মুক্তিযুদ্ধের বছর ফেরাতে চায় মহমেডান
ঞ্জয় সেন নয়, ফাঁকা যুবভারতীর একেবারে টঙের একটা চেয়ারে বসেছিলেন সৈয়দ নইমুদ্দিন!
মাঠে তখন ধানমন্ডির অনুশীলন চলছে। কলকাতার দুই প্রধানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশের ক্লাবকে মন দিয়ে দেখছিলেন ফুটবল দ্রোণাচার্য।
“আমাদের কোচ মহম্মদ হোসেন অসুস্থতার জন্য দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। ফলে সে বার আমিই ছিলাম ফুটবলার কাম কোচ। টিম মিটিংও করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম মহমেডানকে,” তেতাল্লিশ বছর আগে সাদা-কালো শিবিরকে শেষ বার আইএফএ শিল্ড জেতানো অধিনায়ক নইম নস্ট্যালজিক।
উনিশশো একাত্তরে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে হওয়া মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ! আর সে বারই ঐতিহ্যের এই ট্রফি শেষ বার গিয়েছিল মহমেডান তাঁবুতে।
কাকতালীয় হতে পারে কিন্তু পেন-লুসিয়ানোরা আজ শনিবার যাদের বিরুদ্ধে ইতিহাস ছুঁতে নামবেন সেই দলটি বাংলাদেশের। এবং আরও চমকপ্রদ ঘটনা, শেখ জামাল ধানমন্ডি—যাদের সঙ্গে খেলা মহমেডানের, সেই ‘শেখ জামাল’ প্রয়াত মুজিবর রহমানেরই ছেলে।
একাত্তর, মুজিবর, ধানমন্ডি—ওপার বাংলার নাম মাহাত্ম্যে ভরা টিমের বিরুদ্ধে শিল্ড ফাইনালে মহমেডান খেলতে নামার আগের দিন হঠাৎ-ই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে—ক্লাব বনাম ক্লাব নয়, দেশ বনাম দেশ। সীমান্তের কাঁটাতারের দু’পাশের সেনাদের মনোভাবে ডুবে গিয়ে দুই টিমের মাথায়, ভারত বনাম বাংলাদেশ।
শুক্রবার সকালে অনুশীলনের পর ক্লাব ছেড়ে দেশের কথা সাদা-কালো কোচ সঞ্জয় সেনের মুখেও।

ধানমন্ডি ধ্বংসের ছক সাজিয়ে শেষ বেলার টিপস সঞ্জয় সেনের। ছবি: উৎপল সরকার।
“ছেলেদের আমি টিম মিটিংয়ে বলেছি বাংলাদেশের একটা দল আমাদের তিনটে টিমকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে চলে যাবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। দেশের সম্মান রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে খেলো।” সন্ধ্যায় সেই যুবভারতীতে দাঁড়িয়েই অনুশীলনের পর ধানমন্ডি কোচ জোশেফ আফুসির গলায় বাংলাদেশ। “মাঠে কত লোক আসবে মহমেডানকে সমর্থন করতে? ষাট-সত্তর-আশি। আর বাংলাদেশের ষোলো-সতেরো কোটি লোকের আবেগ আর মানসিক সমর্থন থাকবে আমাদের সঙ্গে। ওরা অপেক্ষায় রয়েছে কখন আমরা চ্যাম্পিয়ন হই দেখার জন্য।”
কিন্তু লড়াই তো ধানমন্ডির আক্রমণ বনাম মহমেডান রক্ষণের।
সোনি নর্ডি-এমেকা-ওয়েডসনের ত্রিফলা আক্রমণের বিরুদ্ধে লুসিয়ানো-মেহরাজ-নির্মল ছেত্রীদের জমাট রক্ষণের লড়াই। এবং ম্যাচ শুরুর আগে পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে এগিয়ে মহমেডানই। গ্রুপ লিগে সঞ্জয় সেনের টিমই ২-১ জিতেছিল।
কিন্তু এ বার কী হবে? এ বার তো ফাইনাল?
পেন ওরজি— এ বার কাজটা সহজ। ওদের তো চিনে গেছি। শুধু গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। তা হলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন।
লুসিয়ানো সাব্রোসা— নর্ডি বা এমেকা নয়, আমরা ওদের পুরো টিমকে নিয়েই ভাবছি। কোচ যা স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন তাতে আবার জিতব।
মেহরাজ— ওদের বল পজেশন তৈরি করে খেলার ব্যাপারটা অন্যরা ধরতে পারেনি। আমরা জানি ওদের কী ভাবে আটকাতে হয়।
নির্মল ছেত্রীআমরা গত সাত-আটটা ম্যাচে বড়জোর তিনটে গোল খেয়েছি। আমাদের রক্ষণ মজবুত।
পাল্টা হুঙ্কারটাও আসছে বাংলাদেশ শিবির থেকে!
সনি নর্ডি— এটাই ভারতে আমার শেষ ম্যাচ। এখানকার দু’তনিটে ক্লাব আমাকে পরের মরসুমে খেলার প্রস্তাব দিয়েছে। তাই সেরা খেলাটা খেলতে হবে।
এমেকা— ওদের পেন আর লুসিয়ানোই আসল খেলাটা খেলে। মহমেডান শক্তিশালী দল। কিন্তু আমরা তো ট্রফি জিততে এসেছি।
মামুন— আমাকে আটকাতে পারবে না। কত মার্কিং করবে? আমি খেলবই, গোলের বলও বাড়াব।
উত্তেজক ও আশার ফানুসে চড়ে বসা মন্তব্যে অবশ্য অরুচি রয়েছে দুই কোচেরই।
কোচ হয়ে বহু অঘটন ঘটালেও কোনও দিন কোনও ট্রফি জেতেননি সঞ্জয়। আজই নিজের ক্লাব মহমেডানের সঙ্গে চেতলার এই মানুষটিরও ‘সূর্য’ হয়ে ওঠার দিন। ধানমন্ডি কোচেরও হাতের কাছেই জ্বলজ্বল করছে ‘পূর্ণিমার চাঁদ’। প্রথম বাংলাদেশ টিম হিসাবে শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলোর হাতছানি।
দুই কোচই তাই স্ট্র্যাটেজি সাজাচ্ছেন নানা অঙ্ক করে। নিজের সেরা অস্ত্রসম্ভার ব্যবহার করতে চাইছেন বিপক্ষকে।
সঞ্জয় তাঁর ডিফেন্সকে জমাট করতে কার্যত লক গেট ফেলে দিচ্ছেন মাঝমাঠে। চার ডিফেন্ডারের সামনে রাকেশ মাসি আর মণীশ মৈথানির ডিফেন্সিভ স্ক্রিন। পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণে যেতে পেন-নবি আর ইসফাকের গতিকে ব্যবহার করতে চাইছেন মহমেডান কোচ।
বাংলাদেশের নাইজিরিয়ান কোচ আফুসি তাঁর পুরনো স্ট্র্যাটেজিতেই আস্থা রাখছেন। নির্ভর করছেন তাঁর লাল-হলুদ বধের অঙ্কের উপরই। গতিশীল তিন বিদেশি স্ট্রাইকারকে সচল রাখতে ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের হায়েস্ট পেইড ফুটবলার মামুনকে। অনুশীলনেও দেখা গেল তুলে তুলে উইং-এ বল পাঠাচ্ছেন মামুন।
মাঠের বাইরেও লড়াই জমেছে। মহমেডান কর্তারা ঘোষণা করে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হলেই দেবেন পাঁচ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ক্লাবের জন্য তাদের কর্তাদের টোপ পঁচিশ হাজার ডলার। বাংলাদেশ থেকে বহু দর্শক এসেছেন। মহমেডান কর্তারা হাজির করানোর চেষ্টা করছেন ক্লাব সমর্থক সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রীদের।
মহমেডান চ্যাম্পিয়ন হলে জাতীয় সঙ্গীত বাজবে না ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে, শিল্ড ফাইনালের আবহাওয়ায় কিন্তু ঢুকে পড়েছে দেশ। সঞ্জয় সেনের টিমের হাতেই আজ ভারতীয় ফুটবলের মানরক্ষার দায়িত্ব এসে পড়েছে যে!

শনিবারে আই এফ এ শিল্ড ফাইনাল

মহমেডান: শেখ জামাল ধানমন্ডি (যুবভারতী ৬-০০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.