সজল ঘোষ হত্যা মামলায় দুই চিকিত্সকের সাক্ষ্যগ্রহণ হল বৃহস্পতিবার। নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে এ দিন প্রথম সাক্ষী ছিলেন ঘটনার রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সক পবিত্রকুমার করণ।
দুপুর দুটোয় রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে তাঁকে প্রথমে জেরা করেন নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌসুঁলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। ঘটনার রাতে সাক্ষী কোথায় ছিলেন জানতে চান তিনি। পবিত্রবাবু জানান, নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। তারপর একটি সিজার লিস্ট দেখিয়ে তিনি জানতে চাওয়া হয় স্বাক্ষরটি পবিত্রবাবুর কিনা। উত্তর আসে, হ্যাঁ। বিকাশবাবু জানতে চান পুলিশ সজল ঘোষের রক্তের নমুনা কিসে করে নিয়েছিল। সাক্ষী বলেন, তুলোয়। এরপর বিকাশবাবু একটি প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে রাখা তুলো দেখিয়ে জানতে চান, তিনি সেটি চিনতে পারছেন কিনা। সাক্ষী বলেন না।
এরপরে জেরা শুরু করেন মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ সাহার আইনজীবী প্রতীম সিংহ রায়। তিনি জানতে চান, সেই রাতে যখন রুগীকে পরীক্ষা করেছিলেন তখন ক্ষত থেকে রক্ত পড়ছিল কিনা। সাক্ষী বলেন মনে নেই। পরপর বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী ‘মনে নেই’ বা ‘মনে করতে পারছি না’ বলায় আইনজীবী মন্তব্য করেন সাক্ষী উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন। শেষে জানতে চান পুলিশ সজল ঘোষের রক্তের নমুনা কোথা থেকে নিয়েছিল। সাক্ষী বলেন, স্ট্রেচার থেকে। তারপরে জানতে চান ওই স্ট্রেচারই হাসপাতালের অন্য রুগীদের জন্যও ব্যবহার করা হয় কিনা। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। এরপরে সাক্ষীকে অল্প কিছু প্রশ্ন করেন সামসুল ইসলাম মোল্লা। পবিত্রবাবুকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন আইনজীবী বিষ্ণু শীল। বিষ্ণুবাবু খুঁটিয়ে সরকারি হাসপাতালে জখম রোগী ভর্তির পদ্ধতি জানতে চান। পরে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিকেলে ৪টে থেকে ৬টা এবং দুপুরে রোগীর খাবার দেওয়ার জন্য ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে দেখা করা যায়। সাক্ষী মেনে নেন। পরের প্রশ্ন ছিল এই সময়সীমার বাইরে কোনও বিশেষ কারণে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। পবিত্রবাবু বলেন এমন কোনও ‘হার্ড এন্ড ফাস্ট’ রুলের কথা তার জানা নেই। শেষে আইনজীবী জানতে চান, সেদিন রাতে জরুরি বিভাগে কাজ করার সময়ে বাইরে কোনও গোলমাল শুনেছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, তেমন কিছু শোনেননি।
দ্বিতীয় সাক্ষী হলেন যিনি সজল ঘোষের দেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন সেই চিকিত্সক অজিতকুমার বিশ্বাস। সাক্ষ্যের শুরুতে সরকারি কৌসুঁলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় সজল ঘোষের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে সাক্ষীর কাছে জানতে চান সেটি তার তৈরি করা এবং স্বাক্ষরিত কিনা। সাক্ষী বলেন হ্যাঁ। পরে আদালতে বিশদে পুরো রিপোর্টটি পড়ে শোনান তিনি। ময়নাতদন্তকারী হিসাবে মন্তব্য, আঘাত এবং রক্তপাতের কারণেই সজল যে ঘোষর মৃত্যু হয়েছিল সেটিও শোনান।
জেরা করতে গিয়ে প্রতীম সিংহ রায় জানতে চান সজল ঘোষের দেহের ময়নাতদন্ত কবে, কখন হয়েছিল। সাক্ষী বলেন, ১০ জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮টা২৫ নাগাদ। পরের প্রশ্ন, সাধারণত ময়নাতদন্ত হয় বেলা দশটা থেকে বিকেল চারটের মধ্যে, এ দিন তাহলে এত সকালে কেন? সাক্ষী জানান, তাঁকে নদিয়া জেলা হাসপাতালের সুপার ফোনে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অসময়ে ময়নাতদন্ত করতে তিনি কোনও আপত্তি করেছিলেন কি না জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন, উপরওয়ালাকে বলে লাভ হয়নি।
এরপরে আইনজীবী বিষ্ণু শীল সাক্ষীর ফরেন্সিক বিষয়ে কোন ডিগ্রি আছে কি না জানতে চান। সাক্ষী জানান, নেই। তিনি কোনও অত্যাধুনিক যন্ত্র না ল্যাবের সাহায্য নিয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী জানান, জেলা হাসপাতালে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। তাহলে কি ‘ক্লিনিক্যাল আই’ দিয়ে আই ময়নাতদন্তের মতামত দিয়েছেন? সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। এরপরে বিষ্ণুবাবু জানতে চান, যদি পিস্তল বা বন্দুক দিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে কাউকে গুলি করা হয় এবং বুলেট যদি শক্ত কোনও হাড়ে না ঠেকে তাহলে গুলি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যাবে কি না। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। হাড়ে ঠকলে হাড় ‘ড্যামেজ’ হবে? সাক্ষী জানান, এটা শরীরের গঠন অনুযায়ী হয়। পরের প্রশ্ন, সজল ঘোষের ময়নাতদন্তে কোনও হাড়ে আঘাতের কথা নেই। সাক্ষী বলেন, না। ময়নাতদন্তে সজল ঘোষের দেহের ভিতর থেকে বুলেট মিলেছিল কি না প্রশ্ন করা হলে উত্তর আসে হ্যাঁ। শেষে বিষ্ণুবাবু বলেন, সাক্ষী তার উপরওয়ালার কথা মতো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সাক্ষী বলেন, ঠিক নয়।
এরপরেই এ দিনের মতো শুনানি শেষ হয়। পরবর্তী শুনানি শনিবার। |