জুনে ইংল্যান্ড সফরের আগে বিদেশের মাটিতে এটাই ভারতের শেষ টেস্ট। জোর দিয়ে বলতে পারি, বিদেশ সফরে টানা হারার ধারাটা ওয়েলিংটনে বদলে ফেলার জন্য ধোনি আর ওর ছেলেরা মুখিয়ে আছে। বিশেষ করে ইডেন পার্কে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের বোলিং আর ব্যাটিং যে রকম হয়েছিল, তা থেকে ধোনির দলের মনোবল অনেকটাই বেড়েছে। আমার ধারণা, ওয়েলিংটনে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় টিমকে দেখব আমরা।
প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের পাল্টা আক্রমণটা দারুণ ছিল। প্রথম ইনিংসে পাঁচশো রান দেওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে সেই প্রতিপক্ষকেই ১০৫ রানে গুটিয়ে দেওয়া সহজ কাজ নয়। স্কোর কার্ড-ই বলে দিচ্ছে, দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেদের বোলিংয়ে ঠিক কতটা বিষাক্ত ছোবল আমদানি করতে পেরেছিল জাহির-শামি-ইশান্তরা। পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করে। যে টিম প্রথম ইনিংসে দু’শোয় দুমড়ে যাওয়ার পরেও দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় চারশোর কাছাকাছি রান তোলে, তাদের লড়ার আর ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে আশা করি নতুন করে বলতে লাগবে না। ভারতের এই তরুণ দলটা ক্রমশ উন্নতি করছে দেখে ভাল লাগছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও দেখেছিলাম, নিউজিল্যান্ডেও দেখছি, নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে এগোচ্ছে ওরা। এখন শুধু জেতার জায়গায় পৌঁছতে শিখতে হবে। তার জন্য টিমের প্রত্যেককে একই সঙ্গে নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোয় ভাল খেলতে হবে। বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে।
ওয়েলিংটনের উইকেট বেশ শক্ত। ভাল বাউন্স আছে। আর ওখানে সাধারণত সারা দিন একটা হাওয়া থাকে যেটা সিমারদের দারুণ সাহায্য করে। উইকেটে ঘাস রাখা নিয়ে অনেক কথা শুনছি। আমার মতে উইকেটে ঘাস থাকলে ভারতেরই লাভ। সিরিজে সমতা ফেরাতে হলে ধোনিদের এমন উইকেট দরকার যাতে হার-জিতের ফয়সালা হবে। নিউজিল্যান্ড যদি ঘাস রাখার ব্যাপারে অনড় থাকে, তা হলে কিন্তু ওদের এটাও মনে রাখা উচিত যে, ভারতীয় সিমাররা পরিস্থিতির ফায়দা তোলায় পিছিয়ে থাকবে না। বিশেষ করে ইডেন পার্কে দ্বিতীয় ইনিংসে ওই রকম দুরন্ত বোলিং করার পর জাহির অ্যান্ড কোম্পানি এখানেও ব্ল্যাক ক্যাপ-বাহিনীকে যত দ্রুত সম্ভব ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠানোর জন্য তৈরি হয়েই নামবে।
তবে ঘাস থাক বা না থাক টস কিন্তু অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। ওয়েলিংটনে গত ক’দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছিল। পিচে তাই আর্দ্রতা থাকতে বাধ্য। যে অধিনায়কই টস জিতুক, সে প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাট করতে পাঠাতে চাইবে। সাধারণত সেটাই নিয়ম। তবে এমনও হতে পারে, ধোনি সে রাস্তায় না হেঁটে আমাদের নতুন কোনও চমক দিল!
নিউজিল্যান্ড আবার রস টেলরকে পাচ্ছে না। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ও। টেলরের অনুপস্থিতি কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডারে বড় ধরনের ফাঁক তৈরি করবে। ভারতকে যার ফায়দা নিতেই হবে। কেন উইলিয়ামসন আর টেলর সেই এক দিনের সিরিজ থেকেই নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডারকে ধরে রেখেছিল। প্রথম টেস্টে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ভাল খেললেও, এই সিরিজে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের শিরদাঁড়া কিন্তু উইলিয়ামসন আর টেলর। ওয়েলিংটনে তাই ভারতীয় বোলাররা যদি নেহাত ঢিলে না দেয়, নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং পরীক্ষার মুখে পড়বেই।
আমার ধারণা টিম নিয়ে বড় কোনও পরীক্ষার রাস্তায় যাবে না ধোনি। ও সেই জাতের ক্যাপ্টেন যারা টিম নিয়ে খুব বেশি খুটখাট করা পছন্দ করে না। ভারতের প্রথম এগারো তাই মোটামুটি একই থাকা উচিত। |