আরও এক বার। তুষার-ঝড়ের দাপটে স্তব্ধ আমেরিকার জনজীবন। বিশেষত দেশের উত্তর-পূর্ব ভাগের একটা বড় অংশ এখন পুরোটাই চলে গিয়েছে সাদা চাদরের তলায়।
কনকর্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার, অ্যালবানি, নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, ফিলাডেলফিয়া। কালকের তুষার-ঝড়ের পরে সর্বত্রই প্রায় পাঁচ থেকে দশ ইঞ্চি পুরু বরফের আস্তরণে ঢেকে গিয়েছে রাস্তা। আবহাওয়া দফতরও আশার কথা শোনাচ্ছে না। আজ রাতেও ভারী তুষারপাতের সতর্কতা রয়েছে উত্তরপূর্ব আমেরিকার প্রায় সব ক’টি শহরে। ঝোড়ো হাওয়া আর বরফ তো আছেই। তার সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, ফিলাডেলফিয়া ও তার সংলগ্ন এলাকায় আজ রাত থেকে শুরু হতে পারে বৃষ্টি।
এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কালই আমেরিকায় মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। আজ সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬। পুলিশ জানাচ্ছে, নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বরফ পরিষ্কার করার একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মৃত্যু হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। ওই মহিলার প্রসবের দিন খুবই কাছে ছিল। তাঁর গর্ভের সন্তানকে অস্ত্রোপচার করে বার করা হলেও সদ্যোজাতের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মেরিল্যান্ডেও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। |
ডালাস বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় জমা বরফ সরাচ্ছেন এক সাফাই কর্মী। ছবি: এএফপি। |
তবে গত দু’দিনের থেকে আজ বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কাল উত্তর-পূর্বের প্রায় সাড়ে ছ’লাখ বাড়ি বিদ্যুৎহীন ছিল। আজ সেই সংখ্যটা কমে সাড়ে পাঁচ লাখ হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বের সাউথ ক্যালোরাইনা ও জর্জিয়ায় এখনও প্রায় দু’লাখ বাড়িতে আলো নেই। তবে ঝড় আপাতত উত্তর দিকে এগোচ্ছে বলে সেখানকার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ নিয়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাল মিলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে বিমান পরিষেবাও। নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটনে আজ সকালে এক হাজারেরও বেশি বিমান বাতিল হয়েছে। সড়কগুলিতে বরফ জমায় যান চলাচলও ভীষণ ধীর।
প্রকৃতির রোষের মাসুল দিচ্ছেন আমেরিকার প্রেমিক-প্রেমিকারাও। কারণ দুর্যোগের জন্য মন্দা ফুলের বাজারে। বহু ফুলের দোকানিই জানাচ্ছেন, অর্ডার নিয়েও নির্দিষ্ট ঠিকানায় সময় মতো ফুলের তোড়া পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আপাতত রেহাই পাচ্ছে না ব্রিটেনও। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ঝড়-বৃষ্টি আর তুষারপাতের মিলিত আক্রমণ আরও কয়েক দিন জারি থাকবে। সরকারের দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রধান পিটার হল্যান্ড এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এত বড় আকারের উদ্ধার কাজ চালাতে হয়নি তাঁদের। হল্যান্ডের দাবি, তাঁদের ৭০ শতাংশ কর্মীই এখন বন্যা ও ত্রাণের কাজে ব্যস্ত। আবহাওয়া দফতর এখনও টেমস উপত্যকা ও সমারসেটের ১৭টি এলাকায় চূড়ান্ত বন্যা সতর্কতা দিয়ে রেখেছে।
ল্যাঙ্কাশায়ারে বন্যা-বিধ্বস্তদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ত্রাণ কাজে বিলম্বের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। তিনি বলেন, “যাঁদের অসুবিধা হচ্ছে, তাঁদের জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু শুধু এটাই বলতে চাই যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত ত্রাণের
ব্যবস্থা করা সম্ভব, আমরা করেছি।” বন্যা ত্রাণে হাত লাগিয়েছেন রাজ পরিবারের দুই সদস্য উইলিয়াম ও হ্যারিও। |