|
|
|
|
অটোচালকদের নানা অভিযোগ শুনল পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
‘কাদের কাছে বৈধ লাইসেন্স নেই, হাত তুলুন’। পদস্থ পুলিশ অফিসারদের সামনে বসা জনা চারশো অটোচালকের প্রায় তিনশো জনই হাত তুলে ফেললেন। সঙ্গে অভিযোগ, “লাইসেন্স থাকবে কী করে? রিনিউই তো হচ্ছে না স্যর।”
শুক্রবার দুপুরে নিউ টাউনের চিনার পার্কে বিধাননগর কমিশনারেটের অফিসারদের সঙ্গে অটোচালকদের বৈঠক বসে। এক বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা আয়োজিত ওই বৈঠকে আলোচ্য ছিল অটোচালকদের কী কী আইন মানতে হবে এবং যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টি। কিন্তু পরামর্শ দেওয়ার বৈঠক শেষমেশ অভিযোগ জানানোর প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়াল। অটোচালকেরা দাবি তুললেন, “স্যর, যাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই শুধু আমাদেরই দোষ দেয়। আমাদের কথা একটু শুনুন।”
আলোচনায় উঠে আসে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ না হওয়া থেকে অটোয় ক’জন যাত্রী বসানো হবে এমন নানা বিষয়। বাগুইআটি-উল্টোডাঙা রুটের অটোচালক হরিদাস সরকার বিধাননগর কমিশনারেটের ট্রাফিকের এডিসিপি নীলাঞ্জন বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ জানান, বেলতলা বা বারাসত দু’জায়গাতেই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ বন্ধ। ফলে যেখানে-সেখানে পুলিশ কেস দিচ্ছে। অনেকে অটো চালানো বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। হরিদাসবাবু বলেন, “লাইসেন্স রিনিউ করাতে গেলে অফিসারেরা শুধু বলছেন, এখন বন্ধ আছে।” |
|
অটোচালক ও পুলিশের বৈঠক। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র। |
জবাবও মিলল বৈঠকেই। অফিসারেরা জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী অটোর মতো তিন চাকার গাড়ি চালানোর লাইসেন্স করাতে গেলে আগে চার চাকার গাড়ির লাইসেন্স করাতে হবে। তবেই মিলবে অটোর লাইসেন্স। অটোচালকদের প্রশ্ন করা হল, “কেন নিয়ম মেনে লাইসেন্স করছেন না?”
চালকেরা এ বার বললেন, অটোর গ্যাস ভরতে গেলে বেআইনি রুটে চালানোর অভিযোগে পুলিশ ধরছে। অফিসারেরা প্রশ্ন করেন, গ্যাস ভরতে গিয়ে তাঁরা অন্য রুটে যাত্রী তুলছেন কেন। অটোচালকদের পাল্টা জবাব, “গ্যাস ভরার প্যাম্প কাছাকাছি নেই। তবে কি ১৬ কিলোমিটার দূরে গ্যাস ভরতে খালি অটো নিয়ে যাব? গত কয়েক বছরে কেন নতুন গ্যাস ভরার পাম্প হল না?”
পুলিশ অফিসারেরা অবশ্য নিয়ম মানার ব্যাপারে কড়া। এডিসিপি (ট্রাফিক) নীলাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “নির্দিষ্ট রুট বাদে অন্য রুটে যাত্রী নিয়ে অটো চালালে পুলিশ ধরবেই। কোনও অজুহাতেই চার জনের বেশি যাত্রী বসানো যাবে না।” আর এক আধিকারিক সাফ বলেন, “সব পেশাতেই সমস্যা আছে। না পোষালে অটো চালানো ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যান।”
প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে অবশ্য অটোচালকেরা মোটের উপরে খুশি। এমন বৈঠক আগে হয়নি জানিয়ে তাঁরা বলেন, মাঝেমধ্যে এ রকম বৈঠক হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। এক পুলিশ অফিসার বললেন, “সুরক্ষার কারণে চেষ্টা করবেন মহিলা যাত্রীদের সামনে না বসিয়ে পিছনের আসনে বসাতে।” উত্তরে এক চালক বলেন, “যাত্রীরা লাইন দিয়ে ওঠেন স্যর। সামনে মহিলাই বসুন বা বৃদ্ধ, কেউই পিছনের সিট ছেড়ে সামনে বসতে চান না।” আর এক চালক বলেন, “আর জি কর হাসপাতালে যখন রোগী নিয়ে ঢুকি, দারোয়ান ছেড়ে দেয়। বেরোনোর সময়ে কেন অটো নিয়ে হাসপাতালে ঢুকেছি, এই অভিযোগে টাকা চায়। স্যর একটু দেখুন। খুচরোর সমস্যা হয়। অনেক সময়ে যাত্রীরাও এ নিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন।”
ছোট-বড় এমন নানা সমস্যা এ দিন মন দিয়ে শোনেন ট্রাফিক অফিসারেরা। কয়েকটির সমাধানও হল সেখানেই। যে সব সমস্যার সমাধান মেলেনি, সেগুলি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে কমিশনারেট। |
|
|
|
|
|