অবশেষে টালি নালা সংস্কারের কাজে হাত দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। ভারতীয় রেলের একটি সংস্থা রাইট্স-কে এই কাজের ভার দিচ্ছে পুর প্রশাসন। এ নিয়ে শুক্রবার দু’পক্ষে একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সংস্কারের কাজে প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা প্রকল্পের (ন্যাশানাল গঙ্গা রিভার বেসিন প্রজেক্ট) আর্থিক সহায়তায় তা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুরকর্তারা।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের দক্ষিণে প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ বেয়ে গিয়েছে ওই নালা। মূলত শহরের নোংরা নিকাশি জলেই ভরে থাকে সেটি। যার ফলে মারাত্মক ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে নালার দু’পাড়ে। আবার সেই নোংরা জল গিয়ে গঙ্গায় পড়ার ফলে বাড়ছে গঙ্গার দূষণও। সে কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টালি নালা সংস্কারের কাজে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এ দিন পুরসভায় এ বিষয়ে জরুরি মেয়র পরিষদ বৈঠক বসে। তার পরই রাইট্স-এর সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করে পুর-প্রশাসন। ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সপার্ষদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও পুর কমিশনার খলিল আহমেদ-সহ রাইট্স-এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর অরবিন্দ কুমার, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দুলালচন্দ্র মিত্র।
মেয়র জানান, কলকাতার ৩৩টি ওয়ার্ড ও রাজপুর-সোনারপুরের ৪টি ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে ওই খাল বয়ে গিয়েছে। ওই এলাকার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে খালের দূষণের শিকার হচ্ছেন। মাঝে মাঝে খালের নোংরা মাটি তোলা হয় ঠিকই, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। সে কথা ভেবেই টালি নালার সম্পূর্ণ সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে।
কী ভাবে হবে সংস্কারের কাজ?
রাইট্স-এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দুলালবাবু জানান, কলকাতাকে দূষণ মুক্ত করতে হলে টালিনালার সংস্কার খুবই জরুরি। ওই নালায় নিকাশির যে নোংরা জল যায় তা দূষণমুক্ত করতে হবে। ওই জল পরিস্রুত করতে নালার ধারে মেশিন বসাতে হবে। পরে সেই পরিস্রুত জল নালা হয়ে চলে যাবে গঙ্গায়। এতে গঙ্গার দূষণও কমবে, এলাকার পরিবেশও সুস্থ থাকবে।
যদিও বাস্তবে ওই কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথাও উঠেছে এ দিনের বৈঠকে। রাইট্স-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমত নালার ধারের জায়গা দখল করে অনেকেই ব্যবসা শুরু করেছেন। এমন ভাবে তাঁরা নালার পাড় ঘিরে রয়েছেন যে সেখানে জল পরিস্রুত করার মেশিন বসানোর জায়গা নেই। দ্বিতীয়ত, তাঁদের সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কোথায় জায়গা দেওয়া হবে তা ঠিক করা যায়নি। তৃতীয়ত, বাঁশদ্রোণী থেকে গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো রেলের লাইন বসানোর জন্য ঘন ঘন বেশ কয়েকটি খুঁটি বসানো হয়েছে। তাতে সংস্কারের কাজে অসুবিধা হবে। তবে এই সব অসুবিধা সত্ত্বেও টালি নালা সংস্কারের কাজে যে কোনও খামতি হবে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন দু’পক্ষই।
মেয়র শোভনবাবু জানান, ৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পের পূর্ণ রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করবে রাইট্স। তার পরই তা পাঠানো হবে জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা প্রকল্প কর্তাদের কাছে। যদিও এই সময়ের মধ্যে টালি নালা পরিষ্কারের কাজ চলবে বলে জানান মেয়র। তিনি জানান, কেএমডিএ-র টাকায় ওই কাজ শুরু হয়েছে। তবে মূল প্রকল্পের কাজ করবে রাইট্স। দেখভালের দায়িত্বে থাকবে পুরসভার প্রকল্প ও উন্নয়ন বিভাগ। |