কংগ্রেস কর্মী খুন শুনে সংবর্ধনা নিয়েই ছুটলেন অধীর
দায়িত্ব নিয়ে দলকে চাঙ্গা করার কথা বলেছিলেন অধীর চৌধুরী। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সংবর্ধনা নেওয়ার দিনই মাঠে নেমে পড়তে হল তাঁকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিধান ভবনে যখন এই অনুষ্ঠানটি চলছে, খবর এল, হুগলিতে খুন হয়েছেন যুব কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ রহমান। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে। শুনেই ছুটলেন সেখানে। একই সঙ্গে পরবর্তী প্রতিবাদ বিক্ষোভের রূপরেখাও ছকে ফেললেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। যার থেকে পরিষ্কার, আগামী দিনে জঙ্গি আন্দোলনের পথেই হাঁটবে রাজ্য কংগ্রেস।
তিন বছর বাদে সদ্য বদল হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মুর্শিদাবাদের জঙ্গি নেতা অধীর যে তাঁর পূর্বসূরির উল্টো পথ নেবেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাজ্য জুড়ে ছুটে বেড়াবেন, তার ইঙ্গিত এ দিনই দিলেন। অভিজিৎ রহমানের খুনের খবর শুনে সংবর্ধনা শেষ করেই ছুটলেন চুঁচুড়ায়। সেখানে ইমামবাড়া হাসপাতালেই তখন রয়েছে অভিজিতের দেহ। অধীরের সঙ্গী হলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ খান।
অভিজিতের মৃত্যুর খবর আসে বিধান ভবনে অনুষ্ঠানের সময়ে। আব্দুল মান্নান প্রথমে খবরটা জানান অধীর-সহ প্রদেশ নেতৃত্বকে। তার পরেই শোক জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সকলে।
এর আগে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে অধীর বলেছেন, “আমরা যদি মানুষের দুঃখে, বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকি, তা হলে কংগ্রেসকে কেউ হারাতে পারবে না।” সেই কথা রাখার সুযোগ হারাননি তিনি। প্রথমে মান্নান এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে চুঁচুড়া পাঠান। তার পরে অধীর নিজে যান শাকিলকে নিয়ে। এর মধ্যেই দলের প্রবীণ বিধায়ক মানস ভুঁইয়া প্রস্তাব দেন, হুগলিতে অভিজিত খুনের প্রতিবাদ সভা করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সারা বাংলা জুড়ে আন্দোলন শুরু করুক দল। অধীর পরে বলেন, “যে ভাবে খুন হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ করছি। ২৪ তারিখ সারা বাংলা থেকে ‘হুগলি চলো’ অভিযান হবে। বিক্ষোভ, প্রতিবাদ দিবস পালিত হবে ওই দিন।” পরে যুব কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, আজ, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে দু’টো পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধ করবে তারা।

নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে সংবর্ধনা কর্মী-সমর্থকদের।
বৃহস্পতিবার বিধান ভবনে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
“কংগ্রেস সাইনবোর্ড হওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। কিন্তু
একটা ভোটে হারলেই তৃণমূল উঠে যেতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্ষমতায় না থাকলে কি দলটা থাকবে?”
কী ভাবে প্রাণ গেল ৩৩ বছর বয়সী অভিজিতের? পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, মগরার সপ্তগ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট খোঁজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ রহমান এ দিন দুপুরে গ্রামের সেলুনে চুল কাটতে যান। প্রভাস মণ্ডল নামে অন্য এক যুবক সেই সময় দাবি করেন, তিনিই আগে এসেছেন। এই নিয়ে দু’জনে ঝগড়া শুরু হয়। অভিযোগ, প্রভাসকে প্রথমে মারধর করেন অভিজিৎ। তার পরে শূন্যে গুলিও চালান তিনি। আওয়াজে লোকজন বেরিয়ে এসে অভিজিৎকে ধরে ফেলেন। শুরু হয় গণপ্রহার। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। ওই যুবককে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হুগলির এসপি সুনীল চৌধুরী বলেন, “গিয়ে পুলিশ ওই যুবকের থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছে। কী কারণে তার মৃত্যু হল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
অবস্থার অবনতি হওয়ায় অভিজিৎকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কলকাতায় আসার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেই খবর রটতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় নামেন। রাতে অধীরের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে শাকিল আহমেদ খান অভিযোগ করেন, “রাজ্যে অরাজকতা চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণ্ডাবাহিনী আমাদের নিরীহ ওই সমর্থককে খুন করেছে। এ নিয়ে তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।” হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নিহতের বাড়িতেও যান অধীর।
তৃণমূল নেতৃত্ব অধীর-শাকিলদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, “ওই ঘটনায় রাজনীতির যোগ নেই। নিহত ছেলেটি জমি মাফিয়া। ঝগড়া করে গুলি চালাতেই গ্রামবাসীরা খেপে যান। শেষ পর্যন্ত গণপ্রহারে আহত হয়। পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি অধীরবাবুকে অনুরোধ করব, তিনি গ্রামে গিয়ে সত্যটা জেনে আসুন।” তপনবাবুর সংযোজন, “ক’বছর আগে এক মহিলাকে জমি থেকে উৎখাতের মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।” হাসপাতালে অবশ্য অভিজিৎ মৃত্যুর আগে জানায়, তাঁকে তৃণমূলই মেরেছে।
অধীর যে ভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তাতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে যে অবস্থায় দলের হাল ধরতে হয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন অধীর। ভাঙন-বিধ্বস্ত দলের কর্মীদের মনোবল বাড়িয়ে তাকে আন্দোলনমুখী করার লক্ষ্যেই তাঁর ২৫ মিনিটের বক্তৃতায় মমতা ও শাসক দলের সমালোচনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। শুধু তিনিই নন, এ দিনের সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে অধীরঘনিষ্ঠ বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, মানসবাবু থেকে শুরু করে পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব, সোমেন মিত্র এবং শাকিল আহমেদ খানেরাও সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও শাসকদলের। দলকে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে কর্মীদের কাছে দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য তৈরি হওয়ার আবেদন জানিয়ে অধীর বলেন, “কংগ্রেসকে নিজ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার শুরু হোক লড়াই। কালই ফল পাব, তা নয়। দীর্ঘস্থায়ী লড়াই করতে হবে।”
শাসকদল এবং তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করে অধীরের আরও কটাক্ষ, “কংগ্রেস সাইনবোর্ড হওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। কিন্তু একটা ভোটে হারলেই তৃণমূল দলটা উঠে যেতে পারে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় না থাকলে কি দলটা থাকবে? গোটা তৃণমূলই দাঁড়িয়ে আছে এক জন মহিলার মহিমায়। দলের বাকি কেউ জানে না, কার চেয়ার থাকবে! সবই মিউজিক্যাল চেয়ার!’’ নতুন সভাপতির এই ধরনের বক্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে, এর পরও কি কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট সম্ভব! অধীর সরাসরি জবাব দেননি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কংগ্রেস-তৃণমূল দু’দলের সাংসদদের কেউ কেউ জোট চাইছেন। অধীর বলেন, “সাংসদরা জোট চাইলেই তো হবে না। দলের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে।” বিধানভবন ছাড়ার আগে অধীর বলেন, “তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখুন, তৃণমূলের আসন সংখ্যা কমবেই।”
অধীরের এই বক্তব্যকে আমল দিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “যে দলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে এসে ঠেকেছে, তার নেতা কী বললেন তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.