ছেলের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে কুণালের মা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জামিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু একটানা পুলিশি হাজত বা জেল-হাজতে থাকার ফলে আবেদনপত্রে স্বাক্ষরই করতে পারছেন না সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাই ছেলের তরফে ওই আবেদনপত্রে সই করতে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হাজির হন তাঁর মা মিনতি ঘোষ।
ছেলের জামিনের আবেদনে সই করার পরে আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে মিনতিদেবী অভিযোগ করেন, “আমার ছেলেকে পুলিশ নানা ভাবে হেনস্থা করছে। এক থানা থেকে হরদম অন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকী ওর আইনজীবীর কথাও শোনা হচ্ছে না।” আদালত সূত্রের খবর, বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে কুণালবাবুর জামিনের আর্জি নিয়ে শুনানি হতে পারে।
কুণালবাবুর মা যখন হাইকোর্টে জামিনের আবেদনের কাগজপত্রে সইসাবুদ করছেন, তখন বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয় ছেলেকে। সেখানে ফের অনশনের হুমকি দেন তৃণমূল সাংসদ কুণালবাবু। এ দিন সারদা কাণ্ডের একটি মামলায় তাঁকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আদালত থেকে বেরোনোর মুখে কুণালবাবু বলেন, “ছলে-বলে কৌশলে আমার অনশন ভাঙানো হয়েছে। আমি ফের অনশন করব।” |
ছেলের জামিনের আবেদন করতে বৃহস্পতিবার অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে
কলকাতা হাইকোর্টে এলেন কুণালের মা মিনতি ঘোষ।
|
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে রেবতী মণ্ডল নামে বারুইপুরের এক বাসিন্দা এবং আমানতকারী সারদা সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় সুদীপ্ত, দেবযানীরা জামিন পান। কিন্তু পুলিশ আদালতে জানায়, ওই প্রতারণায় কুণালও জড়িত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ তিন দিন আগে আদালতে আবেদন জানায়, তদন্তের অগ্রগতির জন্য ওই মামলায় কুণালবাবুকে পুলিশি হাজতে রাখা প্রয়োজন। বিচারক এ দিন কুণালবাবুকে জেল থেকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, কুণালবাবুকে পাঁচ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল। বিচারক অবশ্য ওই সাংসদকে চার দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কুণালবাবুর মা হাইকোর্টে যে-অভিযোগ করেছেন, বারুইপুর আদালতে একই ধরনের অভিযোগ করেন তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী কৌশিক অধিকারী। তিনি বলেন, “বিচারের নামে প্রহসন চলছে। কুণালবাবুকে নানা ভাবে হেনস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ।” |
সে দিনই বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয় কুণালকে। |
সারদা-প্রধান সুদীপ্তকে এ দিন তিনটি ভিন্ন মামলায় শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি মামলায় তিনি জামিন পেয়ে যান। শ্রীরামপুর থানার অন্য একটি মামলায় বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চেও এ দিন সারদা মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল। বিচারপতি ১৯ জুন সারদা কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে রাজ্য সরকারকে কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আছে:
• সারদা কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট প্রতি মাসে দিতে হবে।
• এই কাণ্ড নিয়ে সব মামলা একটি বিশেষ আদালতে নিয়ে আসতে হবে।
• স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-কে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
• তিন মাস অন্তর রিপোর্ট পেশ করতে হবে শ্যামল সেন কমিশনকেও।
সেই নির্দেশ কতটা পালিত হয়েছে, তা জানানোর জন্য সরকার পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|