বিশ্বাস করে চোরাপথে ইন্ডিয়া আসে। তারপর যখন ভুল বুঝতে পারে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। বুঝতে ভুল হয় চেনা ওই লোকগুলো আসলে দালাল। তারপর গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে কারও ঠিকানা হয় যৌনপল্লি, অনুপ্রবেশের দায়ে কারও জেল। কারও আবার কোনও হদিশই মেলে না। পরিবার অপেক্ষায় থাকে। বাড়িতে টাকা আসে না। ঘরে ফেরা হয় না ফতেমাদেরও।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার তিন কিশোরীকে বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার টোপ দিয়ে এপারে নিয়ে আসা হয়েছিল। ইছামতী পার হয়ে প্রথমে হাঁসখালির রামনগর। তারপর তিন যুবকের সঙ্গে বগুলা স্টেশন। সেখানে ওই যুবকদের কথাবার্তায় ভিনদেশি ওই তিন কিশোরী বুঝতে পারেন, কাজের নামে আসলে তাঁরা অন্য খপ্পরে পড়ে গিয়েছেন। পরে অবশ্য গেদে স্টেশন থেকে তিন যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করা হয় ওই তিন কিশোরীকেও।
পুলিশ জানিয়েছে, ও পার বাংলার ওই তিন কিশোরী একটি তাঁতের কারখানায় কাজ করতেন। সেখানকার দুই যুবক তাঁদের কলকাতায় বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখায়। বাড়তি আয়ের স্বপ্নে সেই ফাঁদেই পা দিয়েছিলেন ওই তিন কিশোরী।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের যে মেয়েরা এই প্রলোভনে পা দেন তাঁরা প্রায় সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। দালাল ও পাচারকারীরা সচরাচর এমন পরিবারের মেয়েদেরই ‘টার্গেট’ করে। মোটা টাকার কাজ, লোভনীয় জীবনযাত্রা, পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের নিয়ে আসা হয় এ দেশে।
দীর্ঘ দিন ধরে নদিয়া সীমান্তে নারীপাচার নিয়ে কাজ করছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনের সম্পাদক বিকাশ মণ্ডল বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোনও আত্মীয়কে বিশ্বাস করেই ওই সব পরিবার তাদের মেয়েদের ভারতে পাঠাতে রাজি হয়ে যায়। তবে কাজের পাশাপাশি কেউ কেউ আসেন বিয়ের প্রলোভনে পা দিয়েও। তারপর এ দেশে আসার পর তাঁরা ভুল বুঝতে পারেন।”
কাজের টোপ দিয়ে পাচারের ঘটনা অবশ্য সীমান্তে নতুন কিছু নয়। উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু সীমান্ত এলাকা দিয়ে ওপার বাংলার মেয়েদের এ দেশে নিয়ে আসা হয় বলেও জানা গিয়েছে। সেই তালিকায় সম্প্রতি যোগ হল নদিয়ার রামনগরও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই সীমান্তে এমন প্রবণতা বেড়েছে। কাঁটাতারের ওপার থেকে মেয়েদের ফুঁসলিয়ে আনার মতো ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে? স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা মনে করছেন, দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছে নারী পাচারকারী চক্র। আর তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে স্বপ্ন পূরণের বদলে জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে বহু মেয়ের। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “যে সব মেয়েদের বাংলাদেশ থেকে এপারে নিয়ে আসা হয় তাঁদের বেশির ভাগই খুবই দরিদ্র পরিবারের। মূলত দারিদ্রের কারণেই ওঁরা কাজের লোভে এ দেশে চলে আসছেন।”
যৌন কর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্ময় কমিটির সাধারন সম্পাদক ভারতী দে বলেন, “বহু বাংলাদেশি মেয়েকে কাজ দেওয়ার নাম করে ফুঁসলিয়ে এনে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্র ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছে। সম্প্রতি লালবাজারকে আমরা একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধান দিয়েছি।” নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “সীমান্তে নারীপাচারের বিষয়ে মাঝেমধ্যেই বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। বিষয়টি আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তবে কন্যাশ্রী সহ বেশ কিছু প্রকল্প চালু হওয়ায় আমাদের জেলার ভিতরে নারীপাচার কমছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.