শিলিগুড়িতে মহিলা খুনে রহস্য কাটেনি
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রিনা ঘোষ ওরফে মন্নু দইমারির খুনকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বুধবার দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ তাঁকে শিলিগুড়ি লাগোয়া হাতিয়াডাঙায় খুন করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রেলের লোহা-লক্কর কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি জমির কারবারেও জড়িত ছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে মাদকপাচারের কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় কিছু দিন জেলেও কাটান তিনি। তখন তিনি নিজের পরিচয় দিতেন রিনা দাস নামে। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মহিলার প্রকৃত নাম মন্নু দইমারি। রিনা তাঁর ডাক নাম। তবে অনেকেই তাঁকে রিনা নামেই চিনতেন।
এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হাতিয়াডাঙায় তিনি থাকতেন সেখানকার বাসিন্দা পীযূষ ঘোষের সঙ্গে। পীযূষবাবুকে পুলিশ আটক করে জেরা করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় পীযূষবাবু জানিয়েছেন, মন্নুদেবীর সঙ্গে তাঁর সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়নি। তবে গত বছরখানেক তাঁরা এক সঙ্গে থাকতেন। পীযূষবাবুর বালিপাথর সরবরাহ এবং জমি কেনাবেচার কারবার রয়েছে। মন্নুদেবীকে খুনের পিছনে রেলের পুরনো লোহালক্কড় কেনাবেচা বা জমি সংক্রান্ত কোনও ব্যাপার রয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এমনকী অবৈধ সম্পর্কজনিত কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে, এমন সন্দেহও উড়িয়ে দিতে পারছে না পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “আমরা কয়েকটি সূত্র পেয়েছি। তদন্ত চলছে। খুব দ্রুতই দুষ্কৃতীদের ধরা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, মন্নুদেবী একাধিকবার বিয়ে করেছেন। কোচবিহারের খাগড়াবাড়ির বাসিন্দা এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। কোচবিহার থেকেই তিনি শিলিগুড়িতে চলে এসেছিলেন। তখন শক্তিগড় এলাকায় এক জনের বাড়িতে থাকতেন। তখনই ব্যবসা সূত্রে পীযূষবাবুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। প্রথমে তাঁরা সেবক রোডে ঘর ভাড়া নিয়ে এক সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। মাস তিনেক আগে হাতিয়াঙায় চলে যান তাঁরা। সেখানে পীযূষবাবুদের পৈতৃক বাড়িটি সংস্কার করে এক সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। সেখানে পীযূষবাবুর দাদা ও মা-ও থাকতেন।
জেরায় পীযূষবাবু জানিয়েছেন, কোচবিহারে মন্নুদেবীর বিবাহবিচ্ছেদের মামলাটির শুনানি ছিল ৩১ জানুয়ারি। ওই দিন যেতে পারেননি তিনি। ১৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির কথা ছিল। মামলাটি মিটলে পীযূষবাবু-মন্নুদেবী রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেন। বিয়ে না হলেও ইতিমধ্যেই মন্নুদেবীর নামে বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনা হয়েছিল। গত অক্টোবরে পুরনো একটি গাড়ি বিক্রি করে একটি দামি গাড়িও পীযূষবাবু কেনেন মন্নুর নামে। গাড়ি জমি, যা কিছুই তাঁর নামে কেনা হত, সেখানে বাবা নরেশ দইমারির পরিচয় ব্যবহার করতেন মন্নুদেবী।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মন্নুদেবীর বাপের বাড়ি অসমের লখিমপুরে। তবে ওই পরিবারের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ কমছিল। এ দিনও তাঁর বাপের বাড়ি থেকে কেউ শিলিগুড়িতে পৌঁছননি। পীযূষবাবুদের পরিবারের তরফেই এ দিন মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
|