|
|
|
|
আবার ধর্ষণের চেষ্টা, ধৃত কড়েয়ার সেই শাহজাদা
নিজস্ব সংবাদদাতা |
যে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েও জামিন পেয়ে গিয়েছিল, ফের সেই কিশোরীকেই ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হল সে। আগের যাত্রায় তাকে বেকসুর খালাস করার সময়ে বিচারক বলেছিলেন, “আপনি খুব স্বচ্ছ প্রকৃতির নন। ভবিষ্যতে ভাল থাকার চেষ্টা করবেন।”
|
শাহজাদা বক্স।
—ফাইল চিত্র। |
ওই কিশোরী ফের অভিযোগ করলে বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাদা বক্স নামে ওই অভিযুক্তকে ধরে পুলিশ। শুক্রবার আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দারুকার আদালতে হাজির করা হলে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয় তার। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা ওই কিশোরী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গোপন জবানবন্দি দিতে চায়।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে মেয়েটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ সে বাড়ির সামনের একটি দোকানে গিয়েছিল। তখন শাহজাদা ও তার সঙ্গী সেলিম মোটরসাইকেল নিয়ে আসছিল। তাকে দেখে তারা অশ্লীল গালিগালাজ করতে শুরু করে। তার বুকে ঘুষি মারে, গায়ে নখের আঁচড়ও কাটে। জামাকাপড়ও ছিঁড়ে দেয়। পরে রাস্তায় ফেলে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। তখন শাহজাদা ও সেলিমের খপ্পর থেকে কোনওমতে পালায় সে। বাড়ি গিয়ে কাকিমাকে সব জানায় মেয়েটি। রাতেই চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। তার পরে কড়েয়া থানায় শাহজাদা ও তার ওই সঙ্গীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সে।
শাহজাদার বিরুদ্ধে বছর দেড়েক আগেও ধর্ষণের অভিযোগ করেছিল এই কিশোরী। ২০১২-র সেই ঘটনার পরদিন থানায় অভিযোগ জানাতে মেয়েটির সঙ্গে গিয়েছিলেন পাড়ারই যুবক আমিনুল ইসলাম। অভিযোগ ওঠে, মেয়েটিকে ধর্ষণের লিখিত বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য আমিনুলকে চাপ দেয় থানা। তাঁকে ডাকাতির মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এই অপমানের জ্বালায় গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন আমিনুল। মেয়েটিও তাকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে বেকসুর খালাস হয়ে যায় শাহজাদা। এই ঘটনায় কড়েয়া থানার একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ লালবাজারের কর্তারা। পুলিশকর্তারা তদন্ত শুরু করে জানতে পারেন, এলাকার পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে শাহজাদার। থানার একাংশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলেও জানা যায়। সাসপেন্ড হন কড়েয়া থানার তিন কর্মী। পরে বদলি করা হয় কড়েয়া থানার প্রাক্তন ওসি এবং দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকেও।
এর পরের ঘটনা গত নভেম্বরের। মেয়েটি থানায় অভিযোগ জানায়, শাহজাদা তাকে পাড়া ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “শাহজাদার বিরুদ্ধে কিশোরীর পরিবারের তরফে যে হুমকির অভিযোগ করা হয়েছিল, তা জামিনযোগ্য অপরাধ হওয়ায় শাহজাদা জামিন পায়। তবে সেই মামলার চার্জশিট পেশ করেছে কড়েয়া থানা।”
তার আড়াই মাসের মধ্যে ফের ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল শাহজাদার বিরুদ্ধে। পুলিশ শাহজাদাকে ধরলেও তার সঙ্গী সেলিম শুক্রবার রাত পর্যন্ত অধরা। গোয়েন্দা-প্রধান বলেন, “কিশোরীর সব অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। সেলিমকেও গ্রেফতার করা হবে।” কিন্তু আগের বার পুলিশের কাছে জানিয়েও কেন সে বিচারকের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল? জবাবে মেয়েটি এ দিন বলে, “বিচারকের কাছে সত্যি বললে, শাহজাদা প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল।” |
|
|
|
|
|