|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা বয়কটের পথে বিরোধীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পরপর দু’সপ্তাহেই বাতিল মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর-পর্ব। রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্ক চলাকালীন বিধানসভায় উপস্থিত থাকছেন না মুখ্যমন্ত্রী। উপরন্তু, চলতি রেওয়াজ ভেঙে রাজ্য বাজেটের দিন তিনি জবাবি বক্তৃতা করবেন। সরকারের এই মনোভাবের কোনও পরিবর্তন না-হলে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিল বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে আগে বিধানসভার শেষ অধিবেশনে সরকার পক্ষের সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাতের পথেই হাঁটতে চলেছে বিরোধী শিবির।
বিধানসভায় রাজ্যপালের উপরে বিতর্কের শেষ দিনে সচরাচর মুখ্যমন্ত্রী জবাবি বক্তৃতা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক আগে বক্তা থাকেন বিরোধী দলনেতা। দীর্ঘ দিনের পরিষদীয় রীতি এটাই। কিন্তু এ বার প্রথমে উত্তরবঙ্গ এবং পরে বর্ধমান জেলা-সফরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের ভাষণের উপরে তিন দিনের বিতর্কে হাজির থাকতে পারবেন না বলে আগেই সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল। বিধানসভায় বৃহস্পতিবার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বিরোধীদের তরফে অনুরোধ ছিল, মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত সোমবার বাজেটের দিনেই জবাবি ভাষণ দেবেন বলে যদি ঠিক হয়ে থাকে, তা হলে সে দিনই কিছু সময় বিরোধীদের জন্যও বরাদ্দ করা হোক। যাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিরোধীরা তাঁদের বক্তব্য পেশের সুযোগ পান। কিন্তু সেই আর্জিও খারিজ হয়েছে কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে। তার পরেই কমিটির বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীরা।
অধিবেশনের কাজ এ দিনের মতো মুলতবি হয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “কথায় কথায় ওঁরা ৩৪ বছরের প্রসঙ্গ তোলেন। ওই ৩৪ বছরে কখনও মুখ্যমন্ত্রীরা প্রশ্নোত্তর দেওয়ার রীতির অন্যথা করেননি। এই মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রশ্নোত্তর বয়কট করেন, আমরাও তা হলে ওঁর ভাষণ বয়কট করব! আগামী ১৭ তারিখ (সোমবার) মুখ্যমন্ত্রীর এক ঘণ্টার ভাষণ শুনতে আমরা কক্ষে থাকব না!” তাঁরাও একই পথে হাঁটবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কংগ্রেস পরিষদীয় নেতৃত্ব। তবে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি ভাষণের পরে ওই দিন দ্বিতীয়ার্ধে বাজেট পেশের সময়ে বিরোধীরা সভায় থাকবেন। বিধানসভার ৭৫ বর্ষপূর্তির সমাপ্তি উপলক্ষে গত ডিসেম্বরেই রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে বিশেষ অধিবেশন বয়কট করেছিল বিরোধীরা। সরকারে সিদ্ধান্ত না বদল হলে রাজ্যপালের ভাষণ-বিতর্কের শেষ পর্বেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় থাকবেন না বলে আজ, শুক্রবার (তাঁর জন্য নির্ধারিত দিন) প্রশ্নোত্তর-পর্ব আগেই বাতিল হয়েছিল। কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে এ দিন জানানো হয়েছে, পরের শুক্রবারও প্রশ্নোত্তর রাখা যাচ্ছে না। সে দিন কয়েকটি বিল পাশ করাতে সময় বরাদ্দ করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তেই কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরা। সূর্যবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর হাতে-থাকা ৮টি দফতরের উপরে গত আড়াই বছরে (এই অধিবেশনের আগে পর্যন্ত) আমরা ৬৪টা প্রশ্ন করেছি। একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি! সড়ক নিয়ে অন্য মন্ত্রীকে দিয়ে উত্তর দেওয়ানো হচ্ছিল। আমরা প্রতিবাদ করায় মুখ্যমন্ত্রী জবাব দিয়েছিলেন। এই হচ্ছে রেকর্ড!” বিরোধী দলনেতার আরও মন্তব্য, “আমাদের নিরাপত্তার কথা বলছি না। কিন্তু প্রশ্নের সামনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপদ নন! তাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রশ্নোত্তর বাতিল করছে সরকার!”
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছেন, আজ সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতার বাইরে থাকার কথা। আর বাজেটের দিন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের নির্ঘণ্টও অসাংবিধানিক নয়। কিন্তু আগামী শুক্রবার চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। সে দিনও প্রশ্নোত্তর-পর্ব বাতিল কি মুখ্যমন্ত্রীর জন্য প্রশ্ন এড়াতেই? পার্থবাবুর জবাব, “ও দিন কয়েকটি বিল পাশ করানো হবে। সেই কারণেই প্রশ্নোত্তর-পর্ব বাদ।” মুখ্যমন্ত্রীর জবাবের দিন তাদেরও বলতে দেওয়ার যে দাবি বিরোধীরা তুলেছিল, সেই প্রসঙ্গে পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, “শুধু মুখ্যমন্ত্রীই যে সোমবার জবাবি ভাষণ দেবেন, তা আগের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতেই ঠিক হয়েছে। তা নিয়ে সভায় ভোট হয়েছে। তখন তো ও দিন বলার জন্য আবেদন করেনি বামেরা! এখন কেন আবার এ কথা উঠছে?”
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনাতেও মুখ্যমন্ত্রী-প্রসঙ্গ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী। মানস ভুঁইয়া স্পিকারের উদ্দেশে বলেছেন, “দয়া করে আপনি সভার নেতাকে নির্দেশ দিন, যাতে তিনি সভায় থাকেন। সভা চলে আইন ও রীতি মেনে। কেউই তা অমান্য করতে পারেন না।” কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে তিনিও যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর-পর্ব রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন, নিজের বক্তৃতায় সে কথা জানান এসইউসি-র তরুণ নস্কর। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আমাদের বক্তৃতা শুনলেন না! তিনি কী করে উত্তর দেবেন, বুঝতে পারছি না!” |
|
|
|
|
|