|
|
|
|
পাড়ুইয়ে তদন্তকারী হবেন কে, তিন পক্ষের তিন মত
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বীরভূমে পাড়ুই গ্রামের সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কে করবেন, বৃহস্পতিবার তা পরিষ্কার হল না। মামলায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের তরফে এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে তিনি কোনও ভাবেই আপস করবেন না। প্রকৃত দোষীরা যাতে ধরা পড়ে ও শাস্তি পায়, তা তিনি সুনিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। আজ শুক্রবার নতুন তদন্তকারী স্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাড়ুই-হত্যা মামলার এফআইআরে নাম থাকা প্রথম ‘দুই ভদ্রলোক’কে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলে সোমবার তদন্তকারী সিআইডি’কে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি দত্ত। উল্লিখিত দু’জন হলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। ওঁদের অবশ্য পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। এ দিন হাইকোর্টে এজলাসের বাইরে সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ বলেন, “আদালতের কাছে আমাদের একটাই নিবেদন। এফআইআরে যাদের নাম ছিল, তারা সকলেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে!”
পাড়ুই-কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের গতি-প্রকৃতি দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি দত্ত বর্তমান তদন্তকারী অফিসারকে সরাতে বলেছেন। বিচারপতি এ-ও চেয়েছিলেন, মামলাটির তদন্ত করুন সিআইডি’র ডিআইজি দময়ন্তী সেন, হাইকোর্টেরই নির্দেশে যাঁর হাতে মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের তদম্তভার ন্যস্ত হয়েছে। দময়ন্তীকে একান্তই পাওয়া না-গেলে তাঁর সমান পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে ওই দায়িত্ব অর্পণের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি।
এ দিকে দময়ন্তী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পাড়ুই-মামলার তদন্তভার নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এই মর্মে লেখা তাঁর চিঠি বুধবার সরকারের তরফে আদালতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক হয়েছিল, এ দিন পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে। কী হল বৃহস্পতিবার?
এ দিন মামলা শুরু হতে রাজ্য সরকারের পক্ষে জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে বলেন, “যে হেতু এই মুহূর্তে ডিআইজি পযমর্যাদার কোনও অফিসার সিআইডি-তে নেই, তাই আইজি নীরজ সিংহকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক।” কিন্তু অশোকবাবুর প্রস্তাবে সায় দেননি মামলার আবেদনকারী নেপালকৃষ্ণ রায়ের কৌঁসুলি তাপস চট্টোপাধ্যায়। “আমরা চাই, কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র
কিংবা রাজ্য পুলিশের এডিজি (সংগঠন) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় কিংবা শিলিগুড়ির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন (বর্তমানে কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে)-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক।” বলেন তাপসবাবু। অন্য দিকে হৃদয়বাবুর কৌঁসুলি শীর্ষেন্দু সিংহরায় ভিন্ন দাবি পেশ করেন। আদালতের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, “আমরা চাই, সিআইডি’রই কেউ তদন্ত করুন।”
তদন্তকারী সম্পর্কে তিন পক্ষ সহমত না-হওয়ায় বিচারপতি জানিয়ে দেন, বিকেল চারটেয় তিনি মামলাটি ফের শুনবেন। এবং তখন সরকারপক্ষকে নতুন কোনও তদন্তকারীর নাম জানাতে হবে। বিচারপতি দত্তের কথায়, “সাগর ঘোষের মৃত্যুর মতো এ ধরনের একটা ঘটনায় আমি কোনও ভাবেই আপস করব না। প্রকৃত দোষীরা যাতে ধরা পড়ে ও শাস্তি পায়, সেটা আমি সুনিশ্চিত করে ছাড়ব।”
শেষ পর্যন্ত অবশ্য এ দিন তদন্তকারীর চূড়ান্ত নাম ঘোষিত হয়নি। শুনানি শেষে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সৌমেনবাবু বিচারপতি দত্তের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। দু’জনে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয়। সৌমেনবাবু চলে গেলে তিন পক্ষের কৌঁসুলিকে বিচারপতি নিজের ঘরে ডেকে নেন। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের কথাবার্তা চলে। শেষে বিচারপতি সব পক্ষকে জানিয়ে দেন, আজ শুক্রবার তিনি তাঁর মতামত জানিয়ে দেবেন।
বিচারপতির সঙ্গে সৌমেনবাবুর কী কথা হল?
সৌমেনবাবু তা জানাতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, সাগর ঘোষ খুনের তদন্ত করার ব্যাপারে এখনও তিনি কোনও সরকারি নির্দেশ পাননি। এর বাইরে তাঁর কিছু বলার নেই। |
|
|
|
|
|