ট্রাক্টর চালকের বয়স মেরেকেটে ১২ বছর। ট্রাক্টরে ইটভাটা থেকে ইট নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় সরবরাহ করতে যাচ্ছিল এক দল শ্রমিক। তাদেরও বয়স ১০ থেকে ১২-র কোঠায়। আচমকা ব্রেক কষায় ট্রাক্টর থেকে ছিটকে পড়ে চাকায় পিষে ১২ বছরের এক বালকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর দেগুন এলাকায়। বৃহস্পতি বার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের দাবিতে ৪ ঘণ্টা ধরে মৃতদেহ আটকে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি শিশুশ্রমিক বন্ধের দাবিতে ইটভাঁটাতেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। মৃতের নাম হাসিউর রহমান।
শ্রম দফতরের নজরদারির অভাবে এ ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রম দফতরের চাঁচলের সহকারী শ্রম আধিকারিক মিহিরণ বৈদ্য বলেন, “ইট ভাটা বা অন্য কোথাও শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যায় না। বেশ কিছু ইটভাটায় তা হচ্ছে বলে শুনেছি। অনেকেই পরিবারের ছেলেদের কাজে পাঠাচ্ছেন। চাঁচলের ৬টি ব্লকের জন্য মাত্র দু’জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। ফলে সর্বত্র নজরদারি চালানো যায় না। তবু মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়।”
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, ওই ইটভাঁটায় বেশ কয়েক মাস ধরেই কাজ করত হাসিউর। গর্তে চাকা পড়লে ১২ বছরের চালক ব্রেক কষলে ট্রাক্টরের ইটে বসে থাকা ওই হাসিউর ছিটকে পড়ে। ঘটনার পর দেহ আটকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে শুরু হয় ভালুকা-রতুয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার অধিকাংশ ইটভাটাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। মজুরি কম দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দিয়ে বেআইনিভাবে নানারকম কাজ করানো হচ্ছে। এমনকী বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর কথা অস্বীকার করেননি ওই ইটভাটার মালিক সাদ্দাম হোসেনও। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা তো জোর করে কাউকে কাজে লাগাই না। শিশুরা নিজেই বা তাদের পরিবারের লোকেরা এসে কাজ দিতে জোরাজুরি করে।”
ওই এলাকাতেই রাস্তার পাশে এক খাস জমিতে হাসিনুরের বাড়ি। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে চতুর্থ। দুর্ঘটনার পরে তার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসিনুরের বাবা জাহিরুদ্দিন আহমেদ পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, “অভাবের তাড়নায় ছেলেটাকে ইটভাটায় কাজে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এ ভাবে ওকে হারাতে হবে ভাবিনি।” |