চত্বরে পাঠাগার করে নজির গড়ল শাহী মসজিদ কমিটি
সজিদ প্রাঙ্গণেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার তৈরি হল স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের জন্য। পাঠ্য বই, ধর্মগ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনী, শিশু-কিশোরদের জন্য বিজ্ঞান বই, সবই রয়েছে তাতে। থাকছে প্রতিলিপি করার সুবিধাও। পড়ুয়া ছাড়াও যে কেউ এসে বই পড়তে পারবেন ওই লাইব্রেরিতে। তবে মেয়েদের ঢোকার অনুমতি এখনও নেই। তবে তাঁদের অভিভাবকেরা কার্ড দিয়ে তাঁদের জন্য বই তুলতে পারবেন লাইব্রেরি থেকে। বসিরহাটের শাহী মসজিদ কমিটির উদ্যোগে সম্প্রতি তৈরি হল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই পাঠাগার।
ছবি: নির্মল বসু।
মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে লাইব্রেরি তৈরি করতে। দেড় হাজার বই সংবলিত ওই লাইব্রেরিটির উদ্বোধন করেন রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান শেখ নুরুল হক। ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ নুরুল ইসলাম, ফুরফুরাশরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডক্টর আনোয়ার হোসেন, মৌলানা শরফুল আমিন, সাহিত্যিক পরেশ ভট্টাচার্য, আব্দুর রউফ, শিক্ষাবিদ দেবীপ্রসাদ নন্দ প্রমুখ। কমিটির তত্ত্বাবধানে ও সাধারণ মানুষের দেওয়া অর্থে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বই রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে লাইব্রেরিতে। বিশিষ্টদের মতে, লাইব্রেরি তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল শাহী মসজিদ কমিটি।
বাংলার স্বাধীন সুলতান রুকুনুদ্দিন বারবাক শাহ্য়ের রাজত্বকালে তাঁরই পৃষ্ঠপোশকতায় ১৪৬৬ খ্রীষ্টাব্দে (হিজরি ৮৭১) তৈরি হয়েছিল ওই মসজিদ। সাড়ে পাঁচশো বছরের পুরনো ওই মসজিদে অনেক দিন ধরেই একটি পাঠাগার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছিল বলে জানান মসজিদ কমিটির সম্পাদক সর্দার সামসের আলি। তিনি বলেন, “২০০৮ সালে আরবে গিয়েছিলাম। সেখানে মসজিদের পাশে লাইব্রেরি দেখে অবাক হই। তখন বুঝি, জ্ঞানই আসলে মানুষকে ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সচেতন করে। তারপর থেকেই আমাদের মসজিদ চত্বরেও একটি লাইব্রেরি করার ইচ্ছা। কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুল রাসেদ বলেন, “অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে যখন সহমতের ভিত্তিতে পাঠাগার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন সমস্যা দেখা দেয় অর্থ সঙ্কুলান নিয়ে। কী ভাবে এত টাকা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমরা যখন চিন্তিত তখন এগিয়ে আসেন গফুর গাজি নামে এক ভ্যান রিকশা চালক। সারা দিনের রোজগারের ১০০ টাকা দিয়ে তিনি বলেন, পয়সার অভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারেনি। পাঠাগার তৈরির জন্য সামান্য এই টাকা দিলাম। দেখবেন, আপনাদের লাইব্রেরি হবেই।”
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর পর থেকে আর পিছনে তাকাননি তাঁরা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সকলের চেষ্টায় মসজিদের সামনে একটি দোতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। সেখানে রাখা হয়েছে, পাথর বসানো মেঝে। সুদৃশ্য আলমারিতে রাখা হয়েছে বই। পড়ুয়াদের সুবিধার জন্য রাখা হয়েছে বড় বড় রীডিং টেব্ল, রয়েছে পাখা আলোর ব্যবস্থা। অফিস-সহ পাঁচটি ঘরের ওই বাড়িতে আপাতত একটি ঘর নিয়ে হয়েছে ওই পাঠাগার।
কিন্তু মেয়েদের জন্য বই পড়ার ব্যবস্থা নেই কেন মসজিদে?
সর্দার সামসের আলি বলেন, “লাইব্রেরি তৈরি করতেই অনেক প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে মেয়েদের মসজিদ চত্বরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া সম্ভব না। তবে তাঁদের কথা মাথায় রেখে ঠিক করেছি, তাদের নামে অন্য কেউ বই তুলে দিলে তাঁরা তা বাড়িতে বসেই পড়তে পারবেন।”
মসজিদের ইমাম আশিকুল ইসলাম খান বলেন, “একটা ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরির স্বপ্ন দেখতাম। অনেক বহুমূল্য প্রয়োজনীয় বইয়ের নাগাল পাওয়া ভার। কিন্তু ডিজিটাল করলে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই পাওয়া সম্ভব। তাই দ্রুত এখানে কম্পিউটারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বই পড়া ও তার প্রতিলিপি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.

s