কার্বন দূষণেই বরফ বাংলায়, অকালবৃষ্টি বিলেতে
ব্রিটেনের লাগাতার ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের প্রবল বৃষ্টি কিংবা দার্জিলিঙের সান্দাকফুতে অকাল তুষারপাতের মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদেরা। তাঁদের মতে, যে কারণে ব্রিটেন বা দার্জিলিঙে এই অকাল অতিবৃষ্টি বা তুষারপাত, ঠিক তার জন্যই অস্ট্রেলিয়ায় এ বছর রেকর্ড গরম পড়েছে এবং আর্জেন্তিনায় তাপপ্রবাহ বয়েছে।
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য কার্বনের দূষণকেই দায়ী করেছেন আবহবিদ ও পরিবেশবিদেরা। তাঁরা বলছেন, কার্বন বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার জন্যই সারা বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়ার এই অবস্থা। গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান বিজ্ঞানী নিকোলাস স্টার্ন জানিয়েছেন, কার্বন নিঃসরণ বাড়ার ফলেই আবহাওয়ার এমন হঠকারী ব্যবহার। কার্বন নিঃসরণ না কমালে ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বই এমন দুর্যোগের কবলে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্টার্ন।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে যে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে, তার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-ও। তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে উত্তর অতলান্তিক মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়বে। তার প্রভাব অন্যান্য দেশের আবহাওয়াতেও পড়বে বলে পরিবেশবিদেরা মনে করছেন। আর বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য তারাও দায়ী করেছে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরনকেই।
স্টার্ন বলছেন, ২০০৬ সালের পর থেকে ব্রিটেনে কার্বন ও গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়েছে। এর ফলেই এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় উত্তর মেরু সাগরে বরফ গলতে শুরু করেছে। তার ফলেই বিশ্বে জলস্তর বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রাও।
পরিবেশবিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা যে বাড়ছে, তার প্রভাব পড়েছে বঙ্গোপসাগরেও। গত বছর বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ তৈরি হওয়াই তার প্রমাণ। অক্টোবর-নভেম্বর এই দু’মাসে পরপর চারটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আন্দামান সাগরে। তার জেরেই এই প্রভাব। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে লাগাতার ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার ফলে তা মৌসুমি বায়ুকে অতি-সক্রিয় করে তুলেছিল। তার জেরেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা দীর্ঘায়িত হয়েছে। ২০১৩ সালে খাতায়-কলমে বর্ষা বিদায় হয়েছিল ২১ অক্টোবর। কিন্তু তার পরেও বৃষ্টি পিছু ছাড়েনি।
বদল দেখা গিয়েছে এ বছর শীতের চরিত্রেও। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পেরিয়েও কাশ্মীরে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাতেও। তার ফলেই সেখানে ঘনঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান পেরিয়ে তা আসছে কাশ্মীরে। তার জেরেই কনকনে শীত রয়েছে উত্তর ভারতে।
আবার এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরেই মাঘের মাঝামাঝি বাংলা ছেড়ে পালিয়েছিল শীত। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরাসরি বিহার-ঝাড়খণ্ডের দিকে বয়ে আসার ফলে উচ্চচাপ তৈরি হয়েছিল। তার ফলে বাংলায় ঢুকতে পারছিল না উত্তুরে হাওয়া। এ দিকে রোদের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। তার ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা হাওয়া ঢুকে পড়েছিল জেলাগুলিতে।
কিন্তু উচ্চচাপটি কেটে যেতেই ফের ঠান্ডা ফিরে আসছে দক্ষিণবঙ্গে। শুধু তাই নয়, উত্তুরে হাওয়া ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। উত্তরবঙ্গে অবশ্য এ দিন থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবারও উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে।”
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দখিনা বাতাসের ফলে দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ছিল। তার সঙ্গে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার সংস্পর্শে মেঘ তৈরি হচ্ছে। তা থেকেই বৃষ্টি। বৃষ্টির পরে ফের দক্ষিণবঙ্গে ঠান্ডা পড়তে পারে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গে অবশ্য বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাটাও রয়েছে।
এ দিন সকাল আটটা নাগাদ দার্জিলিঙের সান্দাকফুতে তুষারপাত শুরু হয়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে তুষারপাত হওয়ায় রাস্তায় প্রায় ১ ফুট পুরু তুষারের স্তর জমে যায়। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি সান্দাকফু এবং টাইগার হিলে তুষারপাত হয়েছিল। দার্জিলিঙে শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলপাইগুড়িতে ১২.৫ ডিগ্রি। উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায় এ দিন সব থেকে কম তাপমাত্রা ছিল কোচবিহারে, ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.