পরের খেলাটা নিজের থাকলে আগেরটা আর কী করেই বা বসে-বসে দেখা যায়? তাই যখন ম্যাচের প্রথম ন’টা গেমই হেরে ০-৬, ০-৩ থেকেও জকোভিচের দেশের বোজোলিয়াক রোমাঞ্চকর কামব্যাক ঘটিয়ে ০-৬, ৭-৫, ৬-৩ প্রথম সেমিফাইনাল জিতলেন, দু’টো কোর্ট দূরে পরের সেমিফাইনালের জন্য ওয়ার্ম আপ করছিলেন সোমদেব দেববর্মন।
কিন্তু শুক্রবার বিকেল তিনটে তিপ্পান্ন মিনিটের পর থেকে ভারতীয় টেনিসের এক নম্বর সিঙ্গলস তারকার মনে হতেই পারে— দুচ্ছাই, নিকুচি করেছে ওয়ার্ম আপ-টাপের! ততক্ষণ বোজোলিয়াককে দেখে আমার অতীব জরুরি টেনিস মাইন্ড সেট-টা মেরামত করলেই ভাল হত! (যে বোজোলিয়াক বলেছেন, “দশ নম্বর গেমে ভাবছিলাম ০-৬, ০-৬ হারলে আমার কোচ, পরিবার, বউসবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। খেলায় নতুন কিছু করে একটা শেষ চেষ্টা করেই দেখি না!”)
সোমদেবের ডেভিস কাপ ক্যাপ্টেন আনন্দ অমৃতরাজ সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন হপ্তাদুয়েক আগে। এ দিন বিটিএ কমপ্লেক্সে রাশিয়ার ডনস্কয়ের বিরুদ্ধে প্রথম সেট সহজে জিতেও তার পর থেকে ব্যাখার অতীত ডিফেন্সিভ হয়ে পড়ে ৬-৩, ৫-৭, ২-৬ হেরে কলকাতা চ্যালেঞ্জারে বিদায় নেওয়া দেখে সোমদেবের খেলার মানসিক গঠন নিয়ে ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুললেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, আখতার আলিও। দুই প্রাক্তন টেনিস তারকার বক্তব্যের সারমর্ম: কোনও প্লেয়ারের পক্ষে তার খেলার মাইন্ড সেট পাল্টানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। সোমদেবের খেলাটা হল কাউন্টার পাঞ্চিং ডিফেন্সিভ। লম্বা র্যালিতে প্রতিপক্ষকে খেলিয়ে খেলিয়ে তাকে ভুল করতে বাধ্য করা। কিন্তু তাতে অনেক সময় যখন বিপক্ষকে ‘ব্রেক’ করার দরকার পড়ে, তখন সোমদেবের বিরাট সমস্যা হয়। এ দিন ডনস্কয় ফোরহ্যান্ড-ব্যাকহ্যান্ডে কোর্টের সর্বত্র এত ভাল রিটার্ন মেরেছে, সোমদেবের কাউন্টার পাঞ্চিং ডিফেন্স কাজ দেয়নি। |
সাকেত-সনম। দুই ভারতীয়ের প্রথম চ্যালেঞ্জার জয়। —নিজস্ব চিত্র। |
সেমিফাইনাল শেষের এক ঘণ্টার বেশি পরে সোমদেবকে ধরতে তিনিও স্বীকার করলেন প্রাক্তনদের কথা। “দ্বিতীয় সেটের মাঝামাঝি থেকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এত ভাল অলরাউন্ড টেনিস খেলতে শুরু করল যে, আমি যা মেরেছি তা-ই কারেক্ট রিটার্ন করে দিয়েছে। বেশির ভাগ পয়েন্টের মীমাংসা হয়েছে আমার আনফোসর্ড এররেই।” তা হলে আপনি মেনে নিচ্ছেন, নিজের খেলার মাইন্ড সেট বদলানো দরকার? “দেখুন, মাইন্ড সেট হল আসলে একজন প্লেয়ারের আত্মবিশ্বাস। আমি একটা সময় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৬১ নম্বর ছিলাম। তার পর চোট, অস্ত্রোপচার—এ সবে সাড়ে আটশোয় নেমে গিয়েছিলাম। তার পর আবার পেশাদার সার্কিটে ফিরে প্রথম একশোয়। সব আত্মবিশ্বাসের জোরে। প্রত্যেক প্লেয়ারের খেলার নিজস্ব স্টাইলের মতো নিজস্ব মাইন্ড সেট আছে। প্লেয়ার যখন সফল হয় তখন সব ভাল, আর ব্যর্থ হলে তখন সব খারাপ দেখায়।”
সমালোচকদের সোমদেবের পাল্টা প্রশ্ন, “দ্রাবিড়কে সহবাগের মতো ব্যাটিং করতে বললে পারত কি? কিংবা উল্টোটা? এ দিন ডনস্কয় আমাকে আউটপ্লে করে দিয়েছে। যদিও সেটা আমার খেলার স্টাইলের জন্য নয়। কয়েক মাস আগে মায়ামিতে এ ভাবেই প্রথম সেট হেরে, তার পর ১-১ করে তৃতীয় সেট সহজে জিতেছিলাম। আজও সেটাই হল, কেবল ওর পক্ষে, আমার বিপক্ষে।”
ট্রফি না পেলেও রাজ্য টেনিস সংস্থার থেকে বিশেষ সংবর্ধনা বাবদ এক লক্ষ টাকা পেলেন সোমদেব। ট্রফি বরং ‘অল ইন্ডিয়ান’ ডাবলস ফাইনালে বিষ্ণু-দ্বিবীজকে ৬-৩, ৩-৬ ১০-৪ হারিয়ে পেলেন সাকেত মিনেনি-সনম সিংহ জুড়ি। |