বেলজিয়ামে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার এ বার ছোটদেরও

১৪ ফেব্রুয়ারি
প্রাপ্তবয়স্করা পেয়েছিলেন প্রায় এক দশক আগে। এ বার পেল ছোটরা। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সীমিত ক্ষেত্রে ছোটদের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকার বিল পাশ করে ইতিহাস গড়ল বেলজিয়াম। তা আইনে পরিণত হতে এখন স্রেফ রাজা ফিলিপের অনুমোদনের অপেক্ষা। তবে তীব্র বিতর্ক, পাল্টা যুক্তি এখনও
ধারালো ফলার মতো বিঁধছে পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তকে।
কিন্তু তাতে মোটেও দমছেন না বিলের সমর্থকরা। তাঁদের চাপেই গত ডিসেম্বরে সেনেট এই দাবিকে অনুমোদন করেছিল। এর পরে দরকার ছিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অনুমোদন। তা-ও মিলল বৃহস্পতিবার। খুশি তাই বাঁধ মানছে না লিন্ডা ভ্যান রয়ের। মাত্র দু’বছর আগে নিজের দশ মাসের সন্তানকে হারিয়েছেন লিন্ডা। কিন্তু সে শোকের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ সময়ের স্মৃতিগুলো। চোখের সামনে প্রাণঘাতী ‘ক্র্যাব ডিজিজ’-এ আক্রান্ত সন্তানকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছিলেন লিন্ডা। অসহায়, নিরুপায়। কিন্তু কিচ্ছুটি করে উঠতে পারেননি। লিন্ডার বয়ানে, “তখন খালি মনে হত, এ ভাবে এই শিশুকে বাঁচিয়ে রেখে কী লাভ?” তবে, বেশি দিন যন্ত্রণা পোহাতে হয়নি লিন্ডার সন্তানকে। শেষের দিকে খাবার ও তরল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় তাকে। মারা যায় সে। তার পরই ছোটদের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর দাবিতে সরব লিন্ডা। তাঁর মতোই বহু মানুষ আজ পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপে খুশি।
তবে, ছোটদের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর ক্ষেত্রে কয়েকটি বিধিনিষেধের ব্যবস্থাও রেখেছে পার্লামেন্ট। যেমন যার নিষ্কৃতি-মৃত্যু নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাকে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। এর তাৎপর্য সে আদৌ বোঝে কি না, তা নির্ধারণ করবেন এক জন মনোচিকিৎসক বা মনোবিদ্। দ্বিতীয়ত, অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের কমবয়সিদের নিষ্কৃতি-মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাদের অভিভভাবকের অনুমতি নিতে হবে। তৃতীয়ত, যে চিকিৎসক নিষ্কৃতি-মৃত্যুর ব্যবস্থা করবেন, এই সিদ্ধান্তে তাঁরও সায় থাকতে হবে। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মোটেও জোর করা যাবে না।
এবং এখান থেকেই পাল্টা যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। সেগুলি সাজিয়ে একটি খোলা চিঠিও লিখেছেন বেলজিয়ামের ১৭৫ জন শিশু-চিকিৎসক। তাতে বলা হয়েছে, নয়া এই আইন মোটেও কোনও বাস্তব সমস্যা মিটবে না। কারণ, যে সব মেডিক্যাল টিম প্রাণঘাতী অসুখে আক্রান্ত শিশুদের পরিচর্যা করে থাকেন, তাদের বেশিরভাগেরই অভিজ্ঞতা, কখনও কোনও শিশুই নিজে থেকে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর দাবি করে না। দ্বিতীয়ত, কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক নিষ্কৃতি-মৃত্যুর মানে বুঝতে পারে কি না, তা বিচার করার কোনও নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। একাংশের আবার প্রশ্ন, শিশুদের কি আদৌ এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে? তর্কের খাতিরে যদি বা ধরে নেওয়া যায় যে এ হেন সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা সক্ষম, তার পরেও বড় প্রশ্ন, আদৌ তারা এই ভাবে দুনিয়া ছেড়ে যেতে চাইবে কি? ইজাবেলা সেসউইককে দেখে অবশ্য তা মনে হয় না। ‘হান্টিংটন ডিজিজ’-এর শিকার এই তরুণীকে তাঁর মা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “নিষ্কৃতি-মৃত্যু ভাল না খারাপ?” প্রায় অস্ফূটে জবাব দিয়েছিলেন ইজাবেলা, “মোটেই ভাল নয়।” তাঁর মা আইওনার মতে, ইজাবেলার মতোই বেশিরভাগ ছোটই নিষ্কৃতি-মৃত্যু চাইবে না। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই আইন মোটেও ইতিবাচক নয়। কিন্তু লিন্ডার মতো মা-দের সংখ্যাটাও তো কম নয়। অন্তত তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে নিষ্কৃতি-মৃত্যুর বিকল্প পথ খুলে দিল বেলজিয়াম পার্লামেন্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.