রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে সুপারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন দলের নেতা-কর্মীরাই। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হাসপাতালে এতদিন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী সংস্থার কর্মীরা। রাজ্য সরকারের নির্দেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওই বেসরকারি সংস্থাকে সরিয়ে সৈনিক বোর্ড মারফৎ প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হয়। একই ভাবে হাসপাতাল থেকে আয়াদেরও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এর প্রতিবাদেঅস্থায়ী ঠিকাকর্মীদের একটি সংগঠনের নামে কাজ হারানো কর্মীরা গত ক’দিন ধরে হাসপাতালে প্রতিবাদে সামিল হন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের কর্মীরা দেখেন সুপারের অফিসের সামনে ঘাসফুলের পতাকা ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত পতাকা নিয়ে বসে পড়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, অবিলম্বে তাঁদের কাজে পুনবর্হাল করতে হবে। না হলে তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে। এ দিন সুপারের অফিসে ঢুকতে সামান্য দেরি হওয়ায় আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি বৈদ্যনাথ মণ্ডল।
|
রাজ্য সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র। |
কেন সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তৃণমূল আন্দোলনে নেমেছে? বৈদ্যনাথবাবু তখন দাবি করেন, “এই আন্দোলন হচ্ছে দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র ব্যানারে। আমাদের নানা কাজে প্রতিদিনই হাসপাতালে আসতে হয়, তাই গিয়েছিলাম।” বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে কানাকানি হতেই অবশ্য কিছুক্ষণ পরে আন্দোলনকারীরা তৃণমূলের দলীয় পতাকা গুটিয়ে ফেলেন। বৈদ্যনাথবাবু পরে বলেন, “আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন নয় বলেই পতাকা খুলে নিয়েছিলাম।” আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো অবশ্য বলেছেন, “এই আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আন্দোলনকারীরা আমাদের কাছ থেকে কোনওরকম অনুমোদনও নেননি। আমরা কেন সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামব?”
পুরুলিয়ার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী সংস্থাকে নিরাপত্তার কাজ থেকে সরিয়ে জেলা সৈনিক বোর্ড থেকে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করতে হবে বলে সরকারি নির্দেশ এসেছে। যে সংস্থা এখানে কাজ করছিল, তাদের আগেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবু তাঁরা আজ আন্দোলনে বসেছেন।” তিনি জানান, আয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আসছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।.
জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ দিনের আন্দোলনে তৃণমূলের দলীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমাদের দলের কে ওই আন্দোলনে যুক্ত তা খোঁজ নেব। একই সঙ্গে কাজ হারানো ওই কর্মীদের পুনবার্সনের বিষয়টিও আমরা দেখছি।” তবে গোড়ায় আন্দোলন শুরু করা ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি রবীন মাহাতো বলেন, “আমরা কাজের দাবি আন্দোলন চালিয়ে যাব। তৃণমূল আমাদের সমর্থন করায় দাবি আরও জোরালো হল।” |