ঊনত্রিশতম জন্মদিনের কেক কাটার আগেই কি সোমদেব দেববর্মন ‘বার্থ ডে গিফট্’ পেলেন বৃহস্পতিবার! নাকি ‘প্রেম দিবস’-এর এক দিন আগে সোমদেবের ‘ভ্যালেন্টাইন’ হয়ে উঠল স্বয়ং টেনিস!
না হলে, কলকাতা চ্যালেঞ্জারে সেমিফাইনাল ওঠার লড়াইয়ের মোক্ষম সময়ে যখন সোমদেবকে ম্যাচের গোড়ার দিকের মতোই ফের অগোছালো, নিজের শটের উপর নিয়ন্ত্রণহীন দেখাচ্ছিল। যখন নাদালের দেশের নাছোড় প্রতিদ্বন্দ্বী মেনেনদেজ প্রথম সেটের মতো গ্রাউন্ড স্ট্রোকে অনবদ্য হয়ে উঠছেন, সেই সময় ত্রিপুরার বাঙালি দু’-দুটো নেট-কর্ড পয়েন্ট জিতলেন কী ভাবে? যার একটা কি না ম্যাচ পয়েন্ট-ই! সোমদেবের ব্যাকহ্যান্ড রিটার্ন নেটে লেগেও উল্টো দিকের কোর্টে গড়িয়ে পড়ে তাঁকে দু’ঘণ্টা দু’মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি কোয়ার্টার ফাইনালে ৪-৬, ৬-১, ৬-৩ জয় দেওয়ায় হয়তো মানবিক কারণে সোমদেব কোর্টে সামান্যতম সেলিব্রেটও করলেন না। উল্টে বিজিতের পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় বিজয়ীর শরীরী ভাষাতেই লজ্জা-লজ্জা ভাব! |
হ্যাপি বার্থ ডে! সোমদেবকে কেক খাওয়াচ্ছেন বাংলার এক নম্বর
টেনিস-কন্যা শিবিকা বর্মন। দেখছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ছবি: উৎপল সরকার। |
শুক্রবার সেমিফাইনালে সোমদেবের তৃতীয় বাছাই রুশ প্রতিদ্বন্দ্বী ডনস্কয়ের বিরুদ্ধে তিনি অতীতে এক বার মুখোমুখি হয়ে জিতলেও এ দিন বললেন, “খুব কঠিন লড়াই হবে কিন্তু এখানে। গত বছর মায়ামিতে আমাদের ডগ ফাইট হয়েছিল।” অনেক দিন পর দেশে জন্মদিন পালন করতে পারছেন আর গড়িয়াহাট অঞ্চলে বাল্যকাল কাটানোর পর এই প্রথম কলকাতায় জন্মদিন কাটানোর সুযোগ ঘটায় দিদিকে শহরে উড়িয়ে এনেছেন সোমদেব। স্পেশ্যাল ডিনার দিয়েছিলেন সতীর্থ ডেভিসকাপার—সাকেত, বিষ্ণু, সনম, দ্বিবীজ শরণদের। তাতেও যেন চার সতীর্থের থেকে সোমদেব ‘বার্থ ডে গিফট’ পেলেন টেনিসের ভাষায়! এ দিনই যে এটিপি চ্যালেঞ্জার ট্যুরে পঞ্চাশ হাজার ডলার টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম বার ডাবলস ফাইনাল ‘অল ইন্ডিয়ান’ হওয়া চূড়ান্ত করলেন দ্বিবীজ-বিষ্ণু এবং সাকেত-সনম, দুই জুটি। বিদেশি জুড়ির বিরুদ্ধে নিজেদের সেমিফাইনাল জেতার সৌজন্যে।
কিন্তু সিঙ্গলস সেমিফাইনালে টিকে থাকা একমাত্র ভারতসন্তান কী করবেন? অন্য ম্যাচে মুখোমুখি শীর্ষ বাছাই নেদোভাইয়েসভ আর জকোভিচের দেশের ডেভিসকাপার বোজোলিয়াক। সোমদেব হয়তো সে জন্যই বলছিলেন, “চেন্নাই-কলকাতা, পরপর দু’টো চ্যালেঞ্জার সেমিফাইনাল ওঠাটা কিন্তু পেশাদার ট্যুরে যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্সই।” কিন্তু ২৯ বছরে এখানে পৌঁছলে গ্র্যান্ড স্ল্যামে আর কবে ছাপ রাখবেন? হাতে আর সময় কোথায়? “কে বলল ঊনত্রিশ? আমি তো একুশের পর জন্মদিন পালন করাই বন্ধ করে দিয়েছি!” |