বাস-ভাড়া নিয়ে খার্গের পথ ধরতে নারাজ মদন
কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী পেরেছেন। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী এখনও পারলেন না!
দেশে টেলিকম বা বিদ্যুৎ পরিষেবার দাম নির্ধারণের দায়িত্ব অনেক আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে স্বাধীন কর্তৃপক্ষের হাতে। একই পথে হেঁটে বুধবার দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ রেল বাজেট পেশ করে রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে প্রস্তাব দেন, ট্রেনের যাত্রী-ভাড়া ও পণ্য-মাসুল নির্ধারণের জন্যও স্বাধীন কমিটি গঠন করা হবে। খার্গে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে রেল বোর্ডের পরিবর্তে ওই স্বাধীন কর্তৃপক্ষই স্থির করবে, জ্বালানি-ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া ও মাসুল কতটা বাড়বে কিংবা বাড়বে না।
তবে খার্গের পথ ধরতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সংসদে রেলমন্ত্রী যে রকম প্রস্তাব দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে বাসভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তেমনই একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছেন এ রাজ্যের বেসরকারি বাস-মালিকেরা। তাঁদের যুক্তি: রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণে সরকার অনেক সময়ে বাসভাড়া বাড়াতে চায় না, যার পরিণামে আখেরে পরিবহণ শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্দশা বাড়ে আমজনতার। ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার স্বাধীন কর্তৃপক্ষের হাতে ছাড়লে এই সমস্যা থাকবে না বলে বাস-মালিক মহলের দাবি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য ওঁদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। মালিকদের একাংশের অভিযোগ: প্রথমে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও পরে সরকার তা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন রেল-ভাড়া নির্ধারণে স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রস্তাব আসায় রাজ্যের বেসরকারি বাস-মালিকরা ফের পুরনো দাবিতে সরব হয়েছেন। এবং সরকার ফের তা এক কথায় খারিজ করেছে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বৃহস্পতিবার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এমন পরিকল্পনা সরকারের মাথায় নেই। “কেন্দ্র করেছে বলেই আমাদের করতে হবে?” পাল্টা প্রশ্নও তুলেছেন মদনবাবু। উপরন্তু এই মুহূর্তে সরকার যে বাসভাড়া বাড়ানোর কথা ভাবছে না, তা আবার জানিয়ে মন্ত্রীর সংযোজন, “এখনই এ রকম কমিটির প্রয়োজন নেই। তাই তা ভাবাও হচ্ছে না।”
পরিবহণমন্ত্রী প্রয়োজনীয়তা না-দেখলেও বাস্তব অন্য কথা বলছে। আড়াই বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসার পরে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারপিছু প্রায় আট টাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিমা ও অন্যান্য খাতে খরচ। তবে বাসভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে নতুন সরকারের গোড়া থেকেই অনীহা। পরিবহণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে বাসভাড়া শেষ বেড়েছে ২০১১-র অক্টোবর-নভেম্বরে। তা-ও প্রথমে যা বাড়ানো হয়েছিল, পরে তা খানিকটা কমিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থনীতির বুনিয়াদি নিয়ম লঙ্ঘনের ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। খরচ পোষাতে না-পেরে বহু বেসরকারি মালিক বাস বসিয়ে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খাস কলকাতার বিভিন্ন রুটে বিস্তর বাস উটে গিয়েছে। সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির হালও তথৈবচ। তাদের বোঝার ভার বাড়িয়েছে বাড়তি কর্মীর চাপ। ব্যয়ের তুলনায় আয় না-বাড়ায় বিভিন্ন নিগমের বহু বাস নামানো যাচ্ছে না। যে ক’টা চলছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও লজ্ঝরে। ভাড়াবৃদ্ধির প্রশ্নে সরকার ও বাস-মালিকদের সংঘাতও তুঙ্গে। রাজ্যের যুক্তি: তেলের দাম বাড়লেও বাস চালিয়ে মালিকেরা লাভ করছেন। উপরন্তু বাসভাড়া বাড়লে মানুষের উপরে বাড়তি বোঝা চাপবে। অন্য দিকে মালিকদের একাংশের অভিযোগ: রাজনৈতিক ফায়দার তাগিদে সস্তা জনপ্রিয়তার রাস্তা নিয়েছে সরকার।
আর এই চাপান-উতোরের যাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির একশেষ। রাস্তায় বেরিয়ে বাস না-পেয়ে বহু নিত্যযাত্রীকে রিকশা-অটো-ট্যাক্সি-মেট্রো ইত্যাদিতে যাত্রাপথ ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পকেট থেকে খসছে বেশি। হিসেব কষে অনেকে দেখেছেন, মালিকদের দাবিমতো বাসে উঠে বাড়তি ভাড়া গুণতে হলেও খরচ তুলনায় কম হতো, ঝক্কিও এত পোহাতে হতো না।
অথচ বাসভাড়ার ব্যাপারটা দেখতে স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি তো এই সরকারই দিয়েছিল! তা হলে?
রাজ্যের মিনিবাস-মালিকদের সংগঠন ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র অবশেষ দাঁ’র মন্তব্য, “সরকার ভাড়া বাড়াতে রাজি হচ্ছে না বলে আমরাই বলেছিলাম, একটা স্বাধীন কমিটি গড়া হোক। পরিবহণমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রস্তাব ছিল, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কমিটি সব দিক বিচার করে বলুক, ভাড়াবৃদ্ধির দরকার আছে কি না। কমিটির মতামত আমরা মেনে নেব।” বেসরকারি বাস-মালিকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স’-এর তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “পরিবহণ দফতর তখন স্বাধীন কমিটি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কমিটিতে কারা থাকতে পারেন, তাঁদের নামের তালিকা চেয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। আমরা তালিকা জমাও দিয়েছিলাম।”
কিন্তু তার পরে সরকারের তরফে আর সাড়াশব্দ নেই বলে তপনবাবুর অভিযোগ। তাঁদের মতে, বিষয়টা সরকার আসলে ধামাচাপা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বেসরকারি বাস-মালিকদের আর এক সংগঠন ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’-এর দীপক সরকারের দাবি, “সরকার রাজনীতি ছেড়ে বাস্তবের দিকে তাকাক। রেলমন্ত্রীর থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবহণের জন্যও স্বাধীন কর্তৃপক্ষ তৈরি করুক। তাতে সাধারণ মানুষ ও পরিবহণ শিল্প দুইয়েরই উপকার হবে।”
মালিকদের কথা শুনে পরিবহণের অফিসারেরা ভুরু কুঁচকোচ্ছেন। “সরকার তো ভাড়া বাড়াতেই রাজি নয়! কমিটি করে কী হবে?” প্রশ্ন এক আধিকারিকের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.